আমার একটা যাদুর কাঠি চাই
আমার একটা, যাদুর কাঠি চাই !
ঐ রূপকথার দেশের সুয়োরানী
ও সুয়োরানীর কাহিনী ?
তেমনি একটা যাদুর কাঠি চাই !
শরতের আকাশে ঝুলন্ত সাদা মেঘ
সঙ্গী করে নিয়ে, আমি দুলতে চাই
খেয়ালি নৌকায়!
শুধুই উড়তে চাই,
বিশুদ্ধ বাতাসে,
চারিদিকে এত বিষাক্ত আবহাওয়া,
এলোমেলো করে দেয়
আমার বিলাসী নৌকো !
সুফিয়ার স্বামী ইউনুস মিয়া
কাল রাতে ,
গলায় ফাঁস নিয়েছে !
খাটিয়ার উপর টান টান করে
শুয়ে থাকা, ইউনুস মিয়ার লাশ !
সুফিয়ার উসকো-খুসকো চুল ,
অপলক দৃষ্টি, দু'চোখে অশ্রুজল
বয়ে চলে সরু জল প্রপাতের মত!
বিদীর্ণ চেহারা, অভুক্ত শিশুরা
থর থর করে কাপে ,
সুদে কেনা ভ্যানটির মাসুয়ারি কিস্তির
টাকা দিতে পারেনি ইউসুফ মিয়া !
নিদারুণ অপমান আর লাঞ্ছনা,
ওর ছিপছিপে শরীর ও মনটাকে
বিদ্রোহী করে তেলে ,
উপরন্তু করনার ক্রান্তিকালে
কোন সওয়ারি নেই,
কেউ নেয়না ভাড়া !
ভ্যান গাড়ীটা দাড়িয়ে আছে স্বাক্ষর হয়ে।
কাল রাতে সুফিয়া ভাত খেতে দিয়েছিল
তার সন্তানদের মাটির সানকিতে !
লবণ মরিচ দিয়ে , কুপির আলোতে
ছোট মেয়েটি বলল ,
একটু পেয়াজ দাওনা মা ,
সুফিয়া বলল , পিয়াজ কোথায় পাব মা?
পিয়াজের যে বড় দাম !
ইউনুস মিয়া তা শুনেছিল
বাঁশের বুননে গড়া
ভাঙ্গা দরজার আড়ালে বসে!
এমনিতে মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে
তার উপর আজ বাজারে
কিস্তির টাকা না মিটাতে পারায়
সে কি অপমান!
বেঁচে থাকার অর্থ পায়না ইউনুস মিয়া!
পাসের ঘরে বৃদ্ধা মা ডাকে,
বাবা ইনু বাড়ী এলি বাবা ?
বেশ কদিন জর তার সাথে কাশিও আছে।
বাজারে আজ ওরা ,
কোন ভয়ানক মহামারির
কথা বলছিল ?
এই রোগ নাকি কাউকে ছাড়বেনা ,
সেই রোগ হয়নিতো মার ?
মা আবার ডাকল ,
বাবা ইনু , আমার ঔষধ টা এনেছিস ?
ইউনুস মিয়া শুকনা গলাটা ঢোক গিললো!
অপরাধ বোধে কাঁপা গলা,
বললো, না মা!
ক্ষোভে দুঃখে, বিষের মত মনে হয় তার
অর্থহীন বিবরণ এই পথচলা,
সুফিয়ার প্রেম , মায়ের আদর,
সন্তানের ভালবাসা,
সবই বিলীন হয়ে যায়!
ফ্যকাসে হয়ে যায়,
বেঁচে থাকার সাধ!
যা বলছিলাম,
আমার একটা যাদুর কাঠি চাই ,
আমি যেন ফিরিয়ে দিতে পারি
সুফিয়ার প্রাণের সংসার,
রং তুলি দিয়ে সাজাতে চাই
সুফিয়ার ধুসর জগত,
রূপকথার গল্পের নায়িকা
সুফিয়া একমুঠো ফুল হাতে নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে পথ চেয়ে!
ঘরে ফেরার গান গেয়ে
জোরে প্যাডেল মারে ইউনুস মিয়া,
হাতে তার রকমারি পসরার ঝুলি!!
মায়ের ঔষধ, বিস্কুট ,
আর একটি দিঘল পাড়েরলাল শাড়ি,
কমলা রং-এর সুরকির পথে
ফিরবে ইউনুস মিয়া!