বন্ধুত্বের শুরু হোক পরিবার থেকে
পিতামাতা যে সন্তানের আপনার চেয়ে আপন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। তবে এই জায়গাতে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে বিচ্যুতি ঘটে। কারণ বাস্তবতা হচ্ছে সন্তান ও পিতামাতার মধ্যে সবসময় একটা ভয়ভীতির সম্পর্ক বিরাজ করে। বেশিরভাগ সন্তানই তাদের বাবা-মা কে প্রচুর পরিমাণ ভয় পায়। সন্তান কি চায়, কিসে তারা আনন্দ বোধ করে, কেন তারা কষ্ট পায় এসব ব্যাপারে সন্তান যদি খোলাখুলি তাদের পিতামাতা কে প্রাণ খুলে বলতে পারতো তাহলে আমাদের সমাজে বেশিরভাগ অশৃঙ্খলা ও অপরাধ সৃষ্টির আগেই বিনাশ হয়ে যেতো। পিতামাতার চেয়ে মমতাময়ী ও আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তারা সব সময় নিজে হাজার ত্যাগ- তিতিক্ষা শিকার করেও সন্তানকে ভালো রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যান। সন্তানরা যখন তাদের সমস্যার কথা পিতামাতাকে বলতে না পারে তখন বাধ্য হয়ে তাদের সমস্যার কথা কাছের কোন বন্ধু- বান্ধবদের বলে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করে।
এখন কথা হচ্ছে বন্ধু যদি বন্ধুর মতো হতো তাহলে সমস্যা ছিল না। বর্তমানে বন্ধুর সংজ্ঞা যেন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে সময়ের সাথে সাথে। দিন দিন বন্ধুত্বের বিষয়টা যেন বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছে। একজন বন্ধুর কাছে অন্য বন্ধুর ব্যক্তিগত তথ্য ততক্ষণ পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে রমরমা বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। যদি কোন কারণে তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কের ইতি টানতে হয় তাহলে আপনার ব্যক্তিগত সব তথ্য যে শুধু আপনার আশেপাশের লোকজন জানবেন তা নয় সারা দেশবাসীও জানতে পারে ইন্টারনেট এর বদৌলতে তাতে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।তবে যারা নিজের দুঃখ, কষ্ট নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে তারাই আসল কিংবদন্তী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কয়জন সেটা পারে?
আবার অনেকের মনে এই প্রশ্নও জাগতে পারে যে, যেহেতু নিজের বন্ধুদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং নিজের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তাদের সেগুলো বলার দরকার কি?
উত্তরটি এমন হলে খারাপ হবে না যে, দিন শেষে প্রত্যেকটি মানুষই এমন একটি নির্ভরযোগ্য স্থান খুঁজে যেখানে দুঃখ- কষ্ট, নিজের ভালো লাগা, খারাপ লাগা বলে নিজেকে হালকা করতে পারে।সেটা হতে পারে বাবা-মা, ভাইবোন বা বন্ধু। সেটা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির প্রাধান্য ও গুরুত্ব প্রদানের উপর তবে বেশিরভাগ মানুষই বন্ধুকে সেই ব্যক্তির আসনে বসিয়ে রাখে। কিন্তু ব্যতিক্রম কোন ব্যক্তি থাকতেই পারে।মূলত সেজন্যে আমরা তথাকথিত নির্ভরযোগ্য বন্ধুদের সব কথা বলে বেড়াই এবং দিনশেষে তারাই সব চেয়ে অনির্ভরযোগ্য কাণ্ড ঘটায়।
বাবা-মার সাথে যেসব সন্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সেসব সন্তান তাদের যেকোনো সমস্যার কথা অনায়াসে বাবা-মা কে শেয়ার করে। আবার অনেকে বড় ভাই বোনদের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। তবে পিতামাতা বা ভাইবোন যেই হোক না কেন তারা সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে তাদের অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতা উপলব্ধি করার কারণে। আবার জীবনের যেকোনো কঠিন সময়েও পরিবারের সদস্যরা নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও রক্ষা করতে এগিয়ে আসে।
তাই সন্তানের সাথে প্রত্যেক বাবা-মার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখাটা খুব প্রয়োজন। কারণ দেখা যায়, যে পরিবারের সন্তান তাদের বাবা মায়ের সাথে যত বেশি ব্ন্ধুপূর্ণ সেই পরিবারের সন্তানেরা খুব কমই বিপথগামী হয়।কারণ বন্ধুর সাথে যেমন আমরা কথা বলার সময় কিছু রেখে কিছু ঢেকে কথা না বলে ডিরেক্ট সব বলতে পারি বাবা-মার সাথে তার চেয়ে কম বললেও চলে।কারণ সাংসারিক ও বাস্তবতা তাদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে আমরা কোন বিষয়ে শুধু ইশারা -ইঙ্গিত দিলেই চলে বাকিটা তারা নিজেই বুঝে নেন।সুতরাং বাবা-মার সাথে প্রাণ খুলে নিজের সমস্যার কথা বলতে না পারলে দিন শেষে যে সমস্যায় পড়বো, সে তো আমরাই!!
মজার ব্যাপার হচ্ছে খুব ভালো বন্ধু হলেও অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে না শুধুমাত্র নিজের অনভিজ্ঞতা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তার অভাবে যেখানে ঠিক একই সমস্যার সমাধান বাবা-মা কত মান সম্মত ভাবে সমাধান করেন!
তবে সন্তানের সাথে খুব বন্ধুত্ব হওয়ার আগে প্রত্যেক বাবা-মা কে এই বিষয় টা মাথায় রাখতে হবে যে, তাদের সাথে ঠিক যতটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে তারা বিপথে যাবে না ঠিক ততটাই রাখা উচিত।বেশি বন্ধু সুলভ আচরণ করে সন্তান যাতে বেয়াদবি বা বেপরোয়া আচরণ না শিখে সেদিকটা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে" এই উক্তির সাথে একাত্মতা পোষণ করে বলা যায়, সেই সন্তানদের ভালো থাকা হয়ে উঠুক বাবা-মার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ঝামেলা মুক্ত জীবন যাপন করার মাধ্যমে।