চাকরী পেতে নিজের পরিচিতি বাড়ান
একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে প্রথমে পরিকল্পনা করতে হবে। ছোটবেলা থেকে সবাই স্বপ্ন দেখে ভাল কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করার। এই স্বপ্নকে পূরণ করতে সবাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা করে। স্বপ্নের চাকুরীটা পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু কয়জন পারে স্বপ্নের চাকুরিটা পেয়ে সফল হতে? এর একটিমাত্র কারণ হল পরিকল্পনার অভাব। আমার মতে, পরিকল্পনা অবশ্যই দৈনিক ভিত্তিতেই করা উচিত, সেক্ষেত্রে এটা বিবেচ্য বিষয় নয় “আপনি কোথায় এবং কি পজিশনে কাজ করছেন।“
সফল ক্যারিয়ার গঠনের আগে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে মূল্যায়ন করা এবং সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা; "জীবনে আপনার লক্ষ্য কী?" বা “আপনি কোন ক্যারিয়ারের পথ বেছে নিতে চান?” আপনার লক্ষ্যের প্রতি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ আপনার জীবনকে সব ধাপে আরও উন্নত করে তুলবে। যা আপনাকে অভয়ারণ্য ও বিজয়ের অনুভূতি দিবে।
নিম্নের কৌশলগুলো আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতি এবং সফল হতে যথেষ্ট উৎসাহ দিবে-
১। আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস: সর্বপ্রথম আপনার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হল আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস। আপনি যেই কাজটি করছেন, যদি এমন হয় যে নিজেই বুঝতে পারছেন না আপনার দ্বারা কাজটি হবে কিনা, তাহলে সেই কাজটি করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে। আর যদি বিশ্বাস করেন যে আপনি অবশ্যই পারবেন, আপনাকে পারতেই হবে, তাহলে একই কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। এজন্য নিজেকে বিশ্বাস করতে শিখুন।
২। আপনার লক্ষ্য জানুন: "আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য কি?" আপনার যাত্রা শুরুর আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করা এটি একটি জরুরী প্রশ্ন। আপনার অবশ্যই জীবনের লক্ষ্যটি জেনে রাখা উচিত। আজকের দিনে অনেকেই কেবল বর্তমান যে পেশাটা খুব চলছে সেদিকে ঝুঁকছে। তারা তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করে না; এমনকি তারা যা করছে তাও তারা পছন্দ করছে না । অতএব, চূড়ান্ত লক্ষ্য স্থির করে সেই অনুযায়ী কাজ করুন।
৩। পেশাদার জীবনবৃত্তান্ত (Resume) তৈরি করুন: আপনার জীবনবৃত্তান্ত আপনার প্রতিনিধি হিসাবে কথা বলবে। এটি মূলত আপনার প্রতিনিধিত্ব করবে এইভাবে “আপনি কে, আপনি কী করেছেন এবং আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা দরকারী হতে পারেন” ইত্যাদি। এজন্য আপনার একটি পেশাদার এবং সুন্দর জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করা উচিত। এখন অনলাইন ভিত্তিক সিভি তৈরি করার প্লাটফর্ম আছে যা আপনাকে ক্লাসিক বা চিত্তাকর্ষক ভিজ্যুয়াল জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে। অথবা অভিজ্ঞ, সফল ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তৈরি করতে পারেন আপনার জীবনবৃত্তান্ত।
৪। আপনার দক্ষতার উন্নয়ন করুন: এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ প্রার্থীদের সন্ধান করে তাদেরই নিয়োগ প্রদান করছে। সুতরাং ভালো ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্ত দক্ষতা বিষয়টি একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া এবং একটি দক্ষতা, অন্য আরেকটি দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। আপনি শুধু একটি বা দুইটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে সাফল্য লাভ করবেন, এটা মনে করা ঠিক না। সাফল্য লাভ করার জন্য যত বেশী দক্ষতা অর্জন করা যায় ততই একটি সুন্দর ও সফল ক্যারিয়ার এর দিকে আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন।
৫। ব্যক্তিত্ব নিরুপন করুন: কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে ব্যক্তিত্ব নিরুপন করার দায়িত্ব আপনারই। ব্যক্তিত্ব নিরুপন করার জন্য আপনি নৈব্যক্তিক প্রশ্ন তৈরি করে নিতে পারেন, অথবা কারো তৈরি করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে নিজেকে যাচাই করে নিতে পারেন। মায়ারস ব্রিগস টাইপ ইন্ডকেটর (এমবিটিআই) নামের পরীক্ষা দিয়ে বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিগত দৃঢ়তা নিরুপন করতে পারেন।
৬। নেটওয়ার্ক বাড়াতে থাকুন: নেটওয়ার্কিং হল সমস্ত সুযোগ এবং সংযোগ স্থাপনের কৌশল। আপনি যখন নতুন লোকের সাথে দেখা করেন, আপনি মূলত তাদের দক্ষতা আপনার সুবিধার্থে ব্যবহার করার সুযোগ পান। অবশ্য আপনাকেও কিছু দিতে হয় যেমন: আপনার পরিষেবাগুলি, আপনার জ্ঞান, আপনার অর্থ। সফল ব্যক্তিরা সর্বদা তাদের কর্মক্ষেত্রে নতুন নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং সারা জীবনের জন্য লাভজনক সম্পর্ক তৈরি করে। লিংকডইন, টুইটার এবং ফেসবুকে সামাজিক মিডিয়া প্রোফাইল তৈরি করে শুরু করুন। এ ধরণের কার্যকলাপের জন্য এই তিনটি নেটওয়ার্ক অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এখানে আপনার তথ্য সর্বাক্ষনিক আপডেট যেন থাকে।
৭। নিজের পরিচিতি বাড়ান: ব্র্যান্ডিং আজকাল খুব গুরুত্বপূর্ণ। বড় বড় সংস্থাগুলি বাজারে নিজেকে সু-প্রতিষ্ঠিত করতে কয়েকশো কোটি টাকা ব্যয় করছে। এটি প্রায় প্রতিটি পেশাদার সংস্থার দ্বারা ব্যবহৃত একটি পুরানো ব্যবসায়িক কৌশল। আপনার ব্র্যান্ডিং হল মার্কেটপ্লেসে আপনার অবস্থান। পেশাদার কর্মীদের তাদের নাম এবং পরিষেবাগুলি ব্র্যান্ডিং করা উচিত এবং ক্রমাগত এটি উন্নত করা উচিত। আপনি ব্লগ শুরু করে, একটি পেশাদার সামাজিক মিডিয়া প্রোফাইল তৈরি করে বা কেবল দুর্দান্ত সেবা সরবরাহের মাধ্যমে এটি করতে পারেন।
৮। আপনার জীবনের জন্য সম্পূর্ণ দায়িত্ব অনুমান করুন: সাধারণ এবং সফল পেশাদারদের মধ্যে একটি পার্থক্য হল: দায়িত্ব। যদিও আপনি ধারণাটি জানেন তবে আপনি এটি প্রতিদিন প্রয়োগ করতে পারেন না। যখনই কোনও খারাপ ঘটনা ঘটে তখন আপনি নিজেকে এর সাথে মানিয়ে নেন। আপনার সমস্ত কাজের জন্য দায় গ্রহণ শুরু করুন এবং কখনও আপনার ভুলের জন্য অন্য কাউকে দোষ দেবেন না। এটি এমন একটি খারাপ অভ্যাস যা আপনার সকল ভালো কাজগুলোকে আড়াল করে দেয়।
৯। প্রতিশ্রুতিশীল ও সাহসী হোন: কাজ যত কঠিন ই হোক না কেন তা সমাধান করার জন্য নিজে প্রতিশ্রুতিশীল হোন এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সাহসিকতার সাথে অগ্রসর হোন।
১০। সর্বদা ইতিবাচক থাকুন: পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সর্বদা ইতিবাচক থাকুন এবং আপনার সময় আসার জন্য অপেক্ষা করুন এবং যখন এটি আসবে সাথে সাথে তাকে গ্রহন করুন। তাহলেই কেবল আপনি সফল হতে পারবেন।
একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে সময়, প্রচেষ্টা এবং ধৈর্য প্রয়োজন। অতএব, সময় নিন এবং আপনার ক্যারিয়ার স্থির করুন। সত্যি বলতে এটা তেমন কঠিন কাজ নয়। আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে কেবল সাহস এবং প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন।
লিখেছেন-
ইসমত আরা কবির
প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিঃ