হাতে কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ৫ এপ্রিল থেকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভার পর জামির্ত্তা ইউনিয়নকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দোকানপাট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। এতে করে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে নানা পেশার নিম্ন আয়ের মানুষ। আতঙ্কে জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে। হাতে কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই। সরকার এসব কর্মহীন মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা দিলেও রয়েছে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। ১০ টাকা কেজি দরে চালের ক্ষেত্রেও অনিয়ম। অনেকেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এছাড়া যে পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ এসেছে, সেটিও প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানা গেছে।
জামির্ত্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম রাজু বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ১ হাজার ব্যক্তির তালিকা দিয়েছি। সাড়ে ৩০০ লোকের সহায়তা এসেছে মাত্র। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ বিতরণ করব। এছাড়া প্রতিটি বাড়িতে আমি হাত ধোয়ার সাবান দিয়েছি। চান্দহরের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাদল বলেন, সরকারিভাবে পাওয়া মাত্র ৪৬৫ ব্যাগ চাল এবং ৩৪০ জনকে ২৫০ ও ৭০ জনকে ২০০ করে টাকা বিতরণ করেছি। ৩ হাজার ৪৫০ জনের তালিকা দিয়েছিলাম। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে ৫ কেজি চাল, ১ লিটার তেল, ডাল ও লবণ দিয়েছি প্রায় ২ হাজার পরিবারকে। তালেবপুরের চেয়ারম্যান মো. রমজান আলী বলেন, ১ হাজার ৫০০ পরিবারের তালিকা দিয়ে পরে সেটা কমিয়ে ৯৭০ জনের করেছি। বরাদ্দ পেলাম মাত্র ২০০ জনের।
এছাড়া সরকার দিচ্ছে শুধু চাল। আলু, পিঁয়াজ, লবণ নিজের পকেট থেকে দিয়েছি। তিনি আরো জানান, এমনও আছেন তারা ত্রাণ নিচ্ছে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আবার ১০ টাকা দামের ৩০ কেজি চাল পাওয়ার পরেও তারা কিছুই পাননি বলে অভিযোগ করেন। আমি দিনের বেলায় খোঁজ খবর নিয়ে মেম্বারদের নিয়ে তালিকা করে রাতের বেলায় পৌঁছে দেই। আবার মোবাইলে ম্যাসেজ পেলেই রাতের বেলায় ত্রাণ পৌঁছে দেই।
জামসা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিঠু বলেন, ২ হাজার লোকের তালিকা দিয়ে পেয়েছি মাত্র ২৩৫ ব্যাগ চাল ও ২৫০ করে টাকা। আমি এখনো তা বিতরণ করিনি। কারণ ঐ টাকায় লবণ, তেল, আলু ও পিঁয়াজ কেনা সম্ভব নয় এবং কম দেওয়াও সম্ভব নয়। কাজেই আমি চোর সাজতে রাজি নই।
পৌর সভার মেয়র খোরশেদ আলম ভুঁইয়া জয় বলেন, আমরা সরকারিভাবে ১০ টন চাল পেয়েছি। ২ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫ কেজি করে বিতরণ করেছি। আমরা ৫ হাজার পরিবারের লিস্ট দিয়েছিলাম। জানতে পারলাম দুই/এক দিনের মধ্যে আরেকটি বরাদ্দ আসবে। এছাড়া নিজেদের অর্থায়নে চার টন আলু, এক টন লবণ ও এক টন ডাল দিয়েছি। পৌরসভায় ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা মোটেও ঠিক না। তবে মোবাইলে নয় সাক্ষাতে বলব। এছাড়া অনেকেই ত্রাণ পেলেও অস্বীকার করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, পৌরসভার জন্য ১০ মেট্রিক টন চাল ও ১১ ইউনিয়নের জন্য ৩৫ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এতে করে একটি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি ডাল ও ১ টি সাবান দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরো বরাদ্দ আসবে।