সমাজে নারী কি শুধু নির্যাতিত হবে?
পুরুষশাসিত এ সমাজে সবসময়ই আলোচনায় আসে নারী নির্যাতনের খবর। তবে জগৎ সংসারে কি শুধুই নারী তাদের স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন? পুরুষ কি নারীর দ্বারা নির্যাতিত হন না? বিভিন্ন মামলার পর্যালোচনা আর বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে, সমাজের অনেক পুরুষ তার নিজ ঘরে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছেন।
চক্ষুলজ্জা আর পরিবারের কথা চিন্তা করে দিনের পর দিন বউয়ের এসব নির্যাতন-নিপীড়ন আর হুমকি-ধমকি নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। পুরুষ অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন বলছে, সমাজে অনেক পুরুষই স্ত্রীর যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে চোখ মোছেন; কিন্তু দেখার কেউ নেই। বলারও উপায় নেই। বিভিন্নমহল থেকে পুরুষ নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নেরও জোর দাবি জানানো হচ্ছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধীদলীয় নেত্রী একজন নারী। দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান একজন নারী। অর্থাৎ নারীরা পিছিয়ে আছে বা তারা অনগ্রসর একথা আর সেভাবে বলা যায় না। বরং নারী সমাজ পরাধীনতার খোলস ভেঙে, নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ। এটা আমাদের গৌরব ও অহংকার। তারপরও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়িতে নিগৃহীত হচ্ছেন। এছাড়াও ধর্ষণ, অত্যাচার, যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে অহরহ।
স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না পুরুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের ভবিষ্যৎ, সামাজিক মর্যাদা, চক্ষুলজ্জা, জেল-পুলিশ আর উল্টো মামলার ভয়ে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর নির্যাতন নীরবে সহ্য করে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। পুরুষ চাইলেও নির্যাতনের কথা বলতে পারছে না। অন্যদিকে একজন নারী আইনের অপব্যবহার করে ইচ্ছে করলেই ঘটনা সাজিয়ে পুরুষের বিরুদ্ধে থানা বা আদালতে সহজেই নারী নির্যাতনের মামলা বা যৌতুক মামলা দিতে পারছেন।
নারী উন্নয়ন ছাড়া একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। তাইতো পৃথিবীর অনেক দেশ নারী উন্নয়নের প্রসার ঘটিয়ে উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে। আমাদের দেশও নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অতীতের অনেক সময় থেকে বর্তমানে আমাদের দেশের নারী সর্বক্ষেত্রে পুরুষদেরও ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদে নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নারীর সুরক্ষার জন্য দেশে একাধিক আইন রয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০, এসিড নিরোধ আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা ও দমন আইন-২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য নারীর সুরক্ষার জন্য আইনগুলো তৈরি হলেও বর্তমানে এ আইনগুলোকে কিছু নারী পুরুষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সামান্য কিছুতেই স্বার্থান্বেষী নারী স্বামীদের নাজেহাল করতে এসব আইনের অপপ্রয়োগ করছেন। অন্যদিকে দেশে ‘পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ’ আইন এখনও সৃষ্টি হয়নি। নেই পুরুষ নির্যাতন-বিরোধী ট্রাইব্যুনালও। এসব কারণে আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভুক্তভোগী পুরুষ।