হরেক রকম উপসর্গ নিয়ে এলো ‘কভিড১৯’
কভিড-১৯ আক্রান্তদের তেমনই কিছু বৈশিষ্ট্য হল:
১) উপসর্গ বিহীন: ‘ভাইরাস’ শরীরে অবস্থান করছে, কিন্তু তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী থাকায় কোন প্রকার উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ পায়না। শতকরা ২০ – ২৫ জন।
২) সুপ্তাবস্থা: রোগজীবাণু শরীরে প্রবেশের পর থেকে উপসর্গ ও লক্ষণ প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত। এই সময় রোগী নিজেও জানে না সে আক্রান্ত হয়েছে। সুপ্তাবস্থা শেষ হলেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। সাধারণত ০২–১৪ দিন (গড়ে ৪–৬ দিন)।
৩) স্বল্প মাত্রার উপসর্গ। শতকরা ৫৫ থেকে ৬০ জন।
৪) মাঝারি/মধ্যম মাত্রার উপসর্গ। শতকরা ১৫ থেকে ১৮ জন।
৫) মারাত্মক উপসর্গ। শতকরা ০২ থেকে ০৫ জন।
যাদের রোগের লক্ষণ থাকে তাদের দ্বারা রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম। কারণ তারা জনসাধারণ থেকে আলাদা থাকে, বাড়িতেই হোক অথবা হাসপাতালেই হোক। যত সমস্যা এবং ভয় উপসর্গ-বিহীন এবং সুপ্তাবস্থায় থাকা (১ এবং ২ নং) রোগীদের নিয়ে। এই দুই শ্রেণীর রোগীরা পরিবারের সদস্যদের, আত্মীয়-স্বজনদের এবং তার সংস্পর্শে আসা সকলের মাঝে নিজের অজান্তে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আসুন, বিপদে ধৈর্যহারা না হয়ে এই মুহূর্তে আমাদের যা করণীয় সেই দিকে মনোযোগ দেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে থকেন:
• মনে মনে ভাবুন, আশেপাশের যে কোন লোক উপসর্গ ও লক্ষণ বিহীন জীবাণুবাহক হতে পারে। তাদের মাধ্যমে আপনি নিজেও যেমন আক্রান্ত হতে পারেন, তেমনি হতে পারেন আপনার পরিবার ও প্রিয়জনদের অকাল মৃত্যুর কারণ।
• অতএব সরকারি আদেশ এবং আমাদের সতর্ক বার্তা ও অনুরোধ আমলে নিয়ে নিয়ম মেনে চলুন। অযথা ‘করোনা’কে ঘরে ডেকে নিয়ে আসবেন না।
• অনেকে প্রশ্ন করেন ‘লকডাউন’ আর কতদিন? সঠিক উত্তর হচ্ছে, যেদিন একজন মানুষও আর আক্রান্ত হবে না, সেইদিন থেকে আরও ১৪ দিন (যদি সম্ভব হয়)।
• তবে এই দীর্ঘ সময় স্বল্প আয়ের মানুষদের ঘরে আটকে রাখতে হলে, ততদিন পর্যন্ত তাদের কাছে খাবার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে এই মিশনে আমরা ব্যর্থ হবো। আমরা আদৌ কি তা পারবো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।
• আমার মনে হয় আপাতত অন্তত: আরও একটি মাস অর্থাৎ এই পবিত্র রমজান মাসটি যদি আমরা সঠিক ভাবে ‘লকডাউনে’ থাকতে পারতাম, তাহ’লে আশা করা যায় এই মহামারী থেকে আমরা অনেকটাই পরিত্রাণ পেতাম।
• জনসমাগম এড়াতে রেস্টুরেন্ট, ইফতারির দোকান, অন্যান্য দোকান-পাট, গার্মেন্টস, মিল-কারখানা, অফিস-আদালত অন্তত আরো এক মাস বন্ধ রাখলে ভালো হয়।
তবে আতঙ্ক বা হতাশা নয়, চাই সতর্কতা। এই রোগ হলেই যে নির্ঘাত মৃত্যু তা কিন্তু নয়। তাহলে আসুন এবার সঠিক তথ্যটি জেনে নিন –
• ‘করোনায়’ আক্রান্তদের প্রায় ৮০% উপসর্গ বিহীন সহ স্বল্প মাত্রার উপসর্গ নিয়ে আসে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী থাকায় সাধারণ সর্দি-জ্বরের মত হালকা উপসর্গ হয়। ২ সপ্তাহ বাসায় আলাদা থেকে বিশ্রাম নিলে এবং প্যারাসিটামল ও এন্টিহিস্টামিন (এলাট্রল) জাতীয় ঔষধ খেলেই সাধারণত সুস্থ হয়ে যায়।
• অতএব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। সম্ভব হলে ফলমূল, শাকসবজি ও ভিটামিন (বিশেষ করে ভিটামিন সি ও ডি) যুক্ত পুষ্টিকর খাবার বেশি খান। প্রতিদিন কিছু সময় বারান্দায় অথবা ছাদে রোদে গিয়ে বসুন। রোজ অন্তত ৩০–৪০ মিনিট ঘরের ভিতরে অথবা ছাদে হাঁটা-হাঁটি ও হালকা ব্যায়াম করুন। হালকা গরম পানিতে নিয়মিত গোসল করুন ও হালকা গরম পানি খান। ঠাণ্ডা খাবার পরিহার করুন। কোন অবস্থাতেই যেন সাধারণ ঠাণ্ডা ও সর্দি-জ্বর হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। তা হলে আশা করা যায় আক্রান্ত হলেও আল্লাহ্র রহমতে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।
• শতকরা ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হলেও এদের মধ্যে বেশির ভাগ রুগীই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে যান।
• শতকরা ০২ – ০৫ জন যাদের মারাত্মক উপসর্গ থাকে তাদের নিয়েই যত শঙ্কা।
• কখনো ভেবেছেন কি? ধরে নেয়া যাক, যদি এক চতুর্থাংশ (৪ কোটি) মানুষ আক্রান্ত হয় এবং তার ০২% মারা যায় তবে সংখ্যাটি কত দাড়ায়? নেহায়েত কম নয় কিন্তু, প্রায় ০৮ লাখ।
• এখনো পর্যন্ত যেহেতু এই রোগের কোন ঔষধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি, তাই বাঁচতে হলে চাই ১) সতর্কতা ও ২) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
সব শেষে বলবো, আমাদের এই মুহূর্তে আরো যা করণীয়- সৃষ্টিকর্তাকে সর্বদা স্মরণ ও তার কাছে আমাদের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। যারা অসুস্থ আছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা সহ আমরা যারা এখনো সুস্থ আছি তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
লেখক: অধ্যাপক এইচ আই লুৎফর রহমান খান
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।