স্কুটির চাকায় পাহাড়ি নারীর গতি
ঘর সংসারের পাশাপাশি আধুনিক জীবনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে বান্দরবনের কর্মজীবী নারীরা সাহায্য নিচ্ছে স্কুটির। কর্মমুখী জীবনের সাথে তারাও চলছে স্কুটির গতিতে।
ঘর সংসার থেকে বেরিয়ে অনেক নারীই হয়েছে কর্মমুখী। সরকারি কিংবা বেসরকারি অফিসে কাজ করছেন অনেকেই। আবার অনেকেই নিজস্ব ব্যবসা এর কাজ করছেন। এক্ষেত্রে তাদের পাল্লা দিতে হচ্ছে সময়ের সঙ্গে। তাই স্কুটি ব্যবহার তাদের জীবনে বাড়তি গতির সঞ্চার করে সংসার জীবনের ও কর্মস্থলের মধ্যে সময়ের ভারসাম্য এনে দিয়েছে।
এরকম স্কুটির সুবিধা গ্রহণকারী একজন হলেন নিনিপ্রু মারমা। যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে আট বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। তিনিও সংসারের নানা কাজ শেষ করে অফিসে যেতে ভোগান্তির শিকার হতেন। স্কুটি কিনে তিনি কাজ অনেক সহজ করে এনেছেন। নিনিপ্রু মারমা বলেন, “এত বছর আসা-যাওয়া করেছি রিকশা দিয়ে। সকালে অনেক সময় রিকশা পেতে সমস্যা হয়; দেরি হয়ে যায়, ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারি না। এই কারণে যাতায়াতের সুবিধার জন্য একটা স্কুটি কিনেছি।”
বান্দরবন জেলা শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ে গিয়ে চাকরি করেন সরকারি কর্মজীবী নারী মাম্যায়ি মারমা। তিনি বলেন, “আমরা পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করি; অনেক সময় চার চাকা যানে সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। আবার বাস ধরার জন্য অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। কম সময়ে স্কুটি চালিয়ে গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে পারি। অফিসে আসা-যাওয়ায় প্রতিদিন ৪২ কিলোমিটার স্কুটি চালাতে হয়; আগে ক্লান্তি লাগলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে”।
এছাড়াও আরো অনেক নারীরাই সময় ম্যানেজ করতে সাহায্য নিচ্ছে স্কুটির। পাহাড়ি এলাকায় মেয়েদের জন্য স্কুটি খুবই উপযুক্ত। অনেক নারীকেই কাজের জন্য যেতে হয় অনেক দূরে ও দুর্গম এলাকায়। কিন্তু নিজস্ব স্কুটি থাকায় তাদের এ কাজ করতে এখন আর সমস্যা হয়না। স্কুটি চালানো কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শহর এলাকায় আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কিছুসংখ্যক নারী কর্মীকে স্কুটি চালাতে দেখা যেত। এখন সংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ‘সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের’ বান্দরবন জেলা সভাপতি ও নারী নেত্রী ডনাইপ্রু নেলী।
তিনি বলেন, “পাহাড়ে নারীদের স্কুটি ব্যবহার নিয়ে সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও সংখ্যা এখনও বেশি নয়। পাহাড়ের রাস্তা সমতলের মতো নয়। একটু ঝুঁকি নিতে হয়। সমাজের একজন হিসেবে নারীদের তো পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীরাই স্কুটি বাইক ব্যবহার করছেন। তবে সামর্থ্যবান নারীদের অনেকেই শখের বশেও স্কুটি চালাচ্ছেন এখন।”
এদিকে শহর এলাকায় স্কুটির সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও আলাদা করে কত সংখ্যক নিবন্ধন করা হয়েছে তা জানানোর সুযোগ নেই বলে জানান বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) জেলা মোটরযান পরিদর্শক মো. সাহাদাত হোসেন চৌধুরী। স্কুটি চালক নারীদের সহযোগিতা বান্দরবন ট্রাফিক পুলিশ। তাদের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে সেখানে।