এই শীতে সুন্দরবন ভ্রমণ করবেন যেভাবে
শীতকাল মানেই ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। শীতকালে মানুষ প্রকৃতির সাথে মিশে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে। বাংলাদেশের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য হলো সুন্দরবন। প্রকৃতির সাথে মিশে গাছপালা এবং সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করার জায়গা হল সুন্দরবন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। এটি শুধু বাংলাদেশের গর্বই নয়, এটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় প্রাণীকূল, এবং গভীর অরণ্যের রহস্যময় ভাব সুন্দরবন ভ্রমণকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে তোলে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই শীতে সুন্দরবন ভ্রমণের খুটিনাটি।
কেন শীতে সুন্দরবন ঘুরতে যাবেন?
সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস হলো সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময়ে আবহাওয়া থাকে মনোরম, মশার উপদ্রব কম থাকে এবং বনের সৌন্দর্য তার শিখরে থাকে। শীতকালে নদী ও সমুদ্রের শান্ত সৌন্দর্য যেমন আপনাকে মুগ্ধ করবে, তেমনি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, গাঙ্গেয় ডলফিনসহ নানা ধরনের বিরল প্রাণী ও পাখি দেখার সুযোগ পাবেন
সুন্দরবনের অবস্থান ও ভ্রমণপথ
সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে অবস্থিত। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনা জেলা দিয়ে এই বনে প্রবেশ করা যায়। তবে খুলনার মোংলা থেকে সুন্দরবন ঘুরতে যাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুবিধাজনক।
সুন্দরবনের বিশেষ আকর্ষণীয় স্থান
সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে রয়েছে অনেক মনোমুগ্ধকর স্থান, যা আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে অনন্য।
দুবলার চর
দুবলার চর একটি বিখ্যাত স্থান যেখানে শীতকালে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখতে পাবেন।
কটকা ও কচিখালি
বাঘ, হরিণ, কুমির ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর জন্য এই স্থান বিখ্যাত।
করমজল
সুন্দরবনের একটি প্রাথমিক প্রবেশপথ, যেখানে কুমির প্রজনন কেন্দ্র ও হরিণের অভয়ারণ্য রয়েছে।
হীরণ পয়েন্ট
হীরণ পয়েন্ট ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং বন্যপ্রাণী দেখতে আদর্শ স্থান।
জামতলা সৈকত
বনের ভেতর থেকে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এটি অন্যতম সেরা স্থান।
ভ্রমণের খরচ ও প্যাকেজ
সুন্দরবন ভ্রমণকে সহজ করতে বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর নির্ধারিত প্যাকেজ দিয়ে থাকে। এসব প্যাকেজে থাকা, খাওয়া, গাইড, নিরাপত্তা ও পরিবহন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সাধারণ প্যাকেজ
জনপ্রতি খরচ ৬,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা।
বিলাসবহুল ভ্রম
জনপ্রতি খরচ ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা।
ভ্রমণের অনুমতি
বনের নির্দিষ্ট এলাকায় প্রবেশের জন্য বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন। ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে গেলে আপনাকে আলাদা করে এই অনুমতির জন্য চিন্তা করতে হবে না।
সুন্দরবনে ভ্রমণের প্রস্তুতি
ভ্রমণে যাওয়ার আগে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি:
সুন্দরবনের পানি লবণাক্ত। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সঙ্গে রাখুন।সবসময় গাইডের নির্দেশনা মেনে চলুন এবং দলের সাথে থাকুন।শীতের উপযোগী পোশাক সঙ্গে নিন। বনের অনেক জায়গায় নেটওয়ার্ক কাজ করে না। তবে টেলিটকের নেটওয়ার্ক কিছু কিছু স্থানে পাওয়া যায়। পোকামাকড় থেকে বাঁচতে মশার স্প্রে এবং ব্যক্তিগত ঔষধ সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।
ভ্রমণ পরিকল্পনায় বিশেষ টিপস
সপ্তাহান্ত বা সরকারি ছুটির দিনে ভ্রমণের পরিকল্পনা না করলে খরচ কিছুটা কমে আসবে।দলবদ্ধভাবে ভ্রমণ করলে ব্যয় ভাগাভাগি হবে এবং ভ্রমণ আরও আনন্দদায়ক হবে। স্থানীয় খাবার চেখে দেখতে ভুলবেন না। সুন্দরবনের কাছাকাছি জায়গাগুলোতেও নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়।
সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য আর তার গভীর রহস্য শুধু ভ্রমণ নয়, প্রকৃতির সঙ্গে এক নিবিড় বন্ধন সৃষ্টি করে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, হরিণের পায়ের শব্দ, পাখির কাকলি আর নির্জন নদীর স্রোত ভ্রমণকারীদের মনকে প্রশান্ত করে তোলে। এই শীতে সুন্দরবনের বুকে একবার ঘুরে এলে সেই অভিজ্ঞতা সারাজীবন মনে থাকবে। সুন্দরবন ভ্রমণ করুন এবং প্রকৃতির এ অপার মহিমা উপভোগ করুন।