বৃষ্টি ভেজা ধর্ষিতার লাশ!
সম্পর্ক কাকে বলে? আমি জানি না। তবে আজ থেকে আট মাস আগে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে, এক জনের সাথে দেখা হয়। বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়, বাস স্টপের যাত্রী ছাউনির নিচে, দু'জন দাঁড়িয়ে ছিলাম, প্রায় ঘণ্টা খানেক হবে। আমি মনে-মনে ভাবতে থাকলাম, আমরা দু'জন ছাড়াতো এখানে আর কেউ নেই। তার সাথে যদি কথা বলে, পরিচয় হলে সময়টা এখানে কিছুক্ষণ কাটানো যাবে। আমি তেমন কিছু না ভেবেই একটু-একটু করে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
মেয়েটা হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো। আমি মনে হয়, তাকে কিছু বলতে চাই! মেয়েটি আমার দিকে বড়-বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে উঠলো, কি কিছু বলবেন? আমি চমকে গিয়ে বললাম, না! মানে কিছু না। মেয়েটি বললো, ও আচ্ছা ঠিক আছে। এই বলে দু'জন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি একটু থেমে গেলো। কিন্তু কোন বাস বা ট্যাক্সি পেলাম না। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ির পথে, পায়ে হেঁটে রওনা হলাম। কিছু পথ যেতেই, একটা মেয়েলি কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পেলাম, পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আমি মনে-মনে ভাবলাম এটা আমার মনের ভুল। কোন শব্দই মনে হয় হয়নি।
বাড়ি ফিরে সারাটা রাত শুধু ঐ বাস স্টপের দেখা, মেয়েটার মুখ চোখের সামনে ভেসে আসছে। আর মনে-মনে চিন্তা করছি। আগামীকাল যদি তার সাথে দেখা হয়, তার পরিচয় ও বাড়ির ঠিকানা নিয়ে নেবো। এই ভাবতে-ভাবতে কখন যেন দু'চোখে ঘুম এসে গেলো বুঝতে পারলাম না। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনতে পেলাম, একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গিয়েছে, বাস স্টপের পিছনের রাস্তায়। এ কথা শুনার পর থেকে, মনটা যেন কেমন হয়ে গেলো। বুকটা কাঁপছে থর-থর করে। কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। কারও মৃত্যু সংবাদ শুনলে কখনও আমার এরকম লাগেনি। আজ কেন মনটা এরকম খারাপ লাগছে?
প্রতিদিনের মত অফিসে গিয়ে যখন টেবিলে বসে কাজ শুরু করেছি, হঠাৎ পত্রিকায় বড় করে লাল কালিতে লেখা "বৃষ্টি ভেজা ধর্ষিতার লাশ"। এটা দেখে চোখ আমার কপালে উঠে গেলো। পত্রিকার ছবিটা দেখে, আমি হতবাক হয়ে গেলাম। আর আমার চোখ দিয়ে জল ঝরছে নীরবে। মনে-মনে চিন্তা করতে লাগলাম, এইতো সেই মেয়েটি যার সাথে গতকাল রাতে বাস স্টপে আমার সাথে দেখা হয়েছিলো। যাকে নিয়ে সারারাত ভাবলাম, আজ সে মৃত।
না পারবো কাউকে বলতে, না পারবো নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে। সে দিন রাতে ফেরার পথে, যে চিৎকার আমার কানে এসেছিলো, তখন যদি আমি পিছনে ফিরে গিয়ে দেখতাম, তাহলে আজ হয়তো মেয়েটি বেঁচে থাকতো।