সদ্য মা হয়েও সফল দুই নারী উদ্যোক্তা!
গত রবিবার (২৫ জানুয়ারি) পাক্ষিক অনন্যা ও WOMEN AND E-COMMERCE FORUM – WE এর যৌথ আয়োজন "উদ্যোক্তার গল্প" অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘ইনোভ্যান্টিক ফ্যাশন’ এর শারমিন সাঈদ এবং ‘জলপরী’ র কানিজ ফাতেমা সুলতানা। এসএসবি লেদারের স্পন্সরে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন তাসনিয়া আলভী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই নতুন বছর নিয়ে কানিজ ফাতেমা সুলতানা বলেন, ২০২১ শুরুর মাত্র এক মাস হলেও অনেক কিছুই হয়ে গেছে এই সময়ে। আশা করছি সামনের দিনগুলো ভালোই যাবে। এরপর একই বিষয় নিয়ে শারমিন সাঈদ জানান, ২০২০ সাল তার জন্য খুবই ভালো গিয়েছে। ২০২০ এর মূলত জুন থেকেই তিনি তার ব্যবসাটি চালানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি আশা করেন নতুন বছরেও তার এই ব্যবসা তিনি ভালোভাবেই চালিয়ে যেতে পারবেন। তিনি আরো জানান, এখনো শেখার সময়ই চলছে তার। তাই নতুন বছরে আরো নতুন কিছু শেখার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এরপর কানিজ ফাতেমা সুলতানা তার উদ্যোগ নিয়ে কিছু কথা বলেন। মূলত ২০১৭ সালে ব্লক, বাটিকের থ্রিপিচ নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেন। এরপর ২০২০ এর জানুয়ারিতে এসে তিনি WE-তে যোগ দেন। এরপর ‘নকশিকাঁথা’ নামক সেখানকার একটি প্রোগ্রামে তার একটি ল্যাপটপ ব্যাগ দেখে শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স্যার তাকে এটি নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর থেকেই তিনি পিনোন ল্যাপটপ ব্যাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। পিনোন নিয়ে তিনি আরো অনেক কাজ করেছেন। তবে তার ব্যবসার মূল প্রোডাক্ট হল পিনোন ল্যাপটপ ব্যাগ আর পিনোন শাড়ি।
এই ব্যবসার আইডিয়া ও ব্যবসার শুরু নিয়ে তিনি তিনি কিছু কথা আমাদের সাথে শেয়ার করেন। এই ব্যবসার পূর্বে তিনি চাকরি করতেন। কিন্তু তার মেয়ে হওয়ায় তাকে দেখাশোনার জন্য তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। তখন তার স্বামী তাকে ঘরে বসে ব্যবসা করার কথা বলেন। তিনি সবসময় চাইতেন নিজের প্রোডাক্টের মাধ্যমেই নিজের এটি ব্যবসা পরিচালনা করতে। এরপর ২০১৯ এর শেষের দিকে তিনি WE-তে জয়েন করেন। সেখান থেকেই তিনি নিজের ব্যবসা করার উৎসাহ পান। এরপর থেকে তিনি নিজের কাজ শুরু করেন। শুরু থেকে তিনি কিছু সমস্যারও সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও সকল বাধা পেরিয়ে তিনি সামনের দিকে নিজের ব্যবসা নিয়ে এগিয়েই চলেছেন।
এরপর শারমিন সাঈদ তার ব্যবসা নিয়ে কিছু গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেন। ব্লক নিয়ে তিনি তার ব্যবসা প্রথমে শুরু করেছিলেন। ব্লকগুলো তিনি নিজে নিজেই করতেন। কিন্তু সন্তান ছোট হওয়ায় তিনি ব্লকের কাজ করতে পারতেন না। এছাড়াও কিছু সমস্যার কারণে তিনি কাজ করতে পারছিলেননা। এছাড়াও এরপর তিনি WE-তে জয়েন করেন। এরপর তিনি ধীরে ধীরে কাজ শিখেন ও নিজের কাজ শুরু করেন। প্রথমে তার পণ্য ছিল তাঁতের হ্যান্ডলুমের সুতির শাড়ি ও থ্রিপিচ। এরপর তিনি জামদানি, হাফ সিল্কের মসলিনের কাপড় নিয়ে বর্তমানে কাজ করছেন। মূলত তার কেন্দ্র পণ্য হল তাঁত। এটি নিয়েই তিনি কাজ করছেন। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিনি পরবর্তীতে আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেননি।
এরপর কানিজ ফাতেমা সুলতানা তার শৈশবের স্মৃতি নিয়ে কথা বলেন। ছোটবেলায় তার বাবা-মা চেয়েছিলেন তিনি যেন ডাক্তার হন। কিন্তু তার নিজস্ব বাধা-ধরা কোন লক্ষ্য ছিলোনা। এরপর তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং এ অনার্স করার পর তার ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটা ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। এরপর তিনি ব্যাংক এ জয়েন করেন। কিন্তু এরপর তার মেয়ে হওয়ায় বাসায় বসে উদ্যোক্তার পথটিই বেঁছে নিয়েছেন তিনি।
তার ব্যবসায় জীবনে যেই দুইজনের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ তারা হলেন তার ছোটবেলার বান্ধবী সেঁজুতি জান্নাত লিপি ও WE -এর রাজীব আহমেদ স্যার। সেঁজতি জান্নাত লিপি তাকে ব্যবসার কাছে অনেক সাপোর্ট করেছেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি তার পাশে রয়েছেন। এবং স্যারের কাছে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন যা তার ব্যবসায় জীবনে অনেক কাজে লেগেছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে তিনি সকলকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে ও প্রসারে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন।