Skip to content

বহুরুপী 

বহুরুপী 

মানুষ খুবই অদ্ভুত। এরা আসলে যে কি চায় বোঝা খুব মুশকিল। সেদিন রানা ভাইয়ার সাথে গিয়েছিলাম শহরে। মার্কেট করাতে দামাদামির বিষয়ে অসম্ভব পটু আমি তাই ভাইয়া সবসময় আমাকে নিয়ে যায়। মার্কেট করতে করতে বিকেল হল। তখন আবার ভাইয়ার একটা মেয়ের সাথে দেখা করার কথা। 

আসলে সামনে ভাইয়ার বিয়ে। সেই মেয়ের সাথে আজ ভাইয়ার প্রথম মিট হল। ভাইয়া খুব খুশি, বিয়ের ব্যাপারটা পারিবারিক ভাবে আগালেও ভাইয়ার মেয়েটাকে অসম্ভব পছন্দ হয়ে গেছে। মেয়েরও ভাইয়া কে পছন্দ হওয়ার কথা, ভাইয়া ছেলে ভালো। মেয়েটার সাথে মিটিংটা শেষ হয় রাত ৮ টায়। ঠিক তখনই ভাইয়ার মনের অফুরন্ত আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে বলে ফেলল, চল স্বাধীন একটা মুভি দেখে আসি। আমি আবার মুভি প্রেমী, না করতে পারলাম না। আসলে মেয়েটার সাথে দেখা করে ভাইয়া অনেক খুশি হয়েছে, আর তার সাথে এত সময় যাবত আমি ছিলাম তাই আমার উপর এক প্রকার খুশি হয়েই এই মুভির আপ্যায়নটা আসলে করেছে। আমার তো ভালোই, একটা এনিমেশন মুভি দেখলাম দুজনে। মুভি শেষ হতে হতে বেজে গেল ১১টা। 

শহর থেকে গ্রামে ফির‍তে ১১টা অনেক রাত। অতি আবেগে ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা ব্যাপারটা। যা ভেবেছি তাই, বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি বাস নেই। এত রাতে এখান থেকে ফেরেনি রানা ভাইয়া এর আগে। হালকা ভয় পেতে শুরু করলো সে। আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম,”হেটে যেতে কতক্ষণ লাগবে?" ভাইয়া জানালো, "বাসে গেলে তো আধঘণ্টা লাগে, তাহলে হেটে গেলে দুই আড়াই তো লাগবেই।" আমি বললাম," চলো হাটি, দুইজনে প্যাঁচাল পারতে পারতে যাব কখন পৌঁছে যাব টেরই পাবো না। এ কথা অবশ্য সত্য, গল্প করতে করতে হেটে যে জীবনে কত বিশাল দূরত্ব পার করে ফেলেছি অতি সহজে বলার বাহিরে। 

 

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের মাঝে প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত হাঁটছিলাম আমরা। হালকা ক্লান্ত লাগলে একটা ব্রিজ এ দুজনে বসার সিদ্ধান্ত নিলাম। ফোনে দেখে নিলাম ১টা ২৭ বাজে। ৩/৪ মিনিট পর প্রায় ৭/৮ টা ছেলে ব্রিজের নিচ থেকে উঠে আসলো। আমরা হকচকিয়ে গেলাম। আমাদের গলার আওয়াজ শুনে উপরে এসেছে। আমাদের ঘিরে ধরল হাতে ছিল লাঠি আর দুইজনের হাতে ছিল চাপাতি। স্বাভাবিকভাবেই দুজনে ভয় পেতে লাগলাম। তবে আমার আর ভাইয়ার ভয় এক না। ভাইয়ার ভয় নিজেকে বাঁচানোর, আর আমার ভয় আজ হয়তো ব্যাপারটাকে গোপন রাখা সম্ভব না। 

 

ভাইয়ার কাছে গিয়ে একজন সব চাইতে লাগলো। বিয়ের জন্য ভাইয়া আজ ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা তুলে এনেছিল। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল," কি করবো স্বাধীন? কিছু একটা কর ভাই, কিছু একটা ভাব।" আমি আর কোন উপায় না দেখে তাকে বললাম শান্ত হতে। আর তখনই আমার শার্ট ছিঁড়ে বের হয়ে এলো দুটো বিশাল পাখা, আমার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। লাল রঙা ভয়ঙ্কর এক চেহারা হয়ে গেল আমার। দাঁতগুলো হিংস্র দানবের দাঁতের মতো হয়ে গেল। সাথে সাথে সব গুলো ছেলে দৌড়ে পালাল দুটো ছেলে অজ্ঞানও হয়ে গেল।

 

রানা ভাইয়াও আমাকে দেখে সেন্সলেস হয়ে গেল। আমি তাকে হাতে নিয়ে উড়াল দিলাম। যাক অজ্ঞান হয়ে ভালোই হয়েছে। কাল সকালে উঠলে বলবো সে হঠাৎই কাল অজ্ঞান হয়ে যায় আর যা দেখেছিল তা ছিল তার মনের ভুল। প্রথমে আমাকে কিছু একটা করতে বলে পরে নিজেই তা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেল। মানুষ আসলেই অদ্ভুত!