Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজনীতির মঞ্চে ‘ওয়ান্ডার উইমেন’

আমরা কমবেশি সবাই wonder woman কমিক অথবা চলচ্চিত্রটি দেখেছি। আজকে ঠিক তেমনি এক বিস্ময় নারীর কথা শুনবো। 

 

তিনি মার্গারেট থ্যাচার, ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতায় এসে ব্রিটেনকে হারানো গৌরব ফিরিয়ে তিনি কাজ করে গেছেন। একদশকেরও বেশী সময় তিনি ব্রিটেন শাসন করেছেন। দৃঢ় ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দর্শন, শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি ও অভ্যন্তরীণ নীতি এবং কঠোর সমাজতন্ত্র বিরোধী মনোভাব কারণে তিনি আয়রন লেডি হিসেবে খ্যাতি পান।

 

রাজনীতির মঞ্চে ‘ওয়ান্ডার উইমেন’

 

পুরো নাম মার্গারেট হিল্ডা রবার্টস। জন্ম ১৩ অক্টোবর ১৯২৫, গ্রিনহাম, লিঙ্কনশায়ারে। জীবনের শুরু থেকেই যিনি ছিলেন এক অগ্নিকন্যা। তাঁর ইচ্ছা ছিল সীমাহীন এবং সেই চুড়া তিনি আরোহণ করেছেন। তাঁর পিতামাতা ছিলেন অ্যালফ্রেড রবার্টস নর্থাম্পটনশায়ার থেকে এবং বিট্রিস এথেল লিঙ্কনশায়ার থেকে। তিনি তাঁর শৈশব গ্রান্টহ্যামে কাটিয়েছিলেন, যেখানে তাঁর পিতা দুটি মুদি দোকানের মালিক ছিলেন। মার্গারেট রবার্টস, হান্টিংটর রোড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং কেস্তিভেন এবং গ্র্যান্থাম গার্লস স্কুল থেকে বৃত্তি লাভ করেন। তাঁর স্কুল রিপোর্ট, কাজ এবং ক্রমাগত উন্নতি দেখিয়েছেন। তন্মধ্যে পিয়ানো, হকি, কবিতা, সাঁতার কাটা এবং হাঁটা অন্তর্ভুক্ত। তাঁর পেন-ফ্রেন্ডিং বড় বোন মুরিয়েলের সাথে মার্গারেট, কিশোর যাত্রার জন্য অর্থ প্রদানের জন্য পকেট অর্থ সংরক্ষণ করেছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই তার সকল কাজে ছিলেন পটু। তিনি তাঁর প্রতিভা ফুটিয়ে তুলেছে তাঁর বিভিন্ন কাজ ও দক্ষতার মাধ্যমে।

 

রাজনীতির মঞ্চে ‘ওয়ান্ডার উইমেন’

উচ্চতর ছয় বছরে তিনি অক্সফোর্ডের কলেজে রসায়ন বিষয়ক গবেষণার জন্য বৃত্তি প্রদানের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে সেই সময় তিনি একটি মহিলা কলেজে ছিলেন। কিন্তু প্রথমবারের মতো তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং অন্য প্রার্থীর প্রত্যাহারের পরেই তাকে জায়গা দেওয়া হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে দ্বিতীয় শ্রেণি নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ১৯৪৭ সালে। কেমিস্ট্রি পড়ার সময়ই তিনি আইন বিষয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহ হন। তখনই রাজনীতি করা নিয়ে ভাবছিলেন। এরপর তিনি নির্বাচনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজার্ভেটিভ অ্যাসোসিয়েশনে। ১৯৪৬ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজার্ভেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন।

 

মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি ডার্টফোর্ডের কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ের পর দেওয়া ডিনার পার্টিতে মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে দেখা হয় একজন সম্পদশালী ও সফল ব্যবসায়ী ডেনিস থ্যাচারের সঙ্গে। ১৯৫০ ও ১৯৫১ সালে লেবার পার্টির নিরাপদ আসন ডার্টফোর্ড থেকে তিনি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন কিন্তু দুবারই ব্যর্থ হন তবে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন। একই সঙ্গে সবচেয়ে কম বয়সী এবং একমাত্র মহিলা প্রার্থী হিসেবে মিডিয়া আকর্ষণে সক্ষম হন মার্গারেট থ্যাচার। এ সময়ই মার্গারেট থ্যাচার ও ডেনিস থ্যাচারের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে ডেনিস থ্যাচার ও মার্গারেট থ্যাচার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৫১ সালে। 

 

রাজনীতির মঞ্চে ‘ওয়ান্ডার উইমেন’

 

থ্যাচার ১৯৫৯ সালে উত্তর লন্ডন থেকে কনজারভেটিভ দলের এমপি হন। প্রতিভা এবং কাজের প্রতি অনুপ্রেরণার কারণে মার্গারেট থ্যাচারের মধ্যে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। ১৯৬৪ সালের নির্বাচনে কনজার্ভেটিভ পার্টির পরাজয়ের পর তিনি তাঁর দলের ভূমি ও গৃহায়ণ দফতরের মুখপাত্র নির্বাচিত হন। কনজার্ভেটিভ পার্টি ১৯৭৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে হেরে যায়। লেবার পার্টি সরকার গঠন করে। যার ফলে মার্গারেট থ্যাচার হয়ে ওঠেন কনজার্ভেটিভ পার্টির সভাপতি এডওয়ার্ড হিথের নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ দলে মার্গারেট থ্যাচার তখন দারুণভাবে জনপ্রিয়। মার্গারেট থ্যাচার হিথকে প্রথম ব্যালট নির্বাচনে পরাজিত করেন। দ্বিতীয় ব্যালট নির্বাচনে পরাজিত করেন হোয়াইট ল-কে। এর ফলে মার্গারেট হয়ে ওঠেন দলীয় প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেত্রী।

 

মার্গারেট থ্যাচার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৭৯ সালের ৪ মে। তিনি হাউজ অফ কমন্সে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটেনের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়েও যে ভাবে শক্ত হাতে, বিভিন্ন বাধা অগ্রাহ্য করে তিনি ব্রিটেনের অর্থনীতিতে বৈপব্লিক সংস্কার এনেছিলেন, তার জন্য তিনি আয়রন লেডি হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন।

 

রাজনীতির মঞ্চে ‘ওয়ান্ডার উইমেন’

 

১৯৯০ সালের ১ নভেম্বর থ্যাচারের সবচেয়ে পুরনো ক্যাবিনেট মন্ত্রী গফ্রি হয়ি ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে পদত্যাগ করলে থ্যাচারের প্রধানমন্ত্রীত্ব হুমকির মুখে পড়ে। পরের দিন মাইকেল হাসেলটিন কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন। যদিও থ্যাচার প্রথম ব্যালট জয় পান কিন্তু মাইকেল যথেষ্ট সমর্থন পাওয়ায় দ্বিতীয় ব্যালট আদায় করে নিতে সক্ষম হন। তবে দ্বিতীয় ব্যালটে থ্যাচার চার ভোট কম পান। প্রাথমিকভাবে তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে ক্যাবিনেটের পরামর্শে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। তারপর পরিত্যাগ করেন। এ সময় তিনি নিজেকে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে বিতাড়িত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের পর মার্গারেট থ্যাচার দুই বছর ফিনচলির এমপি ছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি ৬৬ বছর বয়সে হাউস অব কমনস থেকে পদত্যাগ করেন।

 

লৌহমানবী কীভাবে হলেন

 

রাজনীতির মঞ্চে ‘ওয়ান্ডার উইমেন’

 

১৯৭৬ সালের ১৯ জানুয়ারি কেন্সিংটন টাউন হলে এক বক্তৃতায় তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ে কঠোর আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসী মনোভাবকে তাচ্ছিল্য করে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বের কর্তৃত্বের কাছে রাশিয়ানরা কিছুই নয়।’ এর উত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রিকা ‘ক্রাস্নায়া জাভেজডা’ তাকে আয়রন লেডি বা লৌহমানবী বলে আখ্যা দেয় এবং তিনি আনন্দের সঙ্গে এ উপাধি গ্রহণ করেন। কেবল লৌহ-মানবী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন না থ্যাচার, তাঁর ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তায় মুগ্ধ হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘দা বেস্ট মেন ইন ইংল্যান্ড’ অর্থাৎ ইংল্যান্ডের সেরা পুরুষ।

 

১৯৮৪ সালের ১২ অক্টোবর, ব্রাইটন হোটেলে তাঁর উপর বোমা হামলার চেষ্টা করা হলে অল্পের জন্য তিঁনি বেঁচে যান। তবে, ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল শেষ রক্ষা মেলেনি। মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে, পরোলোক গমন করেন বাস্তবের "ওয়ান্ডার উইমেন"।

 

তিঁনি পৃথিবী ত্যাগ করলেও, লাখো নারীদের ঘর ছেড়ে রাজনীতির মঞ্চে প্রবেশের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।তাঁর ভয়শূন্য চিত্ত বেঁচে থাকবে উন্নত শির হয়ে, প্রতিটি নারীর হৃদয়ে।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ