Skip to content

শাড়িতে সেজে উঠুক ঈদের ফ্যাশন

দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার পরে আসে ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর মানেই নতুন পোশাক, সাজগোজ আর আনন্দের ছোঁয়া। আর নারীদের ঈদ ফ্যাশনের কথা বললে প্রথমেই উঠে আসে শাড়ির নাম। শাড়ি শুধু একটি পোশাক নয়, এটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের সঙ্গে বদলেছে ফ্যাশনের ধারা। কিন্তু শাড়ির আবেদন আজও অমলিন। এবারের ঈদেও শাড়ির বাজারে এসেছে নতুন নতুন ট্রেন্ড, রঙের বৈচিত্র্য ও নকশার নতুনত্ব।

একসময় ঈদের দিন সকালে নতুন শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়ানো মানেই ছিল নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা। নানি-দাদিদের আলমারিতে তুলে রাখা মসলিন, কাতান কিংবা বেনারসি শাড়ির গল্প এখনো আমাদের মনে দোলা দেয়। তবে বর্তমানের ঈদ ফ্যাশনে এসেছে নতুন কিছু সংযোজন। ঐতিহ্য ধরে রেখেও শাড়িতে যোগ হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাতান ও বেনারসির পরিবর্তে মসলিন, সুতি ও সিল্কের নরম ছোঁয়া বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে হাতে তৈরি নকশা করা শাড়ি বা ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট ও হ্যান্ড পেইন্ট করা শাড়িগুলো ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে।

ঈদের দিনে শাড়ির রঙের ব্যাপারেও দেখা যাচ্ছে নান্দনিক পরিবর্তন।
সকালের সাজে – হালকা প্যাস্টেল শেড যেমন ল্যাভেন্ডার, মিন্ট গ্রিন, পিচ বা সূর্যাস্তের কমলা রঙের শাড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সন্ধ্যার আয়োজনে – গাঢ় ও মেটালিক রঙের শাড়ি বেশি চলছে যেমন মেহেদির সবুজ, বার্গান্ডি, নেভি ব্লু কিংবা গভীর লাল।

রঙের এই বৈচিত্র্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভিন্ন ধরনের মোটিফের ব্যবহার। মোঘল আর্ট, ট্র্যাডিশনাল জামদানি নকশা, কাঁথা স্টিচ, ফ্লোরাল ডিজাইন, জিওমেট্রিক প্যাটার্ন  সব মিলিয়ে শাড়ির ডিজাইনে আসছে নতুন মাত্রা।

ফ্যাশন ডিজাইনারদের মতে, শাড়ি শুধুমাত্র একটি পোশাক নয়, এটি এক অনবদ্য শিল্প। এই শিল্পকে আরও আকর্ষণীয় করতে বর্তমানে ড্রেপিং ও ব্লাউজের ডিজাইনে নতুনত্ব এসেছে। অনেকে কোমরে বেল্ট জড়িয়ে শাড়িতে আনছেন আধুনিকতার ছোঁয়া। কেউ লম্বা জ্যাকেট বা ফতুয়ার সঙ্গে শাড়ি পরছেন যা এক নতুন ফিউশন লুক তৈরি করেছে। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও এসেছে ব্যতিক্রমী নকশা অফ-শোল্ডার, ব্যাকলেস, বাটারফ্লাই স্লিভ, মখমলের জমিনে সূচিকর্ম কিংবা ক্রপ টপের সঙ্গে শাড়ি পরার ট্রেন্ড ব্যাপক জনপ্রিয়।

এবারের ঈদ গরমের মধ্যে হওয়ায় আরামের কথা মাথায় রেখে বেশি চলছে সুতি, লিনেন, ধুপিয়ান সিল্ক ও তসর সিল্কের শাড়ি। বিশেষ করে তাঁতের শাড়ির চাহিদা বেড়েছে।
শাড়ির ডিজাইনে এবার স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট, কারচুপি, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি ও নকশিকাঁথার কাজের জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে।

ঈদের শাড়ি কেনার জন্য যেতে পারেন মিরপুর বেনারসিপল্লি, ধানমন্ডি হকার্স, আজিজ সুপারমার্কেট, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন শপিং সেন্টারে। বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বড় শপিং মলেও পাওয়া যাচ্ছে নানা ডিজাইনের শাড়ি।

এছাড়া অনলাইন শপগুলোর মধ্যেও রয়েছে শাড়ির বিশাল সমাহার। জনপ্রিয় অনলাইন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে পটের বিবি, খাঁচা, খুঁত, ভার্সাটাইল লেডিস, শিথিলতা, একতাল, হরীতকী, স্বচ্ছক্রয়, কইন্যা ইত্যাদি। দেশীয় ফ্যাশন হাউসের মধ্যে রয়েছে আড়ং, কিউরিয়াস, অঞ্জন’স, দেশাল, বিবিয়ানা, দেশীদশ, মনেরেখ শাড়িজ, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির।

শাড়ির দামের ব্যাপারে ডিজাইনাররা বলছেন, এবার ঈদের বাজারে বাজেট অনুযায়ী শাড়ির দাম রাখা হয়েছে।
সাধারণ তাঁতের শাড়ি – ১,০০০ থেকে ৩,৫০০ টাকা
ব্লক প্রিন্ট ও হ্যান্ড এমব্রয়ডারি শাড়ি – ২,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা
এক্সক্লুসিভ মসলিন ও সিল্ক শাড়ি – ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা
অনলাইন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যেও তুলনামূলকভাবে কম বাজেটে স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে।  অনলাইনে পাওয়া যাওয়া শাড়িগুলোর দাম ৬০০ থেকে ২,৫০০ টাকা এর মধ্যে।

বর্তমানে অনেকেই সাধারণ ডিজাইনের বাইরে গিয়ে চাইছেন কাস্টম ডিজাইনের শাড়ি। যেমন আঁচলে হাতে লেখা প্রিয় কবিতার লাইন, মেঘ-বৃষ্টির জলছবি আঁকা ডিজাইন, নকশিকাঁথার শৈল্পিক ছোঁয়া এই ধরনের কাস্টম ডিজাইন করা শাড়িগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে।

ঈদের আনন্দকে আরও রঙিন ও আকর্ষণীয় করতে শাড়ি সবসময়ই প্রথম পছন্দ থাকে। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন আসলেও শাড়ির প্রতি ভালোবাসা কমেনি বরং এতে যুক্ত হয়েছে নতুনত্ব ও আধুনিকতার ছোঁয়া।
ঈদ হোক ঐতিহ্য আর স্টাইলের সুন্দর মেলবন্ধনে, শাড়ির সৌন্দর্যে জড়িয়ে থাকুক প্রতিটি মুহূর্তের আনন্দ।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ