Skip to content

৬০০০ বছরের পুরনো বিস্ময়কর প্রেম, ‘লাভার্স অফ ভলদারো’!

৬০০০ বছরের পুরনো বিস্ময়কর প্রেম, ‘লাভার্স অফ ভলদারো’!

'সখী ভালোবাসা কারে কয়? ' 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যার ঝুলিতে রয়েছে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কত সৃষ্টি। কিন্তু তিনিই আবার অকপটে সখীকে জিজ্ঞেস করেছেন 'সখী ভালোবাসা কারে কয়? ' পৃথিবীতে ভালোবাসা, ভালোবাসার সংজ্ঞা নিয়ে রয়েছে নান দ্বিধা দ্বন্দ্ব। 

 

ভালোবাসা ছোট্ট একটি শব্দ হলেও পৃথিবীর সকল ইতিহাসের পাতায় রয়েছে ভালোবাসার ছোয়া। ভালোবাসার সংজ্ঞা বিশাল এবং পরিধি বিস্তৃত, সীমাহীন। লায়লা-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট, হীর-রঞ্জা; যুগে যুগে ভালোবাসা দিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছেন কত যুগল। পৃথিবীকে দেখিয়েছেন ভালোবাসা অমর। এমনকি ৬০০০ বছরের পুরনো ভালোবাসাও প্রমাণ করে দিয়েছে মৃত্যু হয় শরীরের, ভালোবাসার না। 

 

প্রায় ৬০০০ বছর মাটির নিচে একসাথে ঘুমিয়েছেন দুজনে। অনেকটা নিশ্চিন্তে অনায়াসে কাটিয়ে দিয়েছেন এতগুলো বছর কারণ ভালোবাসার মানুষটি যে তাকে আলিঙ্গন করে আছে প্রতিমুহূর্তে। তবে আর কিসের চিন্তা, কিসের ভয়।  হ্যাঁ, এরা কেউ জীবিত নন। রক্ত মাংস সবই মিশে গিয়েছে মাটির সঙ্গে।  পড়ে আছে শুধুই জরাজীর্ণ হাড়। বিশ্বের কাছে তারা পরিচিত 'লাভার্স অফ ভলদারো' নামে। 

 

২০০৭ সালে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক উত্তর ইটালির সানজর্জিওর মানতুয়া শহরের ভালদারো গ্রামে খননকাজ করতে গিয়ে  মাটির তলা থেকে  দুটি কঙ্কালকে উদ্ধার করেন।  সমস্তকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, ওই কঙ্কালদু’টি ৫০০০-৪০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের। অর্থাৎ প্রায় ৬০০০ বছরের পুরনো এই কঙ্কালদু’টি। তাঁরা জানিয়েছেন, এইভাবেই হয়ত তাঁদের দু’জনকে কবর দেওয়া হয়েছিল। কিংবা তাঁরা এভাবেই মাটির তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন।

 

গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া যায়, কঙ্কাল দুটি একটি নারীর এবং অন্যটি পুরুষের। মৃত্যুর সময় এই যুগলের বয়স ১৮ ও ২০ এর বেশী ছিল না। উচ্চতা ছিল ৫ ফিট ২ ইঞ্চির কাছাকাছি। মৃত্যুর পরেও এদের দু’জনকে কেউ আলাদা করতে পারেনি।  এ সময় কঙ্কাল দুইটির সাথে ওই সময়ের একটি ছুরি পাওয়া যায়। এ থেকে  সকলে অনুমান করেন যে এই তরুণ-তরুণীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাদের হত্যা করার কোন লক্ষণ গবেষকেরা পাননি। এতোগুলো বছর পর কোনো লক্ষ্মণ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। 

 

যে জায়গায় কঙ্কাল দুটিকে পাওয়া গিয়েছিল তার বর্তমান মালিক সেখানে বাড়ী করার চিন্তা করার কারণে কঙ্কাল দুটিকে স্থানান্তর করার প্রয়োজন পড়ে। এখন মান্তুয়ার ন্যাশনাল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়ামে কঙ্কাল দুইটি সম্পূর্ণ অক্ষত রেখেই সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে এই প্রেমিক যুগলের নতুন ঠিকানা ইতালির মান্তুয়ার ন্যাশনাল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম। কঙ্কাল দুটিকে প্রকাশ্যে আনা হয় ২০১১ সালে। 

 

হয়োতো বা এই যুগল  ভালোবাসার শুরুতে একে অপরের হাতে হাত রেখে বলেছিল যত বাঁধাই আসুক কখনো হাত ছেড়ে যাবো না৷ তাই হয়তোবা মৃত্যু নামক বাঁধাও তাদের আলাদা করতে পারেনি।  জন্মজন্মাতর ধরে জড়িয়ে আছেন একে অপরকে। এই যুগলের সাথে ৬০০০ বছর পূর্বে কি ঘটেছিলো, কেন একে অপরকে আকরে ধরতে হয়েছিলো শেষ মুহুর্তেও তা হয়তোবা কখনো জানা সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের আকরে ধরা কঙ্কালই বারংবার বিশ্বকে মনে করিয়ে দিতে যথেষ্ট  ভালোবাসার মৃত্যু হয় না,  ভালোবাসা অমর।