ঘরে বসেই তৈরি করে ফেলুন ফেস-প্যাক
এমন পরিস্থিতিতে তাহলে কি করবেন? নিজের সৌন্দর্যকে ধরে রাখার চেষ্টা ছেড়ে, ত্বকের পরিচর্যা বন্ধ করে দেবেন? কি উপায় এখন? এমনটা ভাবতেই তো মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তবে হ্যাঁ, উপায় অবশ্যই আছে, ঘরে বসেই হাতের কাছের উপাদান দিয়ে খুব সহজে তৈরি করা যায় নানাবিধ ফেস-প্যাক। যা ত্বকের সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে হতে পারে দারুণ উপযোগী। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক, বেশ কিছু ঘরোয়া ফেস-প্যাক সম্পর্কে।
চন্দনের প্যাক
– চন্দন দিয়ে বেশ কয়েকটি প্যাক তৈরি করা যায় ,যার একেকটির একেক কার্যক্ষমতা। চন্দনের সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে দেওয়া যায়। এই প্যাকটি ত্বকের কালচে দাগ ও ট্যান দূর করতে সাহায্য করে।
– আবার চন্দনের সাথে গোলাপজল মিশিয়ে প্রতিদিন অন্তত একবার করে ব্যাবহার করলে মুখের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
– মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চন্দনের আরও একটি কার্যকরী ফেস-প্যাক হচ্ছে চন্দন, হলুদ ও টক দই বা দুধ। এই তিনটি উপাদান মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে তা নিয়মিত ব্যবহারে পেতে পারেন সুন্দর উজ্জ্বল ত্বক।
–এছাড়া যাদের ব্রণ – ফুসকুড়ির মত সমস্যা আছে তারা ব্যবহার করতে পারেন চন্দন ও নিমের পেস্ট। সমপরিমাণ চন্দন ও নিম পাতা বাটা বা গুড়ো পানি দিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
মুলতানি মাটির প্যাক
– মুলতানি মাটির সাথে এক চামচ হলুদ গুড়ো লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে তিন দিন এই পেস্ট টি ব্যবহারে দারুণ ফল পাওয়া যাবে।
– গোলাপজল দিয়ে মুলতানি মাটির পেস্ট সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহারে করতে পারেন। এতে ত্বক মসৃণ ও তেলহীন হয়।
– ত্বকের মসৃণতা ও কোমলতা বজায় রাখতে মুলতানি মাটির সাথে বাদামের গুড়ো ও কাঁচা দুধের পেস্টও ব্যবহার করতে পারেন।
টক দইয়ের প্যাক
টক দই ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী একটি উপাদান। টক দইয়ের তৈরি প্যাক মুখের ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এছাড়াও লোমকূপ গুলো ছোট করে। টক দইয়ের সাথে লেবুর রস, মধু এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি যারা পার্লারে গিয়ে ফেস স্পা করিয়ে থাকেন তাদের জন্য বিকল্প উপায় হিসেবে কাজ করবে।
মধুর প্যাক
ত্বকের কোমলতা ধরে রাখতে মধু দারুণ কাজ করে। মধুর কয়েক রকমের প্যাক আছে যেগুলোর একেকটি রয়েছে একেক রকম গুণ।
– মধুর সাথে পাকা কলা ব্লেন্ড করে ব্যবহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা ও কোমলতা বজায় থাকে।
– যাদের শুষ্ক ত্বক তারা মধু ও দুধের সর দিয়ে তৈরি মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। এটি শীতকালের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি প্যাক। কারণ, শীতকালে প্রায় সবারই ত্বক কম বেশি শুষ্ক হয়ে যায়।
– অনেকের মুখে আবার অতিরিক্ত শাল ব্রণ হয়। এক্ষেত্রে মধুর সাথে চিনি এবং লেবুর রস মিশিয়ে তুলার সাহায্য মেসেজ করলে শাল ব্রণ দূর হয়।
– মুখের মৃত কোষ তুলে ফেলতে মধুর সাথে জলপাই এর তেল মিশিয়ে ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
আলু, শসা ও টমেটোর প্যাক
নানাবিধ কারণে অনেকে ঘুমের সমস্যা হয়। যার ফলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়। কালো দাগ দূর করার জন্য আলু, শসা এবং টমেটো আলাদা আলাদা করে ব্লেন্ড করে চোখের কালো দাগের উপর প্রলেপের মত নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।
বেসনের প্যাক
– বেসনের সাথে কেশর জলের সাহায্যে মিশিয়ে ব্যাবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি ত্বক কে ভেতর থেকে হাইড্রেট করে, উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
– একটি গোটা পাকা টমেটো ব্লেন্ড করে সাথে দুই টেবিল চামচ বেসন মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ত্বকে পিএইচ-এর মাত্রা ঠিক থাকে এবং বলিরেখা কমে যায়।
– বেসনের সাথে ডিমের সাদা অংশ ও খানিকটা মধু মিশ্রিত করে ব্যবহার করা যায়। এই প্যাকটি মুখের অবাঞ্ছিত লোম, কালচে ভাব ও দাগ দূর করে।
– পাকা পেঁপে ব্লেন্ড করে তার সাথে বেসন যোগ করে মিশ্রণ করে সেটি ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, সানবার্ন ও চোখের কালো দাগ দূর করে।
ডালের প্যাক
ডালের ক্ষেত্রে মসুর ডাল রূপচর্চার সবথেকে সহজলভ্য ও উপকারী উপাদান। মসুর ডাল দিয়ে তৈরি করা যায় বেশ কয়েকটি ফেস প্যাক।
– মসুর ডালকে ৭/৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তার ঘন পেস্ট তৈরি করে সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের পুষ্টি সরবরাহ হয়, তৈলাক্ত ভাব দূর হয়, ব্রণের সমস্যা প্রতিরোধ হয়।
– শুষ্ক ত্বকের জন্য মসুর ডালের সাথে নারকেল তেল, দুধ ও হলুদ গুড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
– অনুজ্জ্বল ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে মসুর ডালের সাথে সমপরিমাণ শুকনো কমলা লেবুর খোসা গুড়ো তৈরি করে দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
যেকোনো ফেস-প্যাক ব্যাবহারের আগে অবশ্যই ভালোভাবে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। নিয়মিত এসব ঘরোয়া ফেস-প্যাক ব্যবহারে নিজের সৌন্দর্যকে ধরে রাখা যায়।