পাথর-চুমকি-পুঁতি বসিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে রংপুরের নারীরা
এ দেশের নারীদের নিয়মিত পোশাক শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস ও ওড়নায় পাথর, চুমকি ও পুঁতি বসানোর কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন রংপুর নগরীর রবার্টসন্স গঞ্জ মহল্লার দেড় শতাধিক নারী। তবে পরিশ্রমের তুলনায় একদমই সামান্য মজুরিতে কাজ করছেন তারা। গৃহস্থালির কাজ ও লেখাপড়ার ফাঁকে গৃহবধূ ও মেয়েরা পোশাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনছেন। তাদেরই হাতে তৈরি এ পোশাক রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শো-রুমে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
নগরীর ইস্পাহানী-৩ ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে চার শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। এর মধ্যে দেড় শতাধিক পরিবারের বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা ছোট্ট একটু জায়গায় শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস, ওড়নায় পাথর, চুমকি ও পুঁতি বসানোর কাজ করছেন। তাদের নিপুণ হাতে সুই-সুতা আর বিশেষ ধরনের গামের সাহায্যে বাড়িয়ে তুলছেন কাপড়ের সৌন্দর্য। মরিয়ম নামে এক গৃহিণী জানান, ক্যাম্প ও আশপাশের কিছু কাপড় ব্যবসায়ী শো-রুম মালিকদের কাছ থেকে পুঁতি, পাথর ও চুমকিসহ পোশাক কারুকাজের বিভিন্ন উপাদান এনে তাদের দেন। তারা এগুলো ব্যবহার করে নতুন নতুন ডিজাইনের কারুকাজ করেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন শাড়ি ও পোশাকের জন্য বিভিন্ন মজুরি আছে। আবার কাজের তারতম্যের ওপরও মজুরি কমবেশি হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, একটি সুতি শাড়িতে কাজ করলে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পাওয়া যায়। আবার জরজেটের শাড়িতে কাজ করলে ৩০০ টাকা পাওয়া যায়। তবে কাতান শাড়ির মজুরি এক হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। লেহেঙ্গা ও থ্রি-পিসের কাজের মজুরি নির্ভর করে কাপড়ের মানের ওপর। লায়লা নামে এক স্কুল ছাত্রী জানান, সাধারণত একটি সুতি শাড়িতে একজন কাজ করলে এক দিনে, জরজেট শাড়িতে এক সপ্তাহে ও কাতান শাড়িতে ২০ দিনে কারুকাজ করা সম্ভব। তবে তারা অধিকাংশ কাজই সংসারের বিভিন্ন কাজের ফাঁকে করে থাকেন। এসএসসি পরীক্ষার্থী শাপলা আক্তার জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে তার বোন ও মায়ের পাশাপাশি তিনিও এই কাজ করছেন। এর মাধ্যমে যা আয় হয়, তা দিয়েই প্রাইভেট শিক্ষকের বেতন ও তার নিজের হাত খরচ চালান।
কারুশিল্পী আয়শা খাতুন ও মোরশেদা বেগম জানান, শাড়িকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে শাড়ি কারুকাজ করার অর্ডার দেন। কিন্তু কাজের বিনিময়ে তারা যে মজুরি পান তা পরিশ্রমের তুলনায় অনেক কম। তারা জানান, এগুলো খুব সূক্ষ্ম কাজ। তাই আমদের সবসময় চোখ লাগিয়ে থাকতে হয়। এতে করে আমরা চোখে সমস্যা হয়। দেশে করোনার কারণে শাড়ির কাজে কিছুটা মন্দাভাব দেখা দিলেও বর্তমানে প্রতিমাসে দুই থেকে তিনশ’ শাড়ির কাজ হচ্ছে। অবরোধের আগে এ সংখ্যাটা ছিলো প্রায় চারশ’। দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ইংরেজি নববর্ষ ও পূজার সময় কাজের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।
রংপুর নগরীর শো-রুম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শাড়ি ও বিভিন্ন উপকরণ কমিশনের মাধ্যমে এনে সরবরাহ করেন শিরীন আক্তার। তিনি জানান, তার মতো আরও অনেকে বিভিন্ন মহাজনের (শো-রুমের মালিক) কাছ থেকে কমিশনের মাধ্যমে শাড়ি আনা-নেওয়ার সাথে যুক্ত আছেন।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বা সরকার উদ্যোগী হয়ে তাদের জন্য একটি ঘর তৈরি করে দিলে কাজের গতি যেমন বাড়বে, তেমনি তাদের আয়ও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।