নারী তার নিজের মালিক!
সুজন এবং রিতু নবদম্পতি। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পরে নিজেদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় বিয়ের। পরিবারের মতেই তাদের বিয়ে। বিয়ের পর বেশকিছু দিন তাদের সাংসারিক জীবন ভালোই চলছিল। রিতু ছিল খুব মেধাবী। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই রিতুর ভালো একটা চাকরি হয়। সে আত্মনির্ভরশীল হতে চায়। সেকারণে রিতু চাকরি করতে ইচ্ছুক। কিন্তু তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও তার স্বামী ঘরের বউকে চাকরি করতে দিতে নারাজ। সংসারে শুরু হয় অশান্তি। দিন দিন রিতুর ওপর অত্যাচার নির্যাতনের পরিমাণ যেন বাড়তেই থাকে। এই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ইচ্ছার কারণে একসময় রিতুকে অকালে প্রাণ দিতে হয়।
এমন অনেক রিতু'র কাছেই আত্মনির্ভরশীল হতে চাওয়াটা অন্যায়। ফলস্বরূপ অকালে দিতে হয় জীবন। কালের পরিক্রমায় অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটলেও পরিবর্তন ঘটেনি মন-মানসিকতার। এখনো সমাজে মেয়েদের জন্য রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। আমাদের সমাজে মনে করা হয়, নারীর কোন মত প্রকাশের অধিকার নেই। তারা শুধু মেনে নিবে, মানিয়ে চলবে। আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব পুরুষের। মত প্রকাশ করবে শুধু পুরুষেরা।
নারীও একজন মানুষ। তাদেরও নিজের চিন্তা প্রকাশ করার অধিকার আছে। রয়েছে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অধিকার। কিন্তু জন্মের পরই একজন মেয়ের পায়ে শিকল পরিয়ে দেয়া হয়। চলাফেরার পথ মাপ করে দেওয়া হয়। বুঝিয়ে দেয়া হয় তারা মেয়ে, তারা পুরুষের থেকে পিছিয়ে। ইচ্ছা করলেই তারা পুরুষের মত কাজ করতে পারবে না। কর্মক্ষেত্রে যেতে পারবে না।
এরপর যখন একটা মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসে তখন সে হয় বাঁধা পরে শশুরবাড়ির লোকজনের নিকট। অধিকাংশ কাজে তাকে জবাবদিহি করতে হয়। তারা তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতাটা পাবার আগেই আবার হারিয়ে ফেলে।
কিন্তু একজন নারী সে তো নিজের মালিক। তার নিজের একটি জীবন আছে। নিজের কিছু চিন্তা ভাবনা আছে। আছে মত প্রকাশের, চলাফেরার স্বাধীনতা। কিন্তু নারীরা কখনো সেটা করতে পারে না। নিজের ইচ্ছাকেও তার সকলের সামনে ব্যাখ্যা করতে হয়। হতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার। কিন্তু ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, নারীরাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই।তারাও পুরুষের সঙ্গে সমান অংশীদার।
এভাবেই মেয়েরা নানাভাবে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছে। তারা তাদের নিজের জীবন নিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। বাল্যকাল তো বাদই, প্রাপ্তবয়স্ক হলেও তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া হয় না। শুরুতে বাবা-মায়ের কথা আর পরে শ্বশুর-শ্বশুরি, স্বামীর কথা। এখানেই কি তাহলে নারী জীবনের সমাপ্তি?
যদিও নারীরা এখন আর একেবারে আগের মতন পিছিয়ে নেই। সময়ের পরিবর্তনে আজ সর্বস্তরে নারীদেরও অগ্রযাত্রা। নারীরাও পারে। তারা যেমন নরম প্রয়োজনে তেমন কঠোরও হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে সমাজকে আরো সচেতন হতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে। রিতুর মতো হাজারো রিতুকে যেন অকালে প্রাণ দিতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুনরায় এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নারীকে তার স্বাধীনতা দিতে হবে।