গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের যত্নে
অনাগত শিশুকে সুন্দর এই পৃথিবীতে আনতে নির্দিষ্ট একটি সময় জুড়ে গর্ভে ধারণ করতে হয় প্রত্যেক মাকে। গর্ভধারণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাবে কখনো দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিকতা। আর সেটাই হয়ে উঠতে পারে মা ও সন্তানের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। তবে প্রশ্ন হচ্ছে গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের যত্নের কতটুকুই বা জানি আমরা। চলুন তবে জেনে আসা যাক গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের যত্নে করনীয় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য,
খাদ্যের সচেতনতা
এ সময়ে এমন কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবেনা যা গর্ভের শিশুর ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই এমন ধরনের খাবার গ্রহণ করতে হবে যা মা ও সন্তানের পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এ সময় মাকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। আঁশ জাতীয় খাবার, মাছ–মাংস, ফলমূল ও শাক–সবজি খেতে হবে। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে আনারস খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। কাচা ডিমের তৈরি খাবার এবং কাঁচা ও আধপাকা পেঁপে এড়িয়ে চলাই উত্তম। খাদ্যতালিকায় সামুদ্রিক মাছ না রাখার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম
হালকা ব্যায়াম করতে হবে কোনো ভারী কাজ করা যাবে না। ঘরের মেঝেতে পা মুড়ে বসুন এবং হতের তালু সামনে নিয়ে বুকের কাছে রাখুন৷ খুবই মনোযোগ দিয়ে আস্তে আস্তে গভীরভাবে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন এবং পেটে থেকে নিঃশ্বাস ছাড়ুন আর ভাবুন – ‘‘এই নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমার সন্তানের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে৷’’ ব্যায়াম কোনো গ্রুপের সাথে করতে পারলে আরও ভালো লাগবে৷
মানসিক প্রশান্তি
গর্ভবতী মায়ের মানসিক সুস্থতা সার্বিকভাবে নিশ্চিত করা প্রয়োজন।গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমন পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে তাঁদের অনেকেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে৷ আর এ কথাটি স্বামীসহ পরিবারের সকলকেই মনে রাখতে হবে৷ তাঁকে খুশি রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও ধ্যান ও যোগাসনের কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। এগুলি সবচেয়ে তীব্র চাপযুক্ত পরিস্থিতিতেও চাপ কমায় বলে প্রমাণিত হয়েছে।
পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান
গর্ভাবস্থায় মহিলারা প্রায়শই ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, তাই সন্তোষজনক পরিমাণ পানি পান বজায় রাখুন। একজন সুস্থ গর্ভবতীর দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত৷ এতে শরীরটা সারা দিন ঝরঝরে লাগবে এবং রক্ত ঘনও হয়ে যাবে না৷ শুধু তাই নয় পাশাপাশি মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকিও কয়েকগুণ হ্রাস পাবে।
চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা করাতে হবে। গর্ভকালীন ১৬ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের অন্তত একবার অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড প্রভৃতি পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব উপাদানসমৃদ্ধ ওষুধ সেবন করতে হবে। সময়মতো টিটেনাসের টিকা নিতে হবে। গর্ভকালীন জটিলতা ছাড়াও অন্যান্য সমস্যা, যেমন কাশি, জন্ডিস, ডায়াবেটিস প্রভৃতির চিকিৎসায় অবহেলা করা যাবে না। নিরাপদ প্রসব সম্পর্কে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন।
বিপদচিহ্ন
গর্ভবতী মায়ের কিছু শারীরিক অবস্থা যা স্বাভাবিক নয়, যেটা গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোকে সাধারণত গর্ভবতী মায়ের বিপদসংকেত বলা হয়। গর্ভকালীন কিছু বিপদচিহ্ন সম্পর্কে হবু মা এবং তাঁর বাড়ির লোকদের জেনে রাখা প্রয়োজন। যেমন,
প্রসব–পূর্ব রক্তস্রাব ও পানি ভেঙে যাওয়া।
খিঁচুনি, চোখে ঝাপসা দেখা, তীব্র মাথাব্যথা।
গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া হ্রাস বা একেবারেই থেমে যাওয়া।
শুয়ে থাকা অবস্থাতেও পায়ে জমা পানি না কমা।
অতিরিক্ত রক্তচাপ থাকা।
মারাত্মক রক্তস্বল্পতা ও শারীরিক দুর্বলতা।
এগুলোর যেকোনোটি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ভ্রমণ বিষয়ক সতর্কতা
ভ্রমণ করার সময় বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস খুবই সাবধানে থাকতে হবে। এই সময় দূরে কোথাও ভ্রমণ করা ঠিক নয়। পেটে চাপ লাগতে পারে, এমন কোনো কাজই এ সময় করা যাবে না।
নারী–জীবনের এক রোমাঞ্চকর অধ্যায় তার গর্ভধারণের দশ মাস। একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানের পূর্বশর্ত গর্ভাবস্থায় মায়ের সঠিক পরিচর্যা। সেজন্য পরিবারের উচিত গর্ভবতী মায়ের সঠিক যত্ন ও পুষ্টি সাধনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া এবং প্রয়োজনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া। তবেই তো নিশ্চিত হবে অনাগত শিশুর এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।