নির্ভরশীলতাই কি সম্মতি প্রদান করে?
নারীদের, নবীন থেকে প্রবীণ হবার এই দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়, কখনো বা বাবার উপর নির্ভরশীল হয়ে, কখনো হয়তো ভাইয়ের উপর, তারপর স্বামী উপর এবং সর্বশেষ ছেলের উপর নির্ভরশীল হয়ে। সেই নির্ভরশীলতার জায়গা থেকে "সম্মতি" দেবার অনুমতি বা কতটুকু?
"নারীর নির্ভরশীলতা" সমাজ দ্বারা তৈরি একটি প্রথা, যার বাহক হিসেবে নারীরা বেশ ভালো ভূমিকা পালন করছে। নারীরা সবসময় কোন না কোন ভূমিকা পালন করতে থাকে, এই ভূমিকা পালনের সময় একজন নারীর নারী হয়ে উঠার সময় স্বল্প।
একজন নারী তার জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করে স্ত্রী হিসাবে, সেখানেও সমাজের প্রথার ধারক হিসাবে অধিকাংশ নারীরা তার স্বামীর উপর নির্ভরশীল। যেখানে নির্ভরশীলতার কথা আসে সেখানে স্বামী এবং স্ত্রী এর ঘনিষ্ঠ সময়ে স্ত্রীর সম্মতি বা অনুমতি চাইবার বিষয়টি হাস্যকর।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা এটা তাদের দায়িত্ব মনে করে। নারীরা এটাও মনে করে, স্বামী হিসাবে এটা তাদের অধিকার। এটিই বাস্তবতা, এর বাইরে আর কোন ইচ্ছা বা অনিচ্ছার প্রশ্নই আসে না।
স্নিগ্ধা পেশায় গৃহিনী, স্নাতকোত্তর শেষ করেছে, তার স্ত্রী হবার বয়স পাঁচ বছর। এই লকডাউনে তাকে বেশ কয়েকবার অনিচ্ছার সাথে মুখোমুখি হতে হয়েছে, তাতে অবশ্য লাভ তেমন হয়নি, সব অনিচ্ছা এড়িয়ে সে তার স্বামীর মুখোমুখি। স্নিগ্ধা বললেন, “সে আমার স্বামী আমি তার উপর নির্ভরশীল, আমার সম্মতি না থাকলেও সংসার বাঁচানোর জন্য তার ইচ্ছা পূরণ করা আমার দায়িত্ব এর মধ্যে পরে।”
চলতি মাসে বৈবাহিক ধর্ষণ দণ্ড বিধির “ ৩৭৫ ও ৩৭৬ ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ৯(১)” সংশোধনের জন্য কোর্টে আপিল করা হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই আপিল করেন।
কিন্তু আলোকপাতের বিষয় এই যে কয় জন নারী বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কে সচেতন। কয়জন নারী জানে তার সম্মতির বাইরে তার সাথে কোন ধরনের সম্বন্ধে জরানো যাবে না। যেকোন ধরনের সম্পর্কের জন্য তার সম্মতির চাইবার প্রয়োজন আছে, হোক না বা সে স্বামী।সমাজের আইন অনুশাসনের বাইরে যাদের জীবন, যাদের জীবনে বৈবাহিক ধর্ষণ একটা লজ্জাজনক শব্দ মাত্র, যারা শিক্ষিত কিন্তু মানসিক ভাবে ভীত। তাদের এই অন্ধকার কূপে আলোর উষ্ণতা আসবে কবে।
নারীরা খাতা কলমে কিছুটা মুক্তির স্বাদ পেলেও সে স্বাদ "দুধের স্বাদ ঘুলে মেটানোর মত", সে স্বাদ ক্ষণিকের। সে মুক্তির স্বাদ দীর্ঘস্থায়ী হবার জন্য প্রয়োজন সুস্থ মানসিক চিন্তার চর্চা।