সকল বাধা পেরিয়ে সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পে সুমী ও মিষ্টি!
গত রবিবার (২৫ জানুয়ারি) পাক্ষিক অনন্যা ও Women and e-Commerce forum – WE এর যৌথ আয়োজন "উদ্যোক্তার গল্প" অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুটিপোকা ও ব্যাড হ্যাবিটের সত্ত্বাধিকারী আফসানা সুমী এবং আরওয়া’র সত্ত্বাধিকারী নহরে জান্নাত মিষ্টি। সকল বাধা পেরিয়ে তাদের সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠা নিয়ে তারা গল্প করেন এই অনুষ্ঠানে। এসএসবি লেদারের স্পন্সরে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন তাসনিয়া আলভী।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে আফসানা সুমী জানান, তিনি অনেক আগে থেকেই এরকম উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি কাপড়ের কাজের মাধ্যমে বড় কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখতেন। তখনো অনলাইন ব্যবসার এতোটা প্রচলন ছিলোনা। এর অনেকদিন পর যখন ইডেন কলেজে অনার্স পড়ছিলেন তখন তিনি চার বান্ধবী নিয়ে একটি উদ্যোগ নেন। কিন্তু কিছু কারণে তারা সেটা পরে বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি চাকরিতে আসেন। তারপর ২০১৪ থেকে পার্ট টাইমের জন্য তার পুরনো শখ কাপড়ের ব্যবসার সাথে যুক্ত হন। এরপর চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফুল টাইমের জন্য তিনি তার ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বর্তমানে গুটিপোকা ও ব্যাড হ্যাবিট দুটি উদ্যোগের সাথে জড়িত আছেন। গুটিপোকা পোশাক কেন্দ্রিক, এটি পোশাকের পাশাপাশি পোশাকের সাথে অন্যান্য জিনিসগুলি যেমন: ব্যাগ, জুতা এসব পণ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে। এবং ২০১৬ সালে ব্যাড হ্যাবিট গড়ে উঠেছে গহনা নিয়ে। সব প্রোডাক্টেই হ্যান্ড পেইন্টের মাধ্যমে কাজগুলো করা হয়ে থাকে। নিজস্ব মূলধন দিয়েই তিনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
এরপর তিনি তার শৈশবের কিছু স্মৃতিচারণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি একজন আর্টিস্ট হতে চেয়েছিলেন। তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। তাই তিনি বড় হয়েও আঁকা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ছোট থেকেই তিনি জামায় ফেব্রিকের বিভিন্ন ডিজাইন আঁকতেন। পরবর্তীতে এটিই তার কাজে লেগে গেছে।
এরপর নহরে জান্নাত মিষ্টি তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেন। ২০১৮ সালে তার উদ্যোগ শুরু হয়ে ছিল টাঙ্গাইল তাঁত পণ্য নিয়ে। তিনি টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি, থ্রি পিচ, পাঞ্জাবী, ওড়না এসব পণ্য নিয়ে কাজ করেন। তিনি শুরু থেকেই তাঁত খুব পছন্দ করতেন। এরপর যখন তিনি ঘরে বসে সন্তানদের সময় দিয়েও এই তাঁত নিয়ে কাজ করতে পারবেন দেখলেন তখন তিনি তার উদ্যোগ এর কাজ শুরু করেন।
শৈশবের স্মৃতিচারণ নিয়ে তিনি বলেন, ছোটবেলায় পরিবার থেকে তেমন কড়াকড়ি না পাওয়ায় তিনি একটু ফাঁকিবাজ ছিলেন। কিন্তু তিনি আগে থেকেই একজন ভালো মানুষ হতে চেয়েছিলেন। কেবল একজনের নয় হাজার মানুষের উপকারের কারণ হতে চেয়েছিলেন তিনি। এরপর উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তিনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন। করোনার সময়েও তিনি অনেককে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি যা হতে চেয়েছিলেন তাই হতে পেরেছেন।
পণ্য ডেলিভারির ব্যাপারে তিনি কিছু সমস্যার কথা বলেন। কুরিয়ার সার্ভিসের সাথে তাদের কিছু তিক্ততার সম্পর্ক হয়েছে এই কদিনে। সাম্প্রতিক তিনি একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন। করোনার শুরুতে এদিনে ১৫ টি পার্সেল কুরিয়ার করেন তিনি। কিন্তু কুরিয়ার থেকে একটি পণ্য হারিয়ে ফেলে এবং দীর্ঘ দেড় মাস পর তিনি এই পণ্য ফেরত পান। এই দেড় মাসে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। এ বিষয়ে আফসানা সুমিও একই কথা বলেন। ঢাকায় কুরিয়ার করায় তিনি অনেক সুবিধা পেলেও ঢাকার বাইরে কুরিয়ার পাঠানের ক্ষেত্রে তাকেও মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেক সমস্যার।
এরপর অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে দুই উদ্যোক্তা নতুন উদ্যোক্তাদের কিছু টিপস দেন এবং এগিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর সবাইকে কুশল জানিয়ে শেষ হয় " উদ্যোক্তার গল্প" অনুষ্ঠান।