মাসিকের সময় চাই বাড়তি যত্ন
মাসিক নিয়মিত হওয়া ও মাসিক চলাকালীন সময়ের মানসিক অবস্থা নিয়ে অনেক বেশি সচেতনতা ছড়ালেও আমাদের অনেকের এখনো অজানা যে মাসিকের সময় নিজের বাড়তি যত্ন না নিলে অনেক ধরণের রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে৷ তাই মাসিকের সময় কিভাবে নিজের যত্ন নেয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করব :
পুষ্টিকর খাবার
মাসিকের সময় শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে যাতে খাবারের পাতে প্রোটিন ও ফাইবার জাতীয় খাবার থাকে। কারণ মাসিকের সময় অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দেখা দেয়, এ সমস্যা এড়াতে ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে৷ বাইরে ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলতে হবে ও ক্যাফেইন জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। বেশি করে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
আয়রনের ঘাটতি পূরন করতে ডিম, তরমুজ, ছোলা, মাংস ইত্যাদি খেতে হবে। এছাড়া ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে, ভিটামিন সি খুব সহজেই আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে যায় তাই রোজ ডায়েটে ভিটামিন সি রাখতে হবে৷
পানি
মাসিকের সময় রক্তের পাশাপাশি শরীর থেকে পানিও বেরিয়ে যায়৷ তাই যতটা সম্ভব হাইড্রেটেড থাকতে হবে। দেহের চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করার পাশাপাশি তাজা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। তবে এই সময় দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত কারণ এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে৷
পরিষ্কার থাকা
মাসিকের সময় জরায়ুতে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিকল্পে আর কিছু নেই৷ মাসিকের সময় নিয়মিত গোসল করতে হবে, কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরে অনেকটা স্বস্তি পাওয়া যাবে৷ নিয়মিত গোসল না করলে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হতে পারে। অবশ্যই ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর পর প্যাড বদলে ফেলতে হবে৷ অনেকে রক্তপাত কম হলে প্যাড পরিবর্তন করে না৷ কিন্তু রক্তপাতের পরিমান যেমনই হোক একটি প্যাড কখনোই ৬ ঘন্টার বেশি পরিধাণ করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে নানাধরণের ইনফেকশন হতে পারে৷ পরিষ্কার অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে।
শারিরীক পরিশ্রম করা
অনেকে মাসিক হলে একদমই শারিরীক পরিশ্রম করতে চায় না কিন্তু মাসিক হলেও টুকটাক শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত৷ এতে অনেক ধরণের জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে অতিরিক্ত ভারী কাজ না করাই ভালো। মনে রাখতে হবে মাসিক কোনো রোগ না, এটি প্রতিটি নারীর জীবনে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই হাঁটাহাঁটি ও হালকা ফ্রী হ্যান্ড ব্যায়াম করা যেতে পারে। এতে মন ও স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকবে৷
পর্যাপ্ত ঘুম
পরিয়ডের সময় ঘুমের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ রাত জাগলে শরীরের অস্বস্তি বাড়তে পারে। তাছাড়া পরিয়ডের সময় রক্তপাতের ফলে শরীর ক্লান্ত থাকে তাই প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম৷ খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুম হয়৷ ঘুমাতে যাওয়ার ১ ঘন্টা আগে থেকে ফোন, কম্পিউটার ও টেলিভিশন থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে৷
শরীর পর্যবেক্ষণ করা
অন্যান্য সময় থেকে এই সময়টা নারীদের শরীর কিছুটা সংবেদনশীল হয়ে থাকে। তাই নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে৷ অতিরিক্ত রক্তপাত কিংবা কম রক্তপাত কোনো টিই শরীরের জন্য ভালো লক্ষণ নয়৷ মাসিকের সময় নিজের শরীরে কোন পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কারো পরামর্শে কোনো ঔষধ খাওয়া যাবে না এতে শরীরে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে৷