সন্তানের দাঁত নিয়ে আর নয় অবহেলা!
শিশুদের ফুটফুটে হাসিতে যেন সকল সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে। আর হাসি অনেকটা নির্ভর করে তার দাঁতের ওপরে। শিশুর সুস্থতা ও সৌন্দর্য রক্ষায় তাই দাঁতের যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরি। তাই ছোট থেকেই সন্তানের দাঁতের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে অভিভাবককে।
শিশুর জন্মের পাঁচ থেকে আট মাসের মধ্যে যে দাঁত হয় সেগুলোকে দুধদাঁত বলা হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে সময় একটু বেশিও লাগে। দাঁতের যত্ন মূলত তখন থেকেই শুরু করা উচিত। এই দাঁতগুলো আবার কয়েক বছর পরেই পড়ে যায়। অনেকেই মনে করে এগুলো তো পড়েই যাবে তাই যত্ন করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু এই ধারণাটি একদম ভুল। দুধদাঁতের যদি যত্ন না নেয়া যায় তাহলে পরবর্তী স্থায়ী দাঁত উঠার সময় অনেক সমস্যা হবে।
দুধদাঁত যদি ঠিকমতো সারিবদ্ধ না থাকে তাহলে স্থায়ী দাঁতও ঠিকমতো উঠবে না। আবার অনেক সময় ফোকলা দাঁতও দেখা যায়। আবার অনেক সময় দুধদাঁত তাড়াতাড়ি পড়ে যায় কিন্তু অন্যদিকে নতুন দাঁত গজাতে অনেক সময় নেয়। তাই এই সমস্যাগুলো এড়াতে দুধদাঁত থেকেই দাঁতের যত্ন শুরু করতে হবে।
শিশুর আশেপাশের জিনিস পরিষ্কার রাখুন
নতুন দাঁত গজানোর সময় অনেক শিশু কিছু অস্বস্তি অনুভব করে। মাড়ি কিড়মিড় করে। হাতের কাছে যা পায় তাই কামড় দেয়ার চেষ্টা করে। তাই এ সময় শিশুর আশেপাশের জিনিস, খেলনা পরিষ্কার রাখতে হবে। এসব জিনিস প্রতিদিন ডেটল বা অন্য জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
ধারালো কোনো অস্ত্র বা অন্য কিছু শিশুর হাতের নাগালে একদমই রাখা যাবেনা। সবচেয়ে ভালো হয় এসময় কিছু ফল কেটে তাদের হাতে দিলে। এতে করে তাদের কামড় দেয়াও হবে, সাথে ফল খাওয়াও হবে। দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার খাওয়া শুরু করার পর দাঁতের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
খাওয়ার পর দাঁত ও মাড়ি হালকা ভাবে মুছে দিন
শিশুকে অন্য খাবার খাওয়ানো শুরু করলে ল্যাকটোজ, গ্লুকোজ ও অন্যান্য পলিস্যাকারাইয দীর্ঘ সময় ধরে দাঁতের সংস্পর্শে থাকে। মুখের এই এই খাবারগুলো পরিষ্কার করা না হলে ক্যালসিয়ামের সাথে স্যালাইভা মিশে মিনারেল, ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসে খাবারের ফার্মেন্টেশন হয়। এতে ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয় এবং এটি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে। এর ফলে দাঁতের ক্যারিজ বা ক্ষয়ের শুরু হয়। তাই দুধদাঁত হওয়ার পর থেকে খাওয়ানোর পর আঙুল বা পাতলা কাপড় দিয়ে শিশুর দাঁত ও মাড়ি হালকা ভাবে মুছে দিতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে তা অবশ্যই করতে হবে।
বোতল ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন
শিশুদের বোতলে দুধ না খাওয়ানোই ভালো। বোতলে দুধ খাওয়ালে দাঁতের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তাই চকলেট, চুইংগাম, ক্যান্ডি এসব খাবার পরিহার করা উচিত। এসব খেলেও সাথে সাথে পানি দিয়ে মুখ কুলকুচা করে নিতে হবে।
নিয়মিত দাঁত ব্রাশের অভ্যাস করান
ছয় থেকে আট বছরের মধ্যে দুধদাঁত পড়ে যায় এবং নতুন স্থায়ী দাঁত হয়। শিশুদের অবশ্যই নিয়মিত দাঁত ব্রাশের অভ্যাস করতে হবে। ছোট থেকেই যদি পিতা-মাতা সন্তানকে নিয়ে দিনে দুবার ব্রাশ করে তাহলে পরবর্তী সময়েও এই অভ্যাস থেকে যাবে। তাই অভিভাবককে এই দিকে নজর দিতে হবে।
ব্রাশ করার সময় ভিতরের দাঁতগুলোও যেন ভালোভাবে পরিষ্কার করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই নরম ব্রাশ দিতে হবে এবং তিন মাস পর পর তা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। দাঁত নড়ে গেলে টেনে না তুলে দন্ত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। দাঁতে ব্যথা, মাড়ি ব্যথা, কালো দাগ, মুখে গন্ধ ইত্যাদি সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
দাঁতের সুস্থ গঠনে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। ফলমূল, শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এতে দাঁত মজবুত হবে। দাঁত আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। মূলত শৈশব থেকেই দাঁতের যত্ন না নিলে পরবর্তী সময়ে অনেক সমস্যা দেখা দিবে। তাই অভিভাবককে উপর্যুক্ত দিকগুলোয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই সন্তানের দাঁত সুস্থ থাকবে।