পাল বাড়িতে ঘুরছে না চাকের চাকা, ঘরের খাবার প্রায় শেষ
দুদিন বাদেই বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। শশব্যস্ত থাকার সময়গুলোতে নীরব পাল বাড়িগুলো। দেখা যাচ্ছে না মাটির তৈরি জিনিসপত্রের স্তূপ, কাদায় চকচক করছে না চাকের চাকাগুলো। পাল বাড়ির পুরুষদের পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছেন নারীরাও। বাড়ির উঠানে বসে তাদের একটাই চিন্তা-কিভাবে এ দুঃসময় পার করবেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সরকারিভাবে পহেলা বৈশাখ পালনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দুর্দিনে পাল সম্প্রদায়।
জানা গেছে, জেলার ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় প্রায় দুই হাজার পাল সম্প্রদায়ের লোক রয়েছেন। পাল পাড়াগুলো শিবগঞ্জ, মহুয়াতলা, ধামর, চকরাধাকানাই, ভালুকজান, নাওগাঁও. বেদবাড়ী, রামনগর গ্রামে অবস্থিত।
সরেজমিন, শিবগঞ্জ বেড়ীবাড়ি (পশ্চিম) পালপাড়ায় তৃপ্তি রাণী পালের বাড়ি গিয়ে চোখে পড়লো কিছু করুণ চিত্র। সাংবাদিক আসার খবর শুনে দৌড়ে হাজির হলেন, তার দুই সন্তান প্রমিত পাল (১২), সরঞ্জিত পাল (৯)। ৬ সদস্যের এ পরিবারের বসতভিটা ছাড়া কিছু নেই। মাটির কাজই হলো তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। সারা বছর তার উন্মুখ হয়ে থাকেন বৈশাখ মাসের দিকে। জানা গেলো, এ মাসের আয় দিয়ে অনেকের ছয় মাসের সংসার খরচ চলে। কিন্তু এবার তা সম্ভব হচ্ছে না।
তৃপ্তি পাল জানলেন, করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে এবার পহেলা বৈশাখ সরকারিভাবে বন্ধের কথা শুনে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে দইয়ের ছোট-বড়ো পাতিল তৈরির কাজ শুরু করে ছিলাম। কিন্তু লকডাউনের জন্য কেউ তাও কিনতে আসছে না। আমাদের আয়ের সকল পথ এখন বন্ধ। ঘরে যে খাবার আছে তা আর মাত্র কদিন চলবে।
শুধু তৃপ্তি রাণী নন, একই অবস্থা প্রদীপ পাল, বাদল পালসহ অনেকেরই। তারা জানালেন, আমাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এই মাটির কাজ। বর্তমান সময়ে আমরা খুবই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। কদিন পর কি খাবো, কিভাবে চলবো তা কেউই জানি না।
এমন অবস্থায় পালদের সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা করা হবে কি না জানতে যোগাযোগ করা হয়ে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল ছিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি জানান, পালদের খোঁজ নিয়ে ত্রাণের ব্যবস্থাসহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।