Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“দুনিয়া যতই যাক না পচে, ইচ্ছে থাকুক বাঁচার”

নারীর জন্মই হয় সন্তান দেখাশোনার জন্য। ঠিক এমন উদ্দেশ্যই এ সমাজ নারীদের জন্য ঠিক করে দেয়। স্বামীর সংসার হবে তার একমাত্র পৃথিবী। জন্মের পর বাবার বাসা, আর বিয়ের পর স্বামীর। নারীর নিজের কোন বাসা থাকতে নেই। এমন চিন্তা করাটাও বিলাসিতা। নারীদের চাকরি, নিজেদের ক্যারিয়ার, প্যাশন নিয়ে বাঁচতে চাওয়া এসবই বিলাসিতা আমাদের সমাজে। এমনকি বিদ্যা অর্জনও মেট্রোপলিটনের বাইরের সমাজে বিলাসিতা হিসেবেই দেখা হয়।

 

“দুনিয়া যতই যাক না পচে, ইচ্ছে থাকুক বাঁচার”

 

কিন্তু, একটা জন্ম কী কেবল নিজেকে শুধুমাত্র সংসার সামলানোয় বিসর্জন দিতে হবে? নিজের পরিচয় কী সারাজীবন অমুকের স্ত্রী, অমুকের পুত্রবধূ কিংবা অমুকের মা, অমুকের বোন বলেই উদ্দেশ্য হবে? তাহলে ছোটবেলায় সেই যে গান শেখা, আবৃত্তি শেখা, এত এত পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন! এইসব কি ভেস্তে যাবে? নাকি ভালো বিয়ের উদ্দেশ্যে এসব অর্জন করা হয়? বিয়ে হয়ে গেলে সমস্ত প্যাশনকে জলাঞ্জলি দেয়াই নারী জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য

 

উত্তরটা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। অনেকেই বলতে পারেন বিয়ের পরও তো মেয়েরা চাকরি করে, একই সাথে ঘর সামলায়। মেয়েরা তো এখন আত্ননির্ভরশীল৷ প্রশ্ন হচ্ছে, এই আত্মনির্ভরশীলতা কী সামগ্রিক? সর্বপরিসরে? নারীর বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য যদি ঘর সংসার না হয় তাহলে কী? সে কি কখনো নিজের জীবন বেঁচে থেকে আদৌও যাপন করে? উত্তর যদি হ্যাঁবোধক হয়, সেক্ষেত্রে নারীদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা কেন বেশী বাংলাদেশে? কি কারণে বাংলাদেশে নারীদের আত্মহত্যা করার ঢল নেমেছে? 

 

“দুনিয়া যতই যাক না পচে, ইচ্ছে থাকুক বাঁচার”

 

পরিসংখ্যান মতে, পৃথিবীর পাঁচটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার বেশি। তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। সকল দেশে নারীদের তুলনায় পুরুষদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি থাকলেও, বাংলাদেশে চিত্রটি অন্যরকম।   সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী, লকডাউনের সময় ১৪ হাজারের বেশী আত্মহত্যার কেস উঠে এসেছে। এটি নারী পুরুষ ভেদে একটি পরিসংখ্যান হলেও, বাংলাদেশে এখনো নারীদের আত্মহত্যার হার ৫৭ শতাংশ এবং পুরুষদের আত্মহত্যার হার ৪৩ শতাংশ। 

 

“দুনিয়া যতই যাক না পচে, ইচ্ছে থাকুক বাঁচার”

 

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, পারিবারিক সহিংসতাই এর অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও যাদের বয়স ২০ থেকে ৪০ অনূর্ধ্ব তাদের মধ্যে  আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি।  গৃহবধূদের আত্মহত্যার যে প্রবণতা স্থানভেদে একই রকম। তারমধ্যে রয়েছে- পারিবারিক সহিংসতা, দাম্পত্য কলহ, একের অধিক কন্যাসন্তান প্রসব করা, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে কলহ ইত্যাদি। 

 

“দুনিয়া যতই যাক না পচে, ইচ্ছে থাকুক বাঁচার”

 

নারীদের আত্মহননের চিত্র থেকে এবার তাদের আত্মনির্ভরশীলতার অংশে ফিরে যাওয়া যাক। নারীরা যদি আত্মনির্ভরশীল হয়েই বেঁচে থাকতে শেখে তাহলে আত্মহত্যার কারণগুলো অন্য ব্যক্তি নির্ভর কেন হবে? কেন তার নিজের জীবন আছে, নিজের পরিচয় আছে বলে তাকে বেঁচে থাকার শিক্ষা তাকে দেয়া হবে না? কেন তাকে বলা হবে না যে তার জীবনের উদ্দেশ্য নিজের নাম ও কর্মের দ্বারা বেঁচে থাকা? তারমানে কি নারী আদৌও কোন স্বতন্ত্র সত্ত্বা নয়? নারীর জীবনের উদ্দেশ্য কী তবে শুধুমাত্র তার স্বামীর সংসার গোছানো? নাকি নিজে একটা স্বতন্ত্র মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা? হয়তো সুদূর ভবিষ্যতে তেমনটা হবে। সেকারণেই, এদেশের কোটি কোটি নারীর এখনো গ্রহণ কাটে, স্বপ্নের বুননে।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ