Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বদলেছে অসুর, বদলেছে অস্ত্র

সময় এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে, বদলেছে পরিস্থিতি, বদলেছে মানুষ, বদলেছে মানুষের মানসিকতা, বদলেছে মানুষের আচার-আচরণ, অন্যাযয়ের ধরন-ধারনও এখন বদলেছে সাথে বদলেছে নারীদের অস্ত্রও। 

দেবীদুর্গার অসুর বধের কাহিনীটি অনেক বাস্তবতা সম্পন্ন। কথিত আছে যে, দীর্ঘ আরাধনার পর মহিষাসুর ( রম্ভাসুর-এর পুত্র) নামে এক অসুর, শিবের আনুকূল্য অর্জ্জনে সমর্থ হয়। শিব তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে অমরত্মের বর দেন। অর্থাৎ কোনো মানুষ বা দেবতা মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবেনা। বরপ্রাপ্ত হয়ে মহিষাসুর ধরাকে সরাজ্ঞান করতে শুরু করে। তার অত্যাচার ও নির্য্যাতনে স্বর্গ থেকে দেব-দেবীরাও বিতাড়িত হন। এইরকম অবস্থায় দেবতারা পরিত্রাণের জন্য শিবের দ্বারস্থ হন। শিব এসব ঘটনা শুনে ক্রোধে ফেটে পড়েন এবং তখন শিবের তৃতীয় নেত্র থেকে এক অলৌকিক শক্তির তেজদ্বারা নারীর অবয়ব তৈরী হয়। সেই সময় অন্যান্য উপস্থিত দেবতারাও তাঁদের নিজস্ব শক্তির কিছু অংশ সেই নারীকে দান করেন। এইভাবে চিরন্তন মা দেবী দুর্গার জন্ম হয়। দুর্গাদেবীর বাহন হয় সিংহ । দশহাতে অস্ত্রধারণ করে সিংহের পিঠে চড়ে তিনি মহিষাযুরকে আক্রমণ করেন এবং বধ করেন। (সংরক্ষিত)

দেবী দুর্গাকে কখনো দেখি ভীষণ রাগী, কখনো দেখি করুণাময়ী জননী রূপে। সকলকে তিনি রক্ষা করেন। কখনো শাষণের সুরে, আবার কখনো বা স্নেহমাখা মমতায়।

দেবী দুর্গা জীবন দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে এই পৃথিবীকে রক্ষা করেছে ওষুধ দেখে বধ করেছে এই দশ হাতের ১০ অস্ত্রের রয়েছে দশটি আলাদা আলাদা অর্থ। সেই অর্থ কি আমরা সকলে জানি, জেনে রাখা ভালো দুর্গা দেবীর দশ হাতের দশটি অস্ত্রের মধ্যে ত্রিশূল—তিনটি ফলায় আছে তমঃ রজঃ ও সত্য; গদা—আনুগত্য, ভালবাসা ও ভক্তি; বজ্রাস্ত্র—দৃঢ়তা ও সংহতি; সাপ—বিশুদ্ধ চেতনা; অগ্নি—জ্ঞান ও বিদ্যা, শঙ্খ—জীবজগতে প্রাণের সৃষ্টি; চক্র—সৃষ্টি ও জগতের কেন্দ্রে অধিষ্ঠান, তির-ধনুক—ইতিবাচক শক্তি; পদ্ম—অন্ধকারেও আলোর আবির্ভাব; তলোয়ার—বুদ্ধি যা বৈষম্য ও অন্ধকার দূর করে। (সংরক্ষিত)

তবে এখনকার চিত্রটা নারীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন। এখনকার অসুরের উৎপাত বেড়েছে, অসুরের সংখ্যাও বেড়েছে, বেড়েছে তাদের অন্যায় করার ধরন, বদলে গিয়েছে তাদের ধ্বংস করার ধরন-ধারণা। 

এখনকার নারীরা চাইলেও পারবেনা চক্র, গদা, ত্রিশূল নিয়ে কোন অসুরকে বধ করতে পারবে না। তবে এর মানে এই নয় যে নারীরা তাদেরকে কোন শাস্তি দিতে পারবে না। নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য নারীরা চাইলে সবই করতে পারে। 

বর্তমান সময়ে অসুর গুলো আমাদের আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনো বা রাস্তাঘাটে, কখনো বা বাসে, কখনো বা বাড়ির গলিতে, কখনো বা হাজারো ভিড়ের মাঝে।  স্পর্শ করতে চাচ্ছে নারীদের শরীর। খারাপ ভাবে কখনো বা নারীদের হেনস্তা করে নানা রকম জিনিস ছিনিয়ে নিচ্ছে। কখনোবা প্রেমের প্রস্তাব দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। তবে এসব দেখে কি নারী থেমে থাকবে? কখনই না। নিজেদের আত্নরক্ষার জন্য নারীর অস্ত্র এখন সফেটিপিন, ব্লেইট, আলপিন, ছুরি প্রভৃতি। এইসব অস্ত্র কাউকে খুন করার জন্য নয় নয় কাউকে আঘাত করার জন্য এইসব অস্ত্র রাখা শুধুমাত্র নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য। 
একজন নারী যেমন সাহসী, তেমনি মমতাময়ী। যতটা রাগী ঠিক ততটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ তার মন। যতটা কঠোর, ঠিক ততটাই স্নেহে পরিপূর্ণ তার মন। নারী প্রয়োজনে রাগ করতে জানে,  নারী প্রয়োজনে ভালোবাসতে জানে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ