ইনোলা হোমস – এক স্বতন্ত্র নারী গোয়েন্দার গল্প
গুরুতর সাহিত্যরসিকরাও হয়তো ন্যান্সি স্প্রিঙ্গারের নাম শোনেননি। ন্যান্সি স্প্রিঙ্গার একজন ফ্যান্টাসি লেখক হিসেবে সুপরিচিত। তারই রচিত এক কাল্পনিক চরিত্র ইনোলা হোমস। এমনিতে মূল লেখক আর্থার সি ডয়েলের সাথে ইনোলার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও শার্লক হোমসের সাথে রয়েছে রক্তের সম্পর্ক। মানে শার্লক হোমসের আপন বোন এই ইনোলা হোমস। সে কথাই বা আমরা কিভাবে জানতে পারতাম? যদি না নেটফ্লিক্সে কদিন আগেই ইনোলা হোমসের উপর নির্মিত একটি ট্রেইলার দেখা না যেতো? ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তির পরই মুভিটি দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে দেয়। আইএমডিবিতে আপাতত মুভিটির রেটিং ৭ দশমিক ১।
ডিরেক্টর হ্যারি ব্র্যাডবিয়ার অবশ্য একটু রসিকতাই যেন করতে চেয়েছেন। “Mystery runs in the family” দিয়ে সম্ভবত এটাই বোঝাতে চেয়েছেন ইনোলাও হোমসের চেয়ে কম নয়। আর তার প্রতিদান তিনি চমৎকার ডিরেকশনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। মূল চরিত্র হিসেবে পুরো গল্পটাকে একাই নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে ব্রাউনকে। সংলাপ, ক্যামেরার কাজ, অভিনয়, কস্টিউম – সবকিছুতেই রয়ে গেছে ভিক্টোরিয়ান যুগের ছোঁয়া।
ন্যান্সি স্প্রিঙ্গারের ছোট একটি সিরিজ অবলম্বনে নির্মিত " ইনোলা হোমস" নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে বেশিদিন হয়নি। শার্লক হোমসের বোনের বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা নিতেই যেন বুক বেঁধে বসে আছেন হাজারো ভক্ত। তবে, এখানে শার্লক হোমসের তেমন একটা কিছু খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
পাওয়া যাবে ভিক্টোরিয়ান যুগের ইংল্যান্ডকে। আর পাওয়া যাবে ইনোলা হোমসকে। ইনোলা একদিন জানতে পারে তার মা হ্যালেন বোনহ্যাম কার্টার হারিয়ে গেছেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল হোমস্কুল শিক্ষক কার্টার অন্য বাবা মায়ের মতো না। তার আকস্মিক অন্তর্ধান ইনোলা ঠিক মেনে নিতে পারেনা। কোথায় হারিয়েছে, কিভাবে হারিয়েছে তা জানা যাচ্ছেনা। ইনোলা এই আকস্মিক ঘটনায় অবাক হলেও তার দুই ভাই আপাতত বোনকে নিয়ে চিন্তিত। ইনোলার লেখাপড়ার ব্যবস্থার চিন্তা করলেও ইনোলা কোনোমতে দুই ভাইকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে চলে আসে লন্ডনে। আর তখনই আমরা আবিষ্কার করি আরেক ক্ষুরধার গোয়েন্দাকে। ইনোলা হোমস। না, ঠিক শার্লক হোমস না। নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে ইনোলা নিজ ভাইয়ের সাথেই সমানে সমান টেক্কা দিতে পারে। মুভিতে ইনোলার ভাই মানে শার্লক হোমসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন হেনরি কেভিল। তিনি রেডিয়ো টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, “ইনোলা হোমস বুদ্ধিমত্তায় তার ভাইকেও টেক্কা দিতে পারে। তবে বোনের সামনে শার্লককে কিছুটা নমনীয় চরিত্র হিসেবেই দেখা যাবে।”
শার্লক হোমসকে নিয়ে এর আগেও বহু ফ্যান ফিকশন নির্মিত হয়েছে। তবে এই প্রথম আমরা হোমসের পারিবারিক জীবনের সামান্য চিত্র পাই। তবে হ্যা, অবশ্যই মূল লেখকের সাথে এর কোনো সম্পর্কই নেই। কিন্তু সেটাই বা ক্ষতির কি? অন্তত হোমসের বোনকে নিয়ে গড়ে ওঠা সিরিজটিকে নিয়ে সমালোচকরা ইতিবাচক মন্তব্যই করেছেন। আসলে গল্পটা খুব সাধারণ, কিন্তু এর উপস্থাপনা এবং অভিনয়–কৌশল যে কাউকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। মূলত মিলি ব্রাউনের সফল অভিনয় ক্যারিয়ারের মধ্যে এটি আরেকটি মাইলফলক হয়ে উঠবে বলেই সমালোচকদের বিশ্বাস।
তবে গল্পটি যে শুধুমাত্র ইনোলার মাকে খোঁজা নিয়েই কিংবা সামান্য রহস্য সমাধানের গল্প নিয়ে তা কিন্তু নয়। সম্ভবত দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেয়ার জন্যেই যেন এক পলাতক লর্ড লুই প্যাট্রিজের সাথে দেখা হয় ইনোলার। সম্ভবত দর্শকরা কোনো সাদামাটা গল্প আশা করলেও চমকটা অনাকাঙ্ক্ষিত বলেই মনে হতে পারে।
সিনেমাটোগ্রাফির গিলস নাটজেনকে বেশ কষ্টই করতে হয়েছে। ভিক্টোরিয়ান যুগের কান্ট্রিসাইডের মনোরম দৃশ্য আর ইনোলার পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে তাল মিলিয়েই মুভিটি এগিয়ে গেছে। ফলে দুই ঘণ্টার মুভিটিকে একটুও বেশি লম্বা মনে হয়নি। শেষের দিকে অবশ্য ঘটনা কিছুটা নৃশংসতার দিকে মোড় নেয়। সেটা হয়তো অনেকের কাছে শার্লক হোমসের মত অ্যাডভেঞ্চারাস নাও মনে হতে পারে অনেক দর্শকের।
ইনোলা হোমস শুধুমাত্র শার্লক হোমসের বোন বলেই জনপ্রিয় একথা ভাবা ঠিক হবে না। গোয়েন্দা জগতে মিস মারপলের মতো আরও বিখ্যাত গোয়েন্দা থাকলেও, ইনোলা হোমসই সর্বপ্রথম নারীবাদী ভাব–ভঙ্গিমা তুলে ধরেছে বলে অনেক সমালোচকের দাবি। তাই শুধু ইনোলাকে শার্লক হোমসের বোন ভেবে থাকলে ভুল করা হবে। কারণ ইনোলা হোমস একজন স্বতন্ত্র নারী গোয়েন্দা, যার গল্প যে কাউকে মুগ্ধ করবে। অন্তত মুভির শেষটা এমনই দাবি করে – গোয়েন্দা জগতে এবার হয়তো আরও শক্তিশালী চরিত্র ফিরে এসেছে।