Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুয়োতলার ভূত

কুয়োতলার সেই ভূতের কথা কমলপুরের সবাই জানে। শুনলে রূপকথার মতো শোনায়। ভূতটা নাকি ইয়া বড়। পুকুরপাড়ের অই তালগাছের মত লম্বা। আমগাছের মাথায় শিথান দিয়ে ভূতটা রাতে ঘুমায়। ভূতের পা দু’টো শিমুল গাছের ডালে দোল খায় তখন! অনেকটা মোঘল সম্রাটদের মতো। শাহেনশাহ টাইপ ভূত! অমাবস্যার কোনো এক রাতে আজম আলী মোল্লা দেখেছিল নাকি ভূতটাকে। তারপর আর কেউ দেখেছে বলে শোনা যায়নি। আজম আলী মোল্লা গত হয়েছেন বছর ছয়েক হবে। কিন্তু ভূতটা এখনো তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে কুয়োর জলে বাস করে। একদম কুয়োর তলায়। কুয়োর জল আগের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। ওপর থেকে ভেতরের দিকে তাকালে মনে হয়, কুয়োর জল আলকাতরার মতো কুচকুচে কালো। রাতে কুয়োর জলে জলকেলি করে ভূতের ছোটো ছোটো ছানারা। জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ গ্রামের চারদিক থেকে শোনা যায়। ভয়ংকর শব্দ। কমলপুরের আবালবৃদ্ধবনিতা, সবাই রাত হলেই সেই ভূতের ভয়ে কুঁকড়ে যায়!

রিতুল শহর থেকে দাদুর বাড়ি এসেছে গতকাল। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী হলেও সে খুব সাহসী। যুক্তিতে বুদ্ধিতে সে বেশ দক্ষ। বিজ্ঞানের ছোটোখাটো অনেক এক্সপেরিমেন্ট সে নিজে করতে পারে। দশ বছর পর এসেই সে দাদুর মুখ থেকে কুয়োতলার ভূতের কথা শুনেছে। গল্পটা শোনার পর তার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো। তাই সে চাচাতো ভাই রাকিবকে সঙ্গে করে কুয়োতলে গেলো। তাও আবার ভরদুপুরে! রাত ছাড়াও নাকি ভরদুপুরে ভূতের উৎপাত বাড়ে। নাহ, উল্লেখ করার মতো কোনো আলামত রিতুলের চোখে ধরা পড়েনি। তবে কয়েকটা গাছের ডাল ভাঙা। মাটিতে মাদুরের মতো বিছানো রয়েছে পাতা। কয়েকটা আধখাওয়া বিড়ির টুকরো এখানে সেখানে পড়ে আছে। রিতুল একটু ঝুঁকে কুয়োর ভেতরটা দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু কুয়োর মুখে মাকড়সার ঘন জাল। তবে কুয়োর গভীরতা বুঝা যাচ্ছে না। ফিরে আসার সময় কুয়োর ভেতর একটা শব্দ সে শুনতে পেলো। তবে দ্বিতীয়বার আর হয়নি। কিন্তু রিতুল সারারাত কুয়োর ভেতরের সেই অদ্ভুত শব্দটা নিয়ে গবেষণা করেছে। কুয়োর ভেতর কী থাকতে পারে? আসলেই কি ভূত আছে? অনেক প্রশ্নের কাটাকাটি খেলা শেষে রিতুল একটা সিদ্ধান্ত নেয়।

পরদিন সকালে রাকিবকে সঙ্গে নিয়ে কুয়োতলা গেলো। তার হাতে দাদুর বড়শির ছিপ। রিতুল টোপ তৈরি করে বড়শিটা কুয়োতে ফেলে অনেকক্ষণ ধরে বসে রইলো। হঠাৎ বড়শির সুতায় টান পড়লো। রিতুল ছিপটা একা ধরে রাখতে পারছে না। সঙ্গে রাকিব সর্বশক্তি দিয়ে ছিপ ধরে আছে। তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো। রিতুল ছাড়ার পাত্র না। সে শেষটা দেখেই ছাড়বে। রাকিব বলল, ‘আমি নিশ্চিত- এটা মেছো ভূত। রিতুল ভাইয়া, চলো বাড়ি ফিরে যাই।’ রিতুল রাকিবের কথায় কান দেয় না। রিতুলের মনে হচ্ছে ভয়ংকর কিছু বড়শিসহ তাদের টেনে নিচ্ছে কুয়োর ভেতর! শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে তারা ছিপটা ধরে আছে। হঠাৎ কুয়োর ভেতর থেকে গমগমে একটা আওয়াজ আসছে। শুনতে ভয়ংকর মনে হচ্ছে। কুয়োর জল থেকে আবার অদ্ভুত আওয়াজ আসছে। এখন ঘনঘন আওয়াজটা হচ্ছে। ভয়ে রাকিব ছিপ ছেড়ে কোনো রকম জানটা নিয়ে বাড়িতে চলে গেল। বাড়িতে গিয়ে সে সবাইকে ডেকে বললো, ‘কুয়োতলার সেই ভূতটা বেশ ধরেছে। ভয়ংকর একটা মেছো ভূতের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে। সঙ্গে বাড়ির সবাই ছুটে গেলো কুয়োতলা। কারো কারো হাতে দা ছেনি শাবল লাঠি। পুরো সৈয়দ বাড়ির সবাই হৈ হৈ করে ছুটে গেলো কুয়োতলা।

কুয়োতলায় গিয়ে তো সবার চক্ষু চড়কগাছ। রিতুল কুয়োর পাশে চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে। তার পাশে বড় একটা গজার মাছ। বেশ লাফাচ্ছে। রাকিব বললো, ‘দাদু, দেখো- মেছো ভূতটা এখন মাছের রূপ ধরেছে! কী ভয়ংকর ভূত রে বাবা! কত্তো চালাক! দেখতে কুচকুচে কালো। দাদু, ভূতটার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো- কেমন লাল টকটকে!’ লোকজনের ফিসফিসানি শুনে রিতুল ওঠে বসে। দাদুকে দেখে রিতুল বলে, দাদু, দেখো- তোমার ভূতটা ধরেছি। তবে ভূতটাকে কুয়ো থেকে তুলতে খুব কষ্ট হয়েছে। হা হা হা।’ রিতুল উচ্চস্বরে হাসছে। দাদুও হাসছে। দাদু রিতুলকে বললো, ‘দাদু, মনে হয় কুয়োর জলে আরো কিছু ভূত আছে। তাদের সাঙ্গপাঙ্গরাও আছে। চলো আমিও ভূত ধরবো।’ দাদুর মুখে এমন কথা শুনে উপস্থিত সবাই তুমুল হাসতে হাসতে বললো, ‘আমরাও কিছু ভূতটুত ধরতে চাই।’

অনন্যা/ জেএজে

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ