‘টিপ পরছস ক্যান?’
নারীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার জন্য সমাজের একদল লোক সব সময় মুখিয়ে থাকে। নারীকে দমিয়ে রাখার জন্য সমাজের কিছু তথাকথিত প্রশ্ন রয়েছে। যেমন- মাথায় কাপড় নেই কেন? সন্ধ্যার পরে বাইরে কী? মেয়েদের এত পড়াশোনার কী দরকার? এমন বহু প্রশ্ন দিয়ে নারীদের স্বাধীনতার পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়। এ-বার সে ডিকশনারিতে যুক্ত হলো নতুন একটি প্রশ্ন, 'টিপ পরছস ক্যান?'
নারীর পোশাক নিয়ে তর্ক-বিতর্ক বছর জুড়ে চলতেই থাকে। আধুনিক সমাজেও নারীকে ঘরে বাইরে সমানতালে কথা শুনতে হয় তার চলাফেরা ও পোশাকের কারণে। আজকাল আবার এক শ্রেণির মানুষের গায়ে জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছে নারীর কপালের টিপ নিয়ে।
রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। শনিবার সকালে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় ফার্মগেট সেজান পয়েন্টের সামনে টিপপরা নিয়ে হয়রানির শিকার হন এই নারী। আর সব চেয়ে আলোচিত বিষয় হলো, তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন একজন পুলিশ সদস্যের থেকে।
শনিবার সকালে হেঁটে কলেজের দিকে যাওয়ার সময় হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন 'টিপ পরছস ক্যান?' বলেই অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকেন। তাঁর গায়ে ছিল পুলিশের পোশাক। একটি মোটরবাইকের ওপর বসে ছিলেন তিনি । লতা সমাদ্দার ওই ব্যক্তির মোটরবাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও গালি দিতে থাকেন ওই পুলিশ সদস্য। এমনকি একসময় তাঁর পায়ের পাতার ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান।
এ-সব ঘটনা উল্লেখ করে শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন লতা সমাদ্দার। এ ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই দেশ জুড়ে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। একদল লোক ধর্ম ও কুসংস্কারের দোহাই দিয়ে শুরু করেন ভিক্টিম ব্লেমিং। তবে আরেকদল লোক ওই নারীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন।
ফেসবুকে নারীরা টিপপরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেক নারী। নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। শুধু ফেসবুক নয়, নারী অধিকার নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিবৃতি এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেও প্রতিবাদ করছেন। বাঙালি সংস্কৃতির অংশ শাড়ি, টিপ। তবে ধর্মের দোহাই দিয়ে একটি মহল টিপ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে।
মানুষের পোশাক ও সাজসজ্জা নির্ভর করে একান্তই তাঁর রুচি বোধের ওপর। কেউ শাড়ি পরে, কেউ থ্রি পিস, কেউ বোরখা, হিজাব। একজন নারী কিংবা পুরুষ যেই হোক না কেন তিনি কী পরবেন, সেটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। আমাদের দেশের সংবিধান নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে বাক-স্বাধীনতা ও চলাফেরার স্বাধীনতা দিয়েছে। সেখানে আমরা ধর্ম, কুসংস্কারের দোহাই দিয়ে সমাজকে কয়েক গজ পেছনে টেনে দিচ্ছি।
আমরা আধুনিক সমাজে বসবাস করলেও আমাদের মানসিকতা দিন দিন ঘুণে ধরে যাচ্ছে। আমরা মুখে নারীর সমান অধিকার নিয়ে চিৎকার করলেও নারী-স্বাধীনতা দিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনও নারাজ। নারীদের স্বাধীনতার লাগাম টেনে ধরতে বরাবরই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় তাদের পোশাক ও সাজসজ্জাকে। যেভাবে ওই পুলিশ সদস্য লতা সমাদ্দারের দিকে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, 'টিপ পরছস ক্যান?'