কেমন হবে লকডাউন পরবর্তী ভ্রমণ!
কিন্তু যখনই শুরু হোক, তখন দেখা যাবে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নানা ব্যবস্থা; যদিও তা এখনই চালু হয়ে গেছে। যাত্রীদের মধ্যে সবসময় এক বা দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করা হতে পারে (একসঙ্গে যারা ভ্রমণ করছেন তারা বাদে)। পুরো বিমানবন্দর এলাকায় বিনা মূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করার ব্যবস্থাও চালু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিরাপত্তা প্রশাসন (টিএসএ) বলছে, সিকিউরিটি স্ক্রিনিংয়ের আগে ও পরে যাত্রীদের ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া উচিত। তবে ইতিমধ্যে হংকং বিমানবন্দরে যাত্রীদের পুরো শরীর জীবাণুমুক্ত করার একটি যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ যন্ত্রটি থেকে একটি স্প্রে যাত্রীর গায়ে ছিটিয়ে দেওয়া হবে—যা যাত্রীর ত্বক ও পোশাকে কোনো ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থাকলে মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে তা মেরে ফেলবে।
হংকংয়ের এই বিমানবন্দরে রোবট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরে ঘুরে পরিষ্কার করার কাজ করতে থাকবে। কোনো মাইক্রোবের উপস্থিতি টের পেলে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে তাদের ধ্বংস করে ফেলা হবে। যেসব বিমানবন্দরে ইলেকট্রনিক চেক-ইনের যন্ত্র আছে সেগুলো ব্যবহার করতে যাত্রীদের উত্সাহিত করা হচ্ছে। বেশির ভাগ বিমানবন্দরেই বিভিন্ন ধরনের নির্দেশিকা সংবলিত পোস্টার থাকবে।
ইনট্রেপিড ট্রাভেলের প্রধান নির্বাহী জেমস থর্নটন বলেছেন, চেকিংয়ের কড়াকড়ির জন্য আগামী দিনগুলোতে যাত্রীদের বিমানবন্দর পার হতে সময় বেশি লাগবে। তিনি বলেন, হয়তো আমরা ইমিউনিটি পাসপোর্টের মতো কিছু চালু করা হচ্ছে এটাও দেখতে পাব। এমিরেটস আরো তৎপরতা দেখিয়ে দুবাই বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য দ্রুত কোভিড-১৯ টেস্টের ব্যবস্থা করেছে যাতে ১০ মিনিটের মধ্যে ফল জানা যায়।
পালটে যাবে বিমানের ভেতরের পরিবেশও। বিমানের ভেতরে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের হাসিমুখ আপনাকে কল্পনা করে নিতে হবে—কারণ তারা খুব সম্ভবত মাস্ক পরা থাকবে। যাত্রীদেরও সম্ভবত মাস্ক পরে থাকতে হবে, ফলে আপনার হাসিমুখও তারা দেখতে পাবে না। প্রধান বিমান সংস্থাগুলো তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা উন্নত করছে, ফলে স্বস্তির ব্যাপার হবে যে আপনার ট্রে-টেবিল, সিটের হাতল এবং সেফটি বেল্ট জীবাণুমুক্ত করা থাকবে। কোরিয়া এয়ার বলেছে যে তারা কেবিন ক্রুদের গাউন, গ্লাভস এবং আই মাস্ক দেবে। ফলে বিমানের ভেতর পিপিই পরা লোক দেখলে ভয় পাবেন না।
বেশির ভাগ এয়ারলাইন্স বলছে, তারা বিমান পুরোপুরি যাত্রীভর্তি করবে না—আপাতত মাঝখানের সিটগুলো খালি রাখা হবে। ফলে বিমানসংস্থাগুলো হয় লোকসান দেবে, নয় তাদের টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিতে হবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এক জন পাইলট ।
পর্যটন স্পটগুলোর চিত্রও বদলে যাবে। দেখা যাবে সমুদ্র সৈকতে মুখে মাস্ক পরে রৌদ্রস্নান করছে মানুষ; তাদের মাঝখানে হয়তো থাকবে প্লাস্টিকের পার্টিশন দেওয়া। পর্যটন সংক্রান্ত একটি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উলফ সন্টাগ বলছেন, ইতালিতে এমন কিছু করার চিন্তাভাবনা চলছে। তিনি বলেন, ইউরোপের অনেক হোটেল চিন্তা করছে, অতিথিদের এক রুম পর পর থাকতে দেওয়া যায় কি না। তাছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় রিসোর্টগুলোতে সুইমিং পুল এখন খোলা যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। অনেক রেস্তোরাঁ পরিকল্পনা করছে, তাদের টেবিলগুলো আরো দূরে দূরে বসাতে। অনেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মজুত গড়ে তুলছে, কেউ বা বুফে খাবার বন্ধ রাখার কথা ভাবছে।
এথেন্সে মেডিসিনের অধ্যাপক নিকোলাওস সিপসাস বলেন, এটা ঠিক যে বুফে খাবার, সুইমিং পুল, সৈকত এবং বার এগুলো এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তার মতে, ভবিষ্যতে হয়তো অনেকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ কমিয়ে দেবেন, ঘরে বসেই ছুটি কাটাবেন যাকে বলা হবে ‘স্টে-কেশন’। বৈশ্বিক মহামারির কারণে জাহাজ বা প্রমোদতরিতে ভ্রমণ, স্কি হলিডে, বা দীর্ঘ বিমান ভ্রমণ তাদের আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে পারে।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মালিক কোম্পানি আইএজি বলছে, তারাও মনে করে অবস্থা আগের মতো হতে বেশ কয়েক বছর লাগবে।
সূত্র: বিবিসি