রেয়ার উইন্ডো: পর্দার অন্তরালে
মহানগরী ঢাকার কথাই যদি বলি এক ড্রয়িং রুমের জানালা খুলে দিলে আরেক ড্রয়িং রুমে কি চলছে তা হরহামেশাই দেখা যায়। ধরুন একদিন আপনি জানালার পাশে দাড়িয়ে কফি হাতে, পাশেই চলছে পুরোনো কোন সিনেমার রোমান্টিক কোনো প্রিয় গান। বাইরে হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। আপনার চোখ গেল সামনের বাসার খোলা জানালার দিকে। দেখতে পেলেন নববিবাহিত এক দম্পতি বৃষ্টি বিলাস করছে। তার ঠিক পাশের জানালায় তাকাতেই দেখলেন ধুম করে একটা খুন হয়ে গেলো। ভাবছেন এমন আবার হয় নাকি! কিন্তু চারপাশে নিত্যদিন এমন কত ঘটনাই তো ঘটছে। হয়তো আপনি তার জলজ্যান্ত সাক্ষী এখনো হননি। কিন্তু যদি হয়ে যান! কি করবেন তখন?
তখন কি মনে হবে না আপনার , যে কোনো সিনেমার দৃশ্যে আছেন? আসলেই তো সিনেমা। ১৯৫৪ সালে আলফ্রেড হিচকক পরিচালিত সিনেমা ‘রেয়ার উইন্ডো’ এক জানালা থেকে আরেক জানালার গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমা। যা বিশ্বের সেরা ১০০ টি সিনেমার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকে জেমস স্টুয়ার্ট। যিনি একটি পত্রিকার ফোটোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত থাকেন। কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়। এক্সিডেন্টে পা ভেঙে বেচারার জীবন এখন আটকে আছে বন্দী বাসার জানালার দ্বারে। একটা হুইল চেয়ারের ভরসায়। সিনেমাটিতে জেমস স্টুয়ার্টের সাথে অভিনয়ে ছিলেন গ্রেস কেলি, ওয়েন্ডেল কোরি, রেমন্ড বার, জুডিথ ইভলিনসহ অনেকেই।
সিনেমাটি মুলত একটি রহস্যময় থ্রিলার সিনেমা। প্রথম সিন থেকেই প্রত্যেকটা চরিত্রের সুন্দর উপস্থাপন হয়েছে সিনেমাতে। অসম্ভব সুন্দর সাবলীল উপস্থাপনে সিনেমাটি পায় ব্যাপক দর্শক জনপ্রিয়তা। সিনেমা মূলত জীবনের গল্প বলে৷ আর মানুষ যখন সিনেমাতে নিজের জীবনের কোনো গল্প বা ঘটনাকে খুঁজে পায় কিংবা নিজের কল্পনার কোন একটি দৃশ্য যা বহুদিন হবে হবে ভেবে আগলে রেখেছে মনের ভেতর। তখনই একটা সিনেমা মানুষের মনে স্থান করে নেয়। ‘রেয়ার উইন্ডো’ ঠিক এমনই একটি সিনেমা। যেখানে প্রতিটা জানালাতে একেকটা গল্প। যে গল্প গুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরই একেকটা খন্ড চিত্র বলা যায়।
সেই সময়ে সিনেমাটি জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি অনেক সমালোচিতও হয়েছে। যেমন অনেকের মনে হয়েছে সিনেমাতে থ্রিলারে যে দর্শকদের মধ্যে টেনশন তৈরি করা হয় সে প্রক্রিয়া অনেকটা সময়সাপেক্ষ ছিলো। কেউ কেউ সিনেমার শেষ পর্বও পছন্দ করেনি। কেউ কেউ সিনেমাটিকে ট্যাকনিক্যাল এবং স্টোরিটেলিংয়ের দিক থেকে সেরা আসনে বসালেও নিজের সবথেকে পছন্দের ক্লাসি সিনেমার তালিকায় রাখতে পারেননি। তবে গুটি কয়েক সমালোচকদের ছাপিয়ে ‘রেয়ার উইন্ডো’ হাজার হাজার দর্শকের মন কেড়েছে। সিনেমার ইতিহাসে এটি মাস্টারপিস সিনেমা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
সিনেমাটির নির্মাতা আলফ্রেড হিচকককে বলা হয় সিনেমার “মাস্টার অব সাসপেন্স”। ‘রেয়ার উইন্ডো’ও তার এমনই একটি রহস্যময় থ্রিলার সিনেমা। যেখানে একটি গল্প ভীষণ সাবলীল ধীরগতিতে এগিয়ে চলছে সাসপেন্স নিয়ে। কোনো তাড়াহুড়ো ছাড়া সিনেমার গল্প এগোতে থাকে এক জানালা থেকে আরেক জানালায় আলাদা আলাদা জীবন নিয়ে। প্রত্যেকটি জানালার গল্প ভিন্ন একেকরকম যাপিত জীবন। যেখানে জ্যোৎস্না বিলাশ করতে বারান্দায় খোলা আকাশের নিচে শুয়ে তারা গুনতে গুনতে হঠাৎ বৃষ্টি নেমে আসে। তৈরি হয় আরেকরকম উপভোগ্য জীবন। আবার এখানে একাকিত্বের ঘোর অন্ধকারও নেমে আসে ।
হুইল চেয়ারে বসে বসে জানালা দিয়ে অন্য জানালার এই জীবনগুলোর নানান চিত্র উপভোগ করেন জেমস স্টুয়ার্ট অর্থাৎ জেফ। আর তখনই ঘটে অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি। অপর পাশের একটি জানালায় উঠে আসে একটি লোকের সন্দেহজনক গতিবিধি। জেফ তার আচরণ থেকে বিশ্বাস করে নেয় লোকটি তার স্ত্রীকে খুন করেছে। স্ত্রীও বেপাত্তা। জানালায় আর তার নিত্যদিনের দেখা মেলে না। জেফ তার প্রেমিকা লিজা এবং বাসার কাজের মহিলা স্টেলার সহযোগিতায় লোকটিকে জীবিত অবস্থায়ই ধরতে চায়। জেফ নিজের লেফটেন্যান্ট বন্ধু থমাসের সহযোগিতাও নেয়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি হবে? জেফ পারবে তো লোকটিকে ধরতে? জেফের সন্দেহ সঠিক তো? নাকি খুঁজতে খুঁজতে বেরিয়ে আসবে অন্য কোনো গল্প? অন্য কোনো রহস্য?
অনন্যা / জেএজে