পিঙ্ক
"তুমি একজন নারী যার চরিত্র অনেক প্রশ্নবিদ্ধ।" এমন একটি বাক্য থেকে ঠিক কি ধরণের ধারণা আসে একজন নারী সম্পর্কে? হয় তিনি একজন যৌনকর্মী নাহয় নানারকম অপকর্মে যুক্ত।
ঠিক এমনই একটি মামলা সাজিয়ে মিনাল আরোরার জীবনকে সবথেকে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর গল্পের ধারাবাহিক গতিময়তা। কি হবে শেষ পর্যন্ত, কে এই মিনাল আরোরা, কেনই বা এমন প্রশ্নবিদ্ধ চরিত্রের সম্মুখে?
এমন একটি গল্প নিয়ে অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী পরিচালিত এবং রেশমি শর্মা, রনি লাহিরি ও শীল কুমার প্রযোজিত সিনেমা পিঙ্ক। অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চন(দীপক শেহগাল), তাপসী পান্নু(মিনাল আরোরা), কীর্তি কুলহারি(ফালাক আলী), আন্দ্রিয়া টারিয়াঙ্গ(অন্দ্রিয়া), অঙ্গদ বেদী(রাজীব)।
মিনাল, ফালাক এবং আরোরা মধ্যবিত্ত পরিবারের তিন চাকুরীজীবী নারী। তিনজনই ভালো বন্ধু এবং রুমমেট। নিজেদের মধ্যে হাসি আনন্দে মেতে থাকেন৷ একটি কনসার্টে গিয়ে পরিচয় হয় রাজীব ও তার দুই বন্ধুর সাথে। রাজীব থাকে প্রভাবশালী নেতার ভাগ্নে। কনসার্ট শেষে তিন বান্ধবীকে সূরজকুন্ডের রিসোর্টে ডিনারের নিমন্ত্রণ করে। সেখানেই ঘটে যায় যত অঘটন। রাজীব মদ্যপ হয়ে মিনালকে ধর্ষণের চেষ্টা করে আর মিনাল নিজের আত্মসম্মান রক্ষায় আক্রমণ করে বসে রাজীবকে। কাচের বোতল দিয়ে আঘাত করে রাজীবের চোখ ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। এবং তিন বান্ধবী সেখান থেকে পালিয়ে আসে। এভাবেই গল্পের শুরু।
মিনাল পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে ক্ষমতার কারণে পুলিশ রাজীবের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেয় না। অপরদিকে প্রভাবশালী রাজীব প্রতিশোধের নেশায় মিনালকে চরিত্রহীন এবং খুনের চেষ্টার আসামি করে মামলা করে।
এখানেই আমাদের সামাজিক আর বাস্তব প্রেক্ষাপট গুলো তুলে ধরেন পরিচালক। খবরের কাগজে, টেলিভিশনের পর্দায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়তই যেসব খবর ভেসে বেড়ায়, পিঙ্ক সিনেমাতে তারই প্রতিফলন ঘটে।
মিনালের পাশে এসে তখন দাঁড়ায় দক্ষ আইনজীবী দীপক শেহগাল। এখানে অমিতাভ বচ্চন দক্ষ আইনজীবীর চরিত্রটিকে শক্তিশালী চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেন। তাপসী পান্নুর অভিনয়ও ছিল অসাধারণ। যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় দেখা যায় দীপক শেহগাল সুন্দর সাবলীল ভাবে আমাদের সমাজের নারীদের নিপীড়নের অবস্থা বর্ণনা করেন। এবং মিনাল আরোরাকে নির্দোষ ও ভুক্তভোগী হিসেবে প্রমাণ করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ থেকে বের করে আনেন। মিনালের একটি শব্দ "না", শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্কে অসম্মতি জানানোয় তাকে চরম দাম দিতে হয়। আমাদের চারপাশেও ঠিক একই প্রতিফলন দেখা যায়। "না মানে না" এই কথাটা যেকোনো কাজে, যেকোনো ক্ষেত্রে, যেকোনো নারী সে হোক সহপাঠী, কলিগ, প্রেমিকা, স্ত্রী কিংবা কোন যৌনকর্মী এখনো স্পষ্ট করে বলতে পারেনা। সেই স্বাধীনতা সমাজ, সমাজের ক্ষমতাবানরা নারীদের দিতে নারাজ।
পিঙ্ক সিনেমাটিতে পরিচালক সমাজের একটি বাস্তব দিক তুলে ধরে একটি সুন্দর নির্মাণ করেছেন যা দর্শক মনে আবেগের বাইরেও একটা আলাদা ভাবনা, মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটাতে পারে।