Skip to content

৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিষণ্ণতা থেকে কোটার্ড সিনড্রোম

পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা বিষণ্ণতা। হতাশা এবং বিষণ্ণতার মধ্যকার পার্থক্য শুধুমাত্র একটি স্থানেই। যিনি বিষণ্ণ তার মনোজগতের একটি বড় অংশজুড়েই কাজ করে মৃত্যু। সেখান থেকেই আসে অসংখ্য প্রশ্ন—আমি মারা গেলে কেউ কি আমায় মনে করবে? আমার জন্যে কেউ কাঁদবে? পরিস্থিতি কেমন হবে তখন? আর এই বিষণ্ণতা থেকেই আসতে পারে কোটার্ড সিনড্রোম। হতাশা যখন বাস্তবিক জীবনের নানা আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম, বিষণ্ণতা সেখানে আরো কিছু সমস্যা ডেকে আনে। 

 

 

কোটার্ড সিনড্রোম মূলত একটি মানসিক সমস্যা। এই সমস্যায় আক্রান্ত সকলেই ভাবেন যে তিনি জীবন্মৃত। তার ধারণা, নিজের আত্মা তাকে অনেক আগেই ছেড়ে চলে গেছে। অধিকাংশ সময় এরা নিজেদের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে বসে।

 

সচরাচর কোটার্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মনে করেন পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্বের সামান্যতম মূল্য নেই। ফলে নিজেদের নিয়ে তারা বিভিন্ন রকম হতাশায় ভুগতে শুরু করেন। কোটার্ড সিনড্রোমের রোগীরা মাঝেমধ্যে ভাবে তার শরীরের কোনো অংশ আর তার শরীরে নেই। এমনকি তার মনে হতে থাকে অনেক কিছুরই অস্তিত্ব আদৌ নেই। একটি বিরল রোগ। পুরো পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ২০০ এর মতো লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। 

 

যত বিরল রোগই হোক না কেন, এই রোগের প্রতিক্রিয়াগুলো মারাত্মক। সমগ্র পৃথিবী যখন হুট করে মহামারীর জালে আটক—তখন অসংখ্য মানুষের মধ্যে একাকীত্ব আসা অস্বাভাবিক না। স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হয়ে পৃথিবীর মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতার ঢেউটুকু এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে। এই মহামারি এমনিতেই ব্যস্ত পৃথিবীকে হুট করে থামিয়ে দিয়েছে—যা ইতিহাসে বিরল। তাই সময়টাই এমন যে বিরল ঘটনাও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। 

 

কোটার্ড সিনড্রোম সর্বপ্রথম ১৯৮২ সালে ব্যাখ্যা করেন ড. জুলিয়াস কোটার্ড। তাঁর মতে, “কোটার্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি এক ধরনের ডিল্যুশনে ভুগতে শুরু করেন। নিজের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর অস্তিত্বও যে অনুভব করতে পারেনা।” ২০০৮ সালে অবশ্য কোটার্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত এক মহিলার খোঁজ পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তির পর তিনি দাবি করেন, তিনি মারা গেছেন। তার শরীর থেকে পঁচা ঘ্রাণ আসতে শুরু করেছে। 

 

কেন হয় কোটার্ড সিনড্রোম?

কোটার্ড সিনড্রোম একটি বিরল রোগ। তবে এই রোগের কিছু সহজাত কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। সবগুলোকেই পরীক্ষিত কারণ বলা সম্ভব নয়। কারণ এখনো এই রোগের রোগী পাওয়া কঠিন। 

 

• ডিমেনশিয়া বা উন্মাদনা
• এনকিফেলোপ্যাথি (এক ধরণের ভাইরাস যা মানুষের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে)
• এপিলেপসি
• মাইগ্রেন
• স্ক্লেরোসিস
• পারকিনসন রোগ
• স্ট্রোক
• মস্তিষ্কের কোনো ক্ষত বা আঘাত থেকে

 

মূলত এসকল সমস্যা যাদের হয়, তাদের মধ্যে এই রোগটা দেখা যায়। 

 

কাদের হয় এই রোগ?

আগেই বলেছি, কোটার্ড সিনড্রোম খুব কম মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। মূলত পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই এমন মানুষদের মধ্যেই এই রোগ দেখা যায়। এই রোগ হওয়ার পেছনে চারটি বড় কারণ হলো:

 

• বিষণ্ণতা
• হতাশা
• বাজে অভিজ্ঞতা
• স্কিজোফ্রেনিয়া

 

মস্তিষ্কের টিউমার, বা আঘাত থেকেও কোটার্ড সিনড্রোম হতে পারে। তবে যেমনটা বলেছিলাম, এখনো এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশ কম। কিন্তু বিষণ্ণতা এবং হতাশা এই রোগের অনেক বড় একটি কারণ। 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ