অজ্ঞাত লাশ
বিকেল থেকে আকাশটা মেঘলা দেখাচ্ছে। আজ আর বাহিরে যাবো না। মনের মাঝে এত ছটফট করছে কেন ? বুঝতে পারছি না। যা হবার হবে। বসে বসে টিভি দেখি। বিভিন্ন চ্যানেল দেখতে দেখতে রাত তখন দেড়টা বা পৌনে দুইটা বাজবে। হঠাৎ মনে হল। বারান্দায় গিয়ে দাড়াই। চোখেতে ঘুম আসছেনা। বাহিরের বাতাস গায়ে লাগলে হয়তো ঘুম আসবে। মনে-মনে এই কথা ভাবতে-ভাবতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। উপর থেকে নিচে তাকিয়ে দেখি রাস্তায় তিন জন লোক দাড়িয়ে আছে। মনে-মনে ভাবতে লাগলাম, এরা এত রাত করে এখানে দাড়িয়ে কি করছে? তার কিছুক্ষণ পর এ্যাম্বুলেন্স আসলো। কিন্তু এ্যাম্বুলেন্স এর কোন সতর্ক বাঁশি বাজছে না। সেই এম্বুলেন্স এর ভেতর থেকে একটি বস্তা রাস্তায় ফেলে ঐ তিন ব্যক্তিসহ এম্বুলেন্সে করে চলে গেল। আমিতো মনে করেছিলাম কোন রুগী নিয়ে এসেছে।
বস্তা দেখে আমার সন্দেহ হলো। তৎক্ষণাৎ আমি সেই গাড়ির নাম্বারটা মনে রেখে সাথে সাথে কাগজে লিখে ফেললাম। আমি তখন মনে-মনে চিন্তা করছি। বাসা থেকে নীচে নেমে দেখে আসি। আসলে ঐ বস্তাটির ভেতর কি আছে? আমার মনের মাঝে ভয়ও কাজ করছে! যদি কোন ভাবে ফেঁসে যাই। এই ভাবে চিন্তা করতে-করতে সারাটা রাত কেটে গেল। কানের মাঝে ভেসে আসলো আযানের ধ্বনি।
আমি নিচে নামবো এই চিন্তা করে ঘরের ভিতর গিয়ে সোফায় বসলাম। তখন আমার চোখ লেগে গেল। তার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ জেগে দেখি। সকাল পৌনে আটটা। তারপর রাতের কথা মনে করে দৌড়ে বারান্দায় যাই। নিচে তাকিয়ে দেখি সেই রাস্তা পুরু ফাঁকা। এটা দেখে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম আর ভাবছি , আমি রাতে স্বপ্নে দেখেছিনা বাস্তবে কিছু দেখেছি। কিছুইতো বুঝতে পারছিনা। আর বাস্তবে যদি দেখে থাকি তাহলে রাস্তায় ফেলে যাওয়া সেই বস্তাটি কোথায়? আমি যে গাড়ির নাম্বার কাগজে লিখেছি। সেই কাগজটা কোথায়? তখন আমি ঘরের মাঝে কাগজটি খুঁজতে থাকি। হঠাৎ দেখি সোফার নীচে একটি কাগজ দেখা যাচ্ছে।
নীচ থেকে কাগজটি তুলে দেখি। আমার হাতে লেখা সেই গাড়ির নাম্বারটি তারপর আমি ভাবতে লাগলাম! তাহলে রাস্তায় ফেলে যাওয়া সেই বস্তাটি কোথায়? কিছুই বুঝতে পারছিনা। দ্যাত আমি এসব কি বাজে চিন্তা করছি। আর খারাপ কিছু হলেতো এতক্ষণে এলাকায় অনেক কিছু হয়ে যেতো। যেহেতু কোন কিছু শুনা যাচ্ছে না তাহলে মনে হয় রাতে আমি যা দেখেছি সেটা ভুল। যা হয় হোক, নাস্তা করে নীচে যাই। তারপর দেখা যাক, রাতে আসলে কি হয়েছে?
আধা ঘণ্টা পর বাসা থেকে নিচে নামলাম। তারপর চায়ের দোকানে বসে চুন্নুকে বললাম এক কাপ চা ও একটা সিগারেট দে। হাতের মধ্যে সিগারেট ধরিয়ে চা পান করছি। এর মধ্যে আমার পাশে বসে থাকা কয়েকজন লোক বলা-বলি করছে। কি যে হচ্ছে? বর্তমান সমাজে, কিছু বুঝতে পারছিনা। বিয়ের উপযুক্ত মেয়ের লাশ বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে গেল। কোন নরপশুর দল। তখন আমি বুঝতে পারলাম। আমি গত কাল রাতে যা দেখেছি। তা সত্যি দেখেছি। কোন স্বপ্ন দেখিনি। যা দেখেছি তা বাস্তব।
কিছুক্ষণ নীরবে চিন্তা করছি, আসলে আমি এ ব্যাপারে কার সাহায্য নিতে পারি। অনেকক্ষণ চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ চায়ের দোকানদার চুন্নু বলে উঠল। কি ব্যাপার অমিত'দা আপনিতো কখনও এত সময় আমার দোকানে বসে থাকেন না। আজতো অনেক সময় ধরে বসে আছেন। নারে ভাই এমনিতেই বসে আছি। চুন্নু বলল, কিছুতো একটা হয়েছে আপনার। অমিত চুন্নুকে বলে উঠল, আমাকে একটু সাহায্য করবি। আমিতো দাদা চা দোকানদার। আমি আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি বলুন?
অমিত বললো। তুই কাউকে বলতে পারবিনা। ব্যাপারটা আমি আর তুই শুধু জানবো। আচ্ছা দাদা ঠিক আছে। এই যে তোর দোকানে বসে, সবাই গতকাল রাতের ঘটনা বললো, এই ব্যাপারে তুই কিছু জানিস। না দাদা, আমি কিছু জানি না। তবে পুলিশ যখন লাশটি নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন বলে ছিল। বড় ঘরের মেয়ে মনে হচ্ছে। চুন্নুকে আর কিছু না বলে অমিত থানার দিকে রওনা হলো। থানায় পৌঁছে থানার বড় বাবুকে অমিত খোঁজ করছে। কনস্টেবল বললো আপনি বসেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বড় বাবু এসে পড়বে। তার ঘণ্টা খানেক বসে থাকার পর বড় বাবু আসলো। সাথে ঐ মেয়েটার লাশ ছিল। থানার বড় বাবু বললো, আপনি কে? আমি অমিত রায়। শুনলাম আজ সকালে একটি মেয়ের লাশ আমাদের এলাকা থেকে এনেছেন। তাই দেখতে আসলাম। মেয়েটিকে চিনতে পারি কিনা।
চায়ের দোকানে চা পান করার সময় শুনতে পারলাম। এ লাশের এখনও পর্যন্ত কেউ দাবি করতে আসেনি। তাই আমি দেখতে আসলাম। চিনতে পারি কিনা। এ বলার পর থানার বড়বাবু বলে উঠল, আপনিতো খুব দায়িত্ববান নাগরিক মনে হচ্ছে। এ কথা শুনার পর অমিত বলে উঠল, আমি দায়িত্ববান নাগরিক কিনা তা বলতে পারবো না। তবে বড়বাবু আমাকে একটা অপরাধ বোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আজ সকালের পর থেকে। থানার বড়বাবু বলে উঠল, কেন? কি হয়েছে? আপনারা যে লাশটি থানায় এনেছেন। সেটা আমার বাসার সামনে ফেলে গিয়েছিল গতকাল রাতে। তবে এটা মানুষের লাশ ছিল না অন্য কিছু ছিল আমি বুঝতে পারিনি। এটা বস্তায় ভরা ছিল। আজ যখন সকালে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে চায়ের দোকানে, চা পান করতে আসি। তখন সবার মুখ থেকে শুনে বুঝতে পেরেছিলাম যে বস্তাটি ফেলে গিয়েছিল সেটায় ময়লা নয় মানুষের লাশ ছিল। থানার বড় বাবু বলে উঠল, আপনি যাদের কে ফেলে যেতে দেখেছেন তাদেরকে চিনতে পেরেছেন? না আমি পারিনি। তাহলে যান বাড়ি ফিরে যান। অযথা নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনবেন না।
অমিত বললো বড় বাবু আমার কাছে একটা প্রমাণ আছে। বড় বাবু বললো সেটা কি? তারা যখন গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছিলো। লাইটের আলোতে গাড়ির নাম্বারটা দেখে লিখেছিলাম চ-০২-০৭। বড় বাবু বললো, কি গাড়ী ছিল? এটা একটা এ্যাম্বুলেন্স ছিল। বড় বাবু বললো, ও তাই নাকি………
অসমাপ্ত থেকে যায়, জীবনের কিছু ঘটনা!