Skip to content

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উৎসব আয়োজন কিংবা ছুটির দিনে, ঐতিহ্য যখন খাবারে

ভোজন রসিক আর বাঙালী, দুটো শব্দকে যদি একে অপরের সমর্থক অর্থে ব্যবহার করা হয়, তবে খুব বেশি ভুল হবেনা। বাঙালীর বৈশিষ্ট্য বলতে ভোজন রসিক শব্দটাই প্রথম কাতারের দিকে থাকে। 

খাবার দাবার নিয়ে বাঙালী বরাবরই বিলাসী। আর তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই বাঙালীর খাবারের আয়োজনও বেশ জমকালো। মিষ্টি থেকে শুরু করে পিঠেপুলি, মেজবানি মাংস, বিরিয়ানি, কোরমা, বোরহানি, দই কিংবা নারকেলের নাড়ু বা সন্দেশ সবেতেই বাঙালী যেমন আভিজাত্য প্রকাশ তেমনি সেসব খাবার স্বাদেও অনন্য। আর এমন সব ভোজনবিলাসী আর অনন্য   একেকটি খাবারের জন্য রয়েছে একেকটি  জেলা শহর কিংবা বিভাগের খ্যাতি। ঐতিহ্যবাহী খাবারের কথা এলেই প্রথমে চোখে ভেসে উঠে চট্টগ্রাম, ঢাকা কিংবা ভিন্ন স্বাদের পাহাড়ি কোন অঞ্চলের জনপ্রিয় সব খাবারের চিত্র। চলুন তবে জেনে নিই এমন কিছু অঞ্চলের জনপ্রিয় সব খাবারের সম্পর্কে। 

 

চট্টগ্রাম

 

চট্টগ্রামের বিখ্যাত খাবারের তালিকায় প্রথমেই আসে মেজবানি মাংস এবং শুঁটকি। বলা হয়ে থাকে চট্টগ্রাম মানে মেজবান, আর মেজবান মানেই চট্টগ্রাম। নানা রকম মশলা মিশিয়ে বাহারি স্বাদে রান্না করা হয় মেজবানি মাংস। যেকোনো আচার অনুষ্ঠান কিংবা উৎসবে চট্টগ্রামে মেজবানি খাবারের জুরি নেই।

 

উৎসব আয়োজন কিংবা ছুটির দিনে, ঐতিহ্য যখন খাবারে

এরপর আসি চট্টগ্রামের শুঁটকি। সমুদ্র উপকূলীয় শহর হওয়ায় এখানে রয়েছে নানান রকমের সামুদ্রিক মাছের শুঁটকির সহজলভ্যতা। আর চট্টগ্রামের মানুষ সেসব শুঁটকি দিয়েই তৈরি করেন কয়েক রকমের খাবার। যেমন হরেক রকম শুঁটকি ভর্তা, শুঁটকি চড়চড়ি ইত্যাদি। এসব খাবার দেখতে যেমন মশলাপাতির রঙে দারুণ লোভনীয় হয়ে উঠে স্বাদেও তেমন বাহারি যা ভোজন রসিক বাঙালিকে দেয় মন ভরানো তৃপ্তি। সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা মানুষেরা যে সমস্ত খাবারের শুধুমাত্র স্বাদ নিয়েই ক্ষান্ত থাকেন তা নয়, তারা সব হরেক রকমের শুঁটকি সংগ্রহ করেও নিয়ে যান। 

 

ঢাকা

ঢাকা শহরে বিদেশী থেকে শুরু করে বাঙালী, আঞ্চলিক সবরকম খাবারের সমাহার থাকলেও এই শহরের নিজস্ব কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবারও রয়েছে। সেসব খাবারের ও রয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। এসব খাবারের মধ্যে পুরান ঢাকার বাকরখানী, কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানী, বিভিন্ন ধরণের কাবাব, কোফতা, কালিয়া, বেশ জনপ্রিয়তার সাথে বহুবছর ধরে নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

 
এই সমস্ত খাবার মোঘল আমলের হলেও যুগযুগ ধরে চলে আসায় এগুলো এখন আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিরই অংশ হয়ে গেছে। 
যেমন বাকরখানীর উৎপত্তিস্থল মূলত আফগানিস্তানে। এর আবার জোবান, শুকি, নিমশুকি নামে তিনধরনের প্রচলনও রয়েছে। 

 

উৎসব আয়োজন কিংবা ছুটির দিনে, ঐতিহ্য যখন খাবারে

 

এরপর আসে বিরিয়ানি, ঢাকা শহরে যেকোনো উৎসব মানেই এই মোঘলাই খাবারটির উপস্থিতির চাহিদা সকলের। শুধুমাত্র উৎসবই নয় বরং ঢাকায় সবসময়ের ব্যাপক চাহিদার খাদ্যদ্রব্যটিই হচ্ছে বিরিয়ানি। সারা ঢাকা শহরে বিরিয়ানির দোকানের অভাব না থাকলেও পুরান ঢাকার বিরিয়ানি মানে আয়োজন করে খেতে বসার মত। তাইতো সারাদিনই দোকানগুলোতে থাকে বিরিয়ানি প্রিয় বাঙালীর উপচে পড়া ভীড়।

 

রাঙ্গামাটি

নামটি শুনলেই কেমন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি চোখে ভেসে উঠে। এই জেলা শহরটি মূলত পর্যটন এলাকা হিসেবে স্বীকৃত হলেও এই অঞ্চলের ব্যাম্বো চিকেন, পাঁচন, বিন্নি, কঁচি বাঁশের ভর্তা ইত্যাদির মত ঐতিহ্যবাহী খাবার।

তবে ঘুরতে আসা ভ্রমণ প্রিয় মানুষর কাছে পাহাড়ের ব্যাম্বো চিকেন বেশ জনপ্রিয়। বাঁশের মধ্যে প্রস্তুতকৃত চিকেনকে আগুনে পুড়িয়ে রান্না হয় যা আগ্রহীরা ভাত কিংবা রুটির সাথে খেয়ে থাকেন। এছাড়াও রাঙামাটির পাঁচন একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা বৈসাবি উৎসবে এই পাঁচনের আয়োজন করেন। ৪১ বা ৫১ অথবা ১০১ টি পদের  সমন্বয়ে রান্না হয় এই পাঁচন যা অনেক রোগ নিরাময়েও কাজ করে। 

 

উৎসব আয়োজন কিংবা ছুটির দিনে, ঐতিহ্য যখন খাবারে

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরেই কিছু না কিছু খাবার বিখ্যাত। বাঙালীরা  সেসমস্ত খাবারকে করে তুলেছে ঐতিহ্য পূর্ণ। কথায় আছে পৃথিবীতে এক দল মানুষ বাঁচার জন্য খাবার খান আর একদল খাবারের জন্য বাঁচেন। ভোজনরসিক বাঙালী জাতি বাঁচার জন্য খাবার কিংবা খাবারের জন্য বাঁচা নয় বরং বিভিন্ন অঞ্চলের জনপ্রিয় সমস্ত খাবারকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্যের সাথে।

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ