Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একজন মানব সম্পদ কর্মকর্তার চোখে আপনার ক্যারিয়ার

ক্যারিয়ার নির্বাচন আপনার ক্যারিয়ার প্রস্তুতির প্রথম ধাপ। যথেষ্ট মেধা এবং দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে এখনকার তরুনতরণীদের অনেকের ক্যারিয়ার হয় অন্ধকারচ্ছন্ন। আমাদের অনেকের মতেই স্মার্ট ক্যারিয়ার মানেই চাকুরি। এর বাইরে যে সম্মানজনক আরও অনেক ক্যারিয়ার আছে, তা আমরা জানিই না। সবার কথা শুনে যখন একটা ক্যারিয়ার পথ বেছে নেই, দেখা যায় সে কাজ করতে গিয়ে তা আর ভালো লাগছে না, ক্যারিয়ার হয়ে পড়েছে বোঝা। সমস্যাগুলোর সমাধান একভাবেই করা যায়শুরুতেই নিজের ক্যারিয়ার নির্বাচনে সচেতন হওয়া, সে হিসেবে নিজেকে তৈরি করা।

নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে খুব যথাযথ একটি ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে পারবেন।

১। স্বীয় প্রতিভা এবং দক্ষতা শনাক্তকরন: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকে নিজের মেধা এবং দক্ষতা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভোগে। বস্তুত নিজের উপর যথেষ্ট আস্থার অভাবে ধরনের দ্বিধাদ্বন্দের সৃষ্টি। থেকে উত্তরনের জন্য প্রয়োজন আত্মপর্যালোচনা (Self-evaluation) এবং তার উপর ভিত্তি করে নিজের অবস্থান নির্ধারন করা, নিজের দক্ষতা এবং পারদর্শীতা শনাক্ত করা। স্বীয় মেধা, দক্ষতা এবং পারদর্শীতার উপর ভিত্তি করে সর্বপ্রথম প্রয়োজন নিজস্ব ক্যারিয়ার গঠনের এক বা একাধিক পথ আবিষ্কার করা। এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠনের সম্ভাবনাময় পেশা সম্পর্কে থাকতে হবে সুষ্পষ্ট ধারনা। পরিপূর্ণ ধারনা লাভে প্রয়োজনে ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ কিংবা বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে। নিজের আকাঙ্খা নয়, আগ্রহের উপর গুরুত্ব দেওয়াটাও অত্যন্ত জরুরী।

২। লক্ষ্য উদ্দেশ্য প্রণয়ন: নিজের অবস্থান নির্ধারন এবং ক্যারিয়ার গঠনের একাধিক পথ উদ্ভাবন করার পর, একজনের পরবর্তী কাজ হল জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য প্রনয়ন করা। যেমন একজন লোকের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহ এবং কিছুটা পারদর্শীতা আছে। পর্যায়ে তাকে নির্ধারন করতে হবে সে প্রোগ্রামার হবে, প্রকৌশলী হবে, না অন্য কিছু। যত ছোট ক্ষেত্রই হোক না কেন, তাকে তুচ্ছজ্ঞান না করে বরং সে ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ হওয়ার উদ্দেশ্য থাকাটা তোষামোদযোগ্য। সেই সাথে ব্যক্তিকেন্দ্রিক লক্ষ্যউদ্দেশ্যের পাশাপাশি সমাজ এবং জনসাধারনের জন্য কিছু করারও একটা উদ্দেশ্য থাকা চাই। সর্বোপরি থাকা চাই শিক্ষা এবং পেশাগত জীবনসহ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নৈতিকতা ধরে রাখার অদম্য স্পৃহা যা নিশ্চিতভাবেই একটি সুন্দর চরিত্র এবং জীবন গঠনের মূল প্রতিপাদ্য।

৩। ক্যারিয়ার সেক্টর সম্পর্কে ধারণা নিন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার এসব ছাড়াও ইদানীং কিছু ক্যারিয়ার পথ তৈরি হয়েছে, যাতে অনেকেই সফল হচ্ছে। যেমন ফটোগ্রাফি, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মেকআপ আর্টিস্ট, স্টাইলিস্ট, ক্যারিয়ার গ্রুমিং, কর্পোরেট ট্রেইনার, পাবলিক স্পিকার, ফ্যাশন ডিজাইনিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ফিল্ম মেকিং, ব্লগিং ইত্যাদি। এসব বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার খুব একটা সুযোগ বাংলাদেশে নেই, তবে এসব বিষয়ে তাত্ত্বিক শিক্ষার চেয়েও ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিকালি শেখার প্রয়োজন খুব বেশি হয়। এগুলো বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠছে দিন দিন।

৪। কী ভালো লাগে: ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার পর কাজ ভালো লাগে না রোগে ভুগতে না চাইলে প্রথমেই ভাবা উচিত কী কাজ ভালো লাগে। ভাবুন কী এমন কাজ যা করতে ভালো লাগে, যা করতে গিয়ে মনে হয় না কাজ করছেন। এবং দেখুন সে কাজটা আসলে সিরিয়াস ক্যারিয়ার হিসেবে করা যায় কিনা, বা এটা প্রচলিত কিনা। ধরুন আপনি আঁকতে পছন্দ করেন। খুব ভাল আঁকেন। তাহলে আপনার জন্য ফ্যাশন ডিজাইনিং বা অন্যান্য ডিজাইনিং এর ক্যারিয়ার ভাল হবে। আবার ধরুন আপনি লেখালেখি ভালবাসেন, তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য লেখালেখি করতে হয় এমন কাজ যেমন সংবাদপত্রে চাকরি ভাল হবে। ভুলেও অপছন্দের কোন কাজকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেবেন না, তাহলে ক্যারিয়ার বোঝা হয়ে যাবে। 

৫। স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন: পরিকল্পনা হতে হবে সুনর্দিষ্ট, যথাযথ এবং অর্থবোধক; ক্যারিয়ার গঠনের পথ পরিক্রমার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ধাপে অন্তর্ভুক্ত থাকবে কি করতে চাই, কিভাবে করতে চাই, কখন করতে চাই, আগামী পাঁচ বছর বা দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই ইত্যাদি। পরিকল্পনা গ্রহনের প্রাক্কালে যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন সেগুলো হল নিজের অবস্থান, নিজের বা পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থান, পারিবারিক প্রয়োজন এবং সমস্যা ইত্যাদি। পরিকল্পনা গ্রহনের সময় তাড়াহুড়ো করা একেবারেই অগ্রহনযোগ্য। বরং ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় মনোভাব পোষন সাফল্য লাভে অধিকতর কার্যকর হতে পারে। 

৬। মেন্টর নির্বাচণ করুন: ভালো এবং অভিজ্ঞ মেন্টর বাছাই করা জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মেন্টর এমন একজনকে বানান যিনি আপনার পছন্দের ফিল্ডগুলোতে সফল একজন মানুষ। এবং অবশ্যই অন্যান্য ফিল্ডগুলো সম্পর্কেও ধারণা রাখে। যদি এমন কাউকে মেন্টর বানান যে শুধু একটা ফিল্ডই চেনে, তাহলে তিনি শুধু ফিল্ডের গুণগান করে যাবেন। মেন্টরের সাথে কথা বলেই আপনার ক্যারিয়ার প্ল্যান তৈরি করুন।

 

শেষে বলবো, পেশায় উন্নতি করতে হলে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা, মনযোগ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা।

লিখেছেন-

ইসমত আরা কবির

প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিঃ

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ