পা দিয়ে যুদ্ধ বিমান চালান যে নারী!
মেয়ে হয়ে জন্মালেই যখন সমাজে অনেক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। সেখানে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়াকে একধরনের অভিশাপই বলা যায় । কিন্তু শারীরিক বিকলাঙ্গতাও দমাতে পারেনি যাকে, সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে যিনি নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। তিনি হলেন জেসিকা কক্স। তিনি বিশ্বের প্রথম পাইলট, যার হাত নেই।
১৯৮৩ সালের ২ রা ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন জেসিকা কক্স। তবে আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতো খুশির ঘনঘটা নিয়ে পৃথিবীতে আসেনি তিনি। জন্মের পর মোটামুটি সবার চোখ কপালেই তুলে দিয়েছিলো এই মেয়ে। তার জন্ম হয়েছিলো দুটো হাত ছাড়া। কিছুটা হতাশ হলেও ঘুরে দাড়িয়ে ছিল তার বাবা-মা। মেয়েকে কখনো বোঝা নয় বরং অন্য দুই সন্তানের মতো সমান গুরুত্ব ও যত্ন সহকারেই বড় করেছেন তার বাবা-মা। মেয়েকে একটি স্বাভাবিক জীবন উপহার দেয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন তারা। এমনকি কৃত্রিম হাতও লাগিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু জেসিকার তা খুব একটা পছন্দের ছিলোনা। তাই ১৪ বছর বয়সে তিনি তার কৃত্রিম হাতটি খুলে ফেলেন।
জেসিকা প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি কোন বিশেষ স্কুলে পড়াশোনা করেন নি। তিনি অন্যসব স্বাভাবিক বাচ্চাদের স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। শুধু পড়াশোনাই নয় পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মার্শাল আর্ট, সাঁতার, ট্যাপ ড্যান্স ও বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নেন।
সবটা স্বাভাবিকভাবে গুছিয়ে নিতে চাইলেও তাকে সবাই কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিতেই দেখতো যা জেসিকার একদমই পছন্দের ছিলোনা। তাকে যখন কেউ হাতবিহীন মেয়ে বলতো তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়তেন । তিনি স্বপ্ন দেখতেন হাত ছাড়াই একদিন উড়বেন এই বিশাল আকাশে। মানসিকভাবে প্রচণ্ড শক্তিশালী ছিলেন জেসিকা। তার জেদও ছিল ভয়ংকর। কেউ কটুকথা শোনালে পা ছুড়ে, চিৎকার করে প্রতিবাদ করতেন।
প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে সাফল্য ছিনিয়ে আনেন তিনি। মার্শাল আর্টে খুব ভালোভাবে নিজের প্রতিভা দেখান জেসিকা। আমেরিকার তায়কোয়ান্দো অ্যাসোসিয়েশন থেকে ব্ল্যাক বেল্ট পেয়ে গিনিস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডে নাম লেখান তিনি ।
গিনেস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডে নাম লেখানোর পর থেকে তিনি একজন আন্তর্জাতিক মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবেও পরিচিত লাভ করেন। অতঃপর ২০১২ সালে প্যাট্রিক নামে এক ভদ্রলোকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
জেসিকার ডানা মেলে আকাশে ওড়ার প্রথম যাত্রা শুরু ২০১৫ সালে। আমেরিকার রোটারি ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে রবিন স্টোড্ডার্ডের সাথে পরিচয় হয় জেসিকার। তিনি জেসিকাকে একটি প্রশ্ন করেন, যা তার জীবন বদলে দেয়। প্রশ্নটি ছিল, 'তুমি প্লেন চালাতে চাও?' পাশে থাকা জেসিকার বাবা কোন প্রশ্ন ছাড়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়েন।
জেসিকা এমন কোনো প্রশিক্ষক পাননি যিনি তাকে ধৈর্য সহকারে সময় নিয়ে শিখাবেন, তিনি নিজ শ্রম ও ধৈর্য দিয়ে শেষ করেছিলেন প্রশিক্ষণ। তিন বছর কঠোর পরিশ্রম করে নতুন ইতিহাসের সূচনা করেন এই নারী। আবারো নাম লেখান গিনেস বুক ওয়ার্ডে, প্রথম হাতবিহীন পাইলট হিসেবে। হাত না থাকার প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে পা দিয়ে যুদ্ধ বিমান চালিয়ে সফলতার উচ্চশিখরে পৌঁছেছেন এই নারী।