Skip to content

৯ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা : ঝুঁকিমুক্ত হোক কন্যারা

কালের খেয়ার পালে হাওয়া লাগাতে সবসময় সাহায্য করে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, সর্বোপরি যুব সমাজ। আর এই শ্রেণির উন্নয়নকল্পে যখন নেওয়া হয় সুপরিকল্পিত কিছু পদক্ষেপ, তখন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ভালোর পথের পথিক হয়ে কিশোরীদের জীবনকে খানিকটা ঝুঁকিমুক্ত করতে চাঁদপুর সদর উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদ্রাসায় গৃহীত হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা। এর নেপথ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজেদা বেগম। তিনি ২০১৯ সালে এ কার্যক্রম শুরু করেন। যা চাঁদপুর বাগাদী গণি উচ্চবিদ্যালয় থেকে শুরু করা হয়।

বর্তমানে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৫টি স্কুল-মাদ্রাসা ও ৪৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে এই কার্যক্রম চলছে। কিশোরী বয়সে নানা ধরনের শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সন্তানের দিন পার করতে হয়। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিশোরী বয়সের এসব পরিবর্তন সম্পর্কে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার কেউই থাকে না।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ বাবা-মা এখনো সন্তানের সঙ্গে ওতপ্রোতোভাবে সম্পৃক্ত নন। সন্তানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগও করে তোলেন না, বা হয়ে ওঠে না। কিন্তু কিশোর বয়সের কন্যা সন্তানের জীবনে নানা ধরনের শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। অতি ধর্মীয় আবরণ থাকায় বাবা-মায়েরা তাই সন্তানকে সঠিক শিক্ষাটাও দেন না। তাদের জীবনের পথে বয়ঃসন্ধিজনিত পরিবর্তন, শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার অভাবে এ সময় কিশোরীরা অনেকটা হতাশা,বিষণ্নতা, একাকিত্বে ভোগে। কেউ কেউ জ্ঞানের অভাবে নিজেকে অসুস্থও ভাবতে থাকে। এ পর্যায়ে চাঁদপুর উপজেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজেদা বেগম ‘ডাক্তার আপা’র ভূমিকা সত্যি প্রশংসনীয়।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের জন্য প্রতিটি স্কুলেই এমন উদ্যোগ নিতে হবে। যেন ভবিষ্যতের কর্ণধারেরা জীবন সম্পর্কে হতাশ না হয়ে পড়ে। সঠিক জ্ঞান লাভের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ জয় করার ক্ষমতা তাদের গড়ে ওঠে।

ছাত্রীদের বয়ঃসন্ধিকালের বিভিন্ন বিষয়ে স্বাস্থ্যশিক্ষা, কিশোরীদের মাসিক বিষয়ে শিক্ষা , মাসিক পরবর্তী সমস্যা, হরমোনজনিত সমস্যা, চোখের সমস্যার মতো বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে দেশে বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। সপ্তাহে একদিন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা বিদ্যালয়টিতে যান। কিশোরীদের স্বাস্থ্যগত খোঁজখবর নেন। তাদের স্বাস্থ্যবিষয়ক শিক্ষা দেন। ওজন মাপা থেকে শুরু নানা জটিলতার সমাধান করার চেষ্টা করেন।

করোনাকালীন সময়ে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উদ্যোগে অনলাইনেও এ কর্মসূচি চালু ছিল। ফলে ওই অঞ্চলের কিশোরীরা এখন স্কুলের খুব সুন্দর সুস্থ একটি পরিবেশ পেয়েছে। যা তাদের সুস্থভাবে গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

তাদের উদ্যোগে ১৪টি স্কুলে হেলথ ক্লাব গঠন করা হয়েছে। এই ক্লাবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুটি স্কুলে মাসিকের স্বাস্থ্যবিধি কর্নারও করা হয়েছে। এই কর্নার কার্যক্রমে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি এনজিও সহযোগিতা করেছে। এর মাধ্যমে চাঁদপুরের কিশোরীদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। এখন তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি স্কুলমুখী। স্কুলের মাটিতে তাদের জন্য বোনা হয়েছে আগামীদিনের সুস্থ জাতি গড়ে তোলার বীজভূমি।

কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং তাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্যও সাজেদা বেগমের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তার এই উদ্যোগের ফলে কিশোরীরা অনেক জ্ঞান লাভ করতে পারবে৷ যা তাদের দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন গড়তে সাহায্য করবে। পড়াশোনায় আরও মনোযোগী করে তুলবে।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের জন্য প্রতিটি স্কুলেই এমন উদ্যোগ নিতে হবে। যেন ভবিষ্যতের কর্ণধারেরা জীবন সম্পর্কে হতাশ না হয়ে পড়ে। সঠিক জ্ঞান লাভের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ জয় করার ক্ষমতা তাদের গড়ে ওঠে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ