নারীর ভাষা, নারীর অধিকার!
মনের ভাব প্রকাশ করতে এবং সমাজে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম ভাষা। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু অনেক নারীই তার মাতৃভাষায় কথা বলেও নিজের মনোভাব প্রকাশে ব্যর্থ। সমাজে তারা নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত। সমাজে নারী পুরুষ বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। পুরুষের রক্তচক্ষু ও শক্তি চর্চার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ নারী।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালে এদেশের মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রক্ত দেন। শহীদ হন। যাদের মধ্যে নারীও সমান অংশীদার। প্রথম থেকেই ভাষা আন্দোলনে পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে নারীর অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু যুদ্ধের এত বছর পরে এসেও নারী আজ অবহেলিত। ভাষার স্বাধীনতা আছে নেই মনের স্বাধীনতা। জীবনের প্রতিটি পদে পদে তারা প্রশ্নের সম্মুখীন। অধিকারের লড়াইয়ে বার বার পরাজিত।
জীবন মানেই যুদ্ধ। আর নারী মাত্রই জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠে । সমাজে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। সমাজে নারী কেবলই অত্যাচারিত- শোষিত- নির্যাতিত। নিজের স্বাধীন দেশে বসবাস করলেও পুরুষতান্ত্রিকতা রুদ্ধ। নেই চলাফেরা কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার।
নারীরা শান্তিকামী। নারীর নিজস্ব একটা জীবন রয়েছে । রয়েছে মত প্রকাশ করার এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অধিকার। কিন্তু সেসব বাদ দিয়ে জন্মের পরই তার হাতে পায়ে সুকৌশলে পরিয়ে দেওয়া হয় লিঙ্গ বৈষম্যের কঠিন শিকল। মাপ করে দেয়া হয় চলাফেরার পথ। তার কথাবার্তা, চালচলন, আচার-আচরণে লাগাম পড়িয়ে দেয়া হয়। রাখা হয় চার দেয়ালে বন্দী।
নারীরা শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হয়েও নিজের অধিকারটুকুও আদায় করতে পারছেন না। রাস্তাঘাটে তাদেরকে নানাভাবে উত্যক্ত করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় তারা হেনস্তার স্বীকার। কালের পরিক্রমায় পৃথিবী যখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে তখনও চোখে পড়ে স্বামীদের উদার মন-মানসিকতার অভাবে নারীদের সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশিত হচ্ছে না। তারা পারছেন না নিজেদের চিন্তা-চেতনার আত্মপ্রকাশ ঘটাতে। নিজ দক্ষতায় শিক্ষিত হয়েও নারীরা তাদের আত্মমর্যাদার অভাব ব্যাপক। নিজের ভাষার জন্য, দেশের জন্য যুদ্ধ করেও নারী কি আজ মুক্ত?
আমাদের সমাজে এখনও নারী-পুরুষ অসঙ্গতি রয়ে গেছে। নারী তার নিজের ভাষায় মত প্রকাশ করলেও সে পরাধীন৷ সে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত। কিন্তু ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, পুরুষের পাশাপাশি নারীও সকল ক্ষেত্রে সমান অংশীদার। বরং কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের থেকে নারীর অগ্রযাত্রা কয়েকগুণ বেশি। স্থানভেদে এখন নারীর পদচারণ বেড়েছে। সামাজিক সকল বাধা পেরিয়ে সব ধরনের কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তারপরও যেন নারী নিরাপদ নয়।
নারীর অবদানের কথা কেউ মনে রাখতে চায় না। সহজেই ভুলে যায়৷ নারীদেরকে সবকিছুতেই অযোগ্য হিসেবে মনে করা হয়। পান থেকে চুন খসলেও দোষ নারীর ওপরই বর্তায়। প্রথমে বাবা-মায়ের কড়া শাসন এবং পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়ির। নিজের ইচ্ছাকেও নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে হয় একজন নারীকে।
মানুষ ভুলে যায়, নারী তার নিজের মালিক। জাগতে হবে আমাদের। আদায় করতে হবে সম অধিকার। জয় করতে হবে রক্তচক্ষু। নারী তার নিজের ভাষায় নিজের মত প্রকাশ করবে, এটাই স্বাভাবিক। নারী অন্যের নয় তার নিজের কর্ত্রী।