সবজি ইকুয়েলটু সুস্বাস্থ্য
কথায় আছে যে “গো গ্রিন টু গেট ফিট” এর অর্থ হচ্ছে যে সবুজের দিকে যদি হতে চাও ফিট। কথাটি একদম সত্যি। সবুজের দিকে যাওয়া বলতে বুঝায় যে শাক সবজি খাও বেশি বেশি, সবুজ ঘাসে দৌড়াও, সবুজের দিকে তাকাও ইত্যাদি। স্বাস্থ্যের ভালো চাইলে এই সবুজকেই বেছে নিতে হবে যার মধ্যে সবচেয়ে অপরিহার্য হচ্ছে সবজি গ্রহণ করা। খাদ্যে সবজি থাকলে আপনার স্বাস্থ্য খুবই ভালো ধাকবে। চোখ থেকে শুরু করে একদম শরীরের প্রতিটি অঙ্গের জন্য এই সবজি খুবই উপকারী। এক একটি সবজি আমাদের এক এক উপকারে আসে এবং কিছুতো একের অধিক উপকারী।
কোন সবজি কি কাজে উপকার করে এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য সবজি কেন এত জরুরী আসুন জেনে নি।

শসাঃ
প্রথমেই বলা যাক ছোট বড় সকলের পরিচিত ও প্রিয় সবজি শসা। শসা একটি পরিপাকে সহায়ক সবজি। কিডনি ও পাকস্থলী প্রদাহ নিরাময়ে এটি অপরিহার্য। শসায় ৮৩ শতাংশ কার্বন, ৬ শতাংশ ফ্যাট আর ১১ শতাংশ প্রোটিন থাকে এবং এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট আর কোলেস্টরলের পরিমাণ খুব কম থাকে বলে এটি প্রায় সব ধরনের মানুষের জন্যই দারুণ উপকারী। শসায় রয়েছে স্টেরল নামক একধরনের উপাদান, যা আপনার উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাছাড়া এরেপসিন নামক এনজাইম থাকায় হজমে বেশ সহয়তা করে শসা। শসার রস ডায়বেটিকদের জন্য বেশ উপকারী। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তাদের জন্য শসা যেন এক আশীর্বাদস্বরূপ। এটি ওজন কমাতে ব্যাপক সহায়তা করে।
টমেটোঃ
প্রবাদ আছে যে দৈনিক একটা টমেটো খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। টমেটো কাঁচা পাকা রান্না করে অথবা সালাদ হিসাবে খাওয়া হয়। ১০০ গ্রাম টমেটোতে থাকে – খাদ্যশক্তি ১৮ কিলোক্যালরি, আমিষ ০.৯ গ্রাম, শর্করা ৩.৯ গ্রাম, ফাইবার ১.২ গ্রাম চর্বি এবং ০.২ গ্রাম কোলেস্টেরল। এছাড়াও এতে প্রচুর ভিটামিন, লবন, অক্সালিক অ্যাসিড, পটাশ, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ বিদ্যমান। কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্যান্সার প্রতিরোধে টমেটো বেশ সাহায্য করে। প্রচুর খনিজ ও ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ এই টমেটো যা চোখের জন্য খুবই ভালো।
গাজরঃ
গাজর অত্যন্ত পুষ্টিমান সম্পন্ন ও সুস্বাদু একটি সবজি। কাঁচা এবং রান্না অথবা সালাদ হিসাবেও খাওয়া যায় এটি। ১০০ গ্রাম গাজরে থাকে ক্যারোটিন ১০,৫২০ মাইক্রো গ্রাম, শর্করা ১২.৭ গ্রাম, আমিষ ১.২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৮৫.০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭.০ মি.গ্রা., আয়রন ২.২ মি.গ্রা., চর্বি ০.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৫৭ ক্যালরি। এছাড়াও ভিটমিন এ, বি ও সি তে বিদ্যমান এই সবজিটি। গাজরে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। গাজরের সলিউবল ফাইবার উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ায় গাজর। এর জুস বানিয়ে খেতে পারলে খুবই ভালো। গাজরের জুসে অ্যান্টি কারসেনোজনিক উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়রয় গাজর।
বাঁধাকপিঃ
বাঁধাকপি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। এর উপকারিতাও রয়েছে অনেক । ১০০ গ্রাম খাবার বাঁধাকপিতে থাকে- প্রোটিন ১.৩ গ্রাম, শর্করা ৪.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩১ মিলিগ্রাম। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম যা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এছাড়াও বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ বা ফাইবার রয়েছে যা কোন ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে। যাঁরা ওজন কমাতে চান তাঁরা তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখুন, খুবই উপকার পাবেন।
ফুলকপিঃ
ফুলকপি একটি শীতের পছন্দনীয় সবজি। এর চাহিদা ব্যাপক থাকে মানুষের কাছে এ সময়। ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে থাকে ২৭ ক্যালরি ও ২ গ্রাম আঁশ, ১৪ শতাংশ প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ৭ শতাংশ পটাশিয়াম, ৯ শতাংশ ম্যাংগানিজ, ৪ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম ও ৪ শতাংশ ফসফরাস। ফুলকপিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এটি প্রদাহ কমানোসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য উপকারী। প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে বলে এটি হজমে সহায়তা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। হৃদ্রোগ, ক্যানসারসহ জটিল কিছু রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে এই ফুলকপি।
শিমঃ
এটিও একটি শীতকালিন সবজি। শিমের বীচিতে প্রচুর আমিষ আছে এবং শিমে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও আয়রন থাকে। ১০০ গ্রাম শিমে ৮৬.১ গ্রাম জলীয় অংশ আছে। এতে খনিজ উপাদান রয়েছে ০.৯ গ্রাম, আঁশ ১.৮ গ্রাম ও ক্যালোরি বা খাদ্যশক্তি রয়েছে ৪৮ কিলো ক্যালোরি। এছাড়াও শিমে ৩.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৭ গ্রাম শর্করা, ২১০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম ও ১.৭ মি.গ্রাম লৌহ পাওয়া যায়। খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ হওয়ায় শিম চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর অপুষ্টি দূর করতে শিম বেশ উপকারী। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এই শিম।
বেগুনঃ
নানাগূণে সম্পন্ন বেগূন। বেগুনে মুত্রকৃচ্ছতা ভালো হয়, লিভার ভাল রাখে, কিডনিতে পাথর হলে বেগুন খেলে তা প্রস্রাবের সাথে বের হযে যায়। অর্শ রোগে বেগুন বেশ উপকারী। বেগুন প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজে ভরপুর। ১০০ গ্রাম বেগুনে রয়েছে- খাদ্যশক্তি ৪২ কিলো ক্যালোরি, শর্করা – ২.২ গ্রাম, প্রটিন – ১.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম – ২৮ মিলি গ্রাম। এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় ও দাঁতের জন্য বেশ উপকারী। বেগুনে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’। আর এই ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্য খুবই উপকারী। বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘কে’ এবং ‘ই’। এটি শরীরের ভেতর রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দিয়ে থাকে। ফলে মানব দেহের রক্ত চলাচলের কার্যক্রমকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
করোলাঃ
করোলা স্বাদে তিক্ত হলেও অত্যন্ত উপকারী । তিক্ততাই এর গুন । করোলা বায়ু, পিত্ত ও কফ ত্রিদোষনাশক । ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা মহৌষধ। করোলা পেট পরিস্কার করে, রক্ত পরিস্কার করে, ক্ষিদে বাড়ায় এবং কৃমি নাশক হিসেবেও কাজ করে। ১০০ গ্রাম করলায় আছে ২৮ কিলোক্যালরি, ৯২ দশমিক ২ গ্রাম জলীয় অংশ, ৪ দশমিক ৩ গ্রাম শর্করা, ২ দশমিক ৫ গ্রাম আমিষ, ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম লোহা ও ৬৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এর ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুল ভালো রাখে।
বিশ্বে ১০৯৭ টি প্রজাতির সবজি রয়েছে। সবকটি নিয়ে তো বলে উঠা সম্ভব নয়। তবে আমাদের দেশে যেসব সবজি গুলো হাতের কাছে পাওয়া যায় সেগুলো নিয়েই বর্ণনা করলাম আজ। আরেকদিন হয়তোবা আরও অনেক সবজির উপকারিতা নিয়ে আসবো আবার।