পেশাগত এবং মাতৃত্বের দায়িত্বের মেলবন্ধন!
বাংলাদেশের তিরন্দাজ নাজমিন খাতুন। মাত্র ৫ মাস আগেই মা হয়েছেন তিনি। অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে জন্ম দিয়েছেন ফুটফুটে এক ছেলে সন্তানের। তা সত্ত্বেও সন্তান জন্মের তিন মাসের মাথায় বাংলাদেশ গেমসে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন এবং অংশগ্রহণও করেন। তবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভুলে যান নি মাতৃত্বের দায়িত্ব। একসঙ্গে সামলেছেন দুটোই৷
কোলের সন্তানকে মাঠের পাশে রেখে অংশ নিয়েছেন সদ্য শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসে। সদ্য মা হওয়ার কথা মাথায় রেখেই শুরুতে গেমসে খেলার ইচ্ছা ছিল না তার। কিন্তু দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হওয়ায় কোচ অনুরোধ করেন তাকে। কোচের অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পারা এবং নিজেকে আরো প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদেই অংশ নেন এবারের আসরে। নিজেকে ফিট রাখতে শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম।
গাজীপুর শফিপুর আনসার একাডেমিতে চলত আর্চারির ক্যাম্প। অনুশীলন ক্যাম্প থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে বাসা। সেখানে ছেলেকে রেখে আসতেন বড় ফুফু রাহেলা বেগমের কাছে। বাংলাদেশ গেমসেও টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে মাঠের একপাশে ফুফুর কোলে থাকত ছেলে।
বুলস আইয়ে চোখ থাকলেও মনটা পড়ে থাকত ছেলের কাছেই। ছেলের ভাবনার পাশাপাশি সামনে দেখতেন পদক মঞ্চ। সকলের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও মনের জোরে ফাইনালে ওঠেন তিনি। ক্যারিয়ারে পঞ্চম বারের মতো কম্পাউন্ডের একক ইভেন্টের ফাইনালে উঠেন।
ছোট্ট ছেলেকে নিয়েই গত মাসে অংশ নেন কক্সবাজারে জাতীয় আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে।ছেলেকে নিয়ে টানা ১৮ ঘণ্টা ভ্রমণের পর একটু অসুস্থ হয়ে পড়েন নাজমিন। মাত্র ১৩ দিনের অনুশীলনে রুপা জিতেন কক্সবাজারে। এত লড়াই সংগ্রামের পরও যে রুপা জিতেছেন, এতেই খুশি নাজমিন।
২০০৯ সালে আনসারের চাকরিতে যোগ দেন নাজমিন। অনেকে খেলাধুলার মাধ্যমে চাকরি পেলেও নাজমিন আগে ব্যাটালিয়নে সুযোগ পান। এরপর যোগ দেন আর্চারি খেলায়। প্রাথমিক বাছাইয়ে ৩০ জনের মধ্যে হয়েছিলেন সেরা। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
খেলাধুলা, ঘরের কাজ, চাকরি এবং সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া মাতৃত্বের দায়িত্ব দশভুজার মতো সবটাই সামলাচ্ছেন সমানতালে। দিন শেষে তার মতো নারীরাই প্রমাণ করছেন, 'আমি নারী, আমিই পারি।'