সেজে নিন চটজলদি
কোথাও যাওয়ার সময় একটুও সাজেনা এমন নারী হয়তো পাওয়াই যাবেনা। বাইরে যেতে হলে পোশাক থেকে শুরু করে মেকআপ পর্যন্ত সব দিকেই নজর দিতে হয়। কিন্তু নিজেকে পরিপূর্ণ ও সুন্দর করে সাজাতে একটু সময় তো অবশ্যই প্রয়োজন। অনেকে তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগিয়ে দেন সাজতে। কিন্তু এতো সময় কোথায়। সবক্ষেত্রে সাজার জন্য হাতে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়না। বিশেষ করে চাকরিজীবী নারী ও শিক্ষার্থীদের সাজতে গেলে সময়–স্বল্পতার মুখোমুখি হতে হয়। গৃহিণীদেরও অনেক সময় একই অবস্থা দেখা হয়। পরিবারের সকল কাজ করে তারপর সাজগোজে হাত দিতে হয় তাকে। ফলে অল্প সময়েই সারতে হয় এই সাজগোজের কাজটা। আবার অনেকে আছেন যারা বেশি সময় ধরে সাজগোজ করতে চাননা। যতটা পারা যায় ততটা শর্টকাটে শেষ করতে চান এই সাজার কাজ।
সময়–স্বল্পতা হোক আর অলসতা হোক সময়ের মধ্যে তাই সাজগোজটা জরুরি। চটজলদি সেজে নিতে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা:
সাজার ক্ষেত্রে প্রথমেই যেই কাজটি জরুরি তা হলো মুখমণ্ডল ও গলা ফেসওয়াস/সাবান বা ক্লিনজার দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করা। সাজ হালকা হোক বা ভারী মুখে ময়লা থাকলে মেকআপ বসতে চায়না। আর ত্বকও চিটচিটে হয়ে আসে। তাই প্রথমেই মুখ ও গলা পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হয়।
প্রাইমার/ময়েশ্চারাইজার:
মুখ ভালো করে ধুয়ে নেয়ার পর বেজ এর জন্য প্রথমে মুখে প্রাইমার লাগিয়ে নিতে হয়। প্রাইমার মুখে মেকআপ বসতে সাহায্য করে। প্রাইমারের পরিবর্তে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। অয়েলি স্কিনের জন্য প্রাইমার বা ময়েশ্চারাইজার আবশ্যক।
কনসিলার ও ফাউন্ডেশন:
মুখে কোনো কালো দাগ থাকলে সেখানে কনসিলার ব্যবহার করা হয়। কনসিলার মুখের কোনো দাগ, চোখের নিচের কালো দাগ ঢাকতে সাহায্য করে। কনসিলার দিয়ে ভালো করে দাগগুলো কভার করতে হয়। এরপর আসি ফাউন্ডেশনে। ফাউন্ডেশন সবসময় স্কিন টোনের সাথে মিল রেখে ব্যবহার করতে হয়। বেশি ফর্সা হলে একটু লাইট ফাউন্ডেশন আবার শ্যামলা হলে একটু ডার্ক ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা উচিত। এভাবে স্কিন টোন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন সিলেক্ট করতে হয়। তাড়াহুড়ো থাকলে পাফ বা তুলি দিয়ে হালকা করে ফাউন্ডেশন দিলে বেজটা ভালো হয়।
ফেস পাউডার:
ফডাউন্ডেশন দেয়া হলে এরপর ফেসপাউডার, লুস পাউডার কম্প্যাক্ট পাউডার দেয়া হয়। এগুলো বেজের ফিনিসিং দিতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে অয়েলি স্কিনের জন্য ফেস পাউডার ও ড্রাই স্কিনের জন্য কম্প্যাক্ট পাউডার ব্যবহার করা ভালো। ফেস পাউডার বা কম্প্যাক্ট পাউডারও স্কিন টোন অনুযায়ী সিলেক্ট করা উচিত।
চোখের সাজ:
যদি তাড়া বেশি থাকে তাহলে আইলাইনার বা আইস্যাডো দুটোর একটা ব্যবহার করা যেতে পারে। পোশাকের রঙের সাথে ম্যাচ করে স্যাডো দিলে সুন্দর লাগে। সাথে অন্য ম্যাট রঙ যুক্ত করলে তো কথাই নেই। আর আইলাইনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কালোসহ যেকোনো রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে। পোশাকের সাথে মিলিয়েও আইলাইনার দেয়া যেতে পারে। একটু টেনে কালো আইলাইনার দিলে চোখ সুন্দর ও মায়াবী লাগে। আবার একটু মোটা করে আইলাইনার দিলেও বেশ ভালো লাগে। আইলাইনার বা আইস্যাডোর পরে চোখে মাসকারা দিলে সুন্দর লাগে।
ঠোঁটের সাজ:
মেকাপের পরে ঠোঁটে লিপস্টিক না দিলে সাজটা যেন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। মেকাপের পর ম্যাট লিপস্টিক দিলে ভালো লাগে। হালকা সাজ হলে গোলাপি বা লাল লিপস্টিক দেয়া যেতে পারে। আবার ডার্ক কালার যেমন কফি, মেরুন, ব্রাউন দিলেও বেশ সুন্দর লাগে। শীতকালে ম্যাট লিপস্টিক বেশি ব্যবহারে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে লিপস্টিক দেয়ার পূর্বে ভ্যাসলিন বা লিপবাম দিলে ঠোঁট শুষ্ক হয়না।
চুলের সাজ:
চুলের বিভিন্ন সাজ রয়েছে। একাধিক স্টাইলে চুল সাজিয়ে নিজেকে সাজানো যায়। কিন্তু সময় স্বল্পতার জন্য খোঁপা বা অন্য কোনো ভারি সাজে চুল সাজানো না গেলে হালকা সাজের মাধ্যমেও সৌন্দর্যবর্ধন করা যায়। এক্ষেত্রে মাঝখানে বা কিনারে সিথী করে চুল ছেড়ে দিলে ভালো লাগে। গরম খুব বেশী থাকলে সামনে একটু ফুলিয়ে ঝুটি করলেও সুন্দর লাগে। আবার চুলে বেণীও করা যেতে পারে।
টিপ:
টিপ মুখের সৌন্দর্য অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় কেবল টিপ আর কাজল সাজকে পরিপূর্ণ করে তোলে। তবে টিপ মুখের সাথে মানিয়ে দেয়াই ভালো।
হাইলাইটার, কন্ট্যুর, ব্রোঞ্জারঃ এগুলো একেবারেই অপশনাল। তাড়াহুড়ো থাকলে এগুলো না দিলেও চলবে। তবে রাতে কোনো পার্টিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করা ভালো। এগুলো মুখের আকার ও বিভিন্ন অংশ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে। পাশাপাশি ভালো পারফিউম বা বডি স্প্রে নিজেকে সুরভিত করে তোলে।
এভাবেই অল্প সময়ের মধ্যেই সেজে নিতে পারেন বর্ণিলরূপে। আবার অনেক সময় একই দিনে অধিক জায়গায় যেতে হয়। ইভেন্ট অনুযায়ী সাজেও ভিন্নতা আনা জরুরি। কিন্তু দ্রুততার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সেক্ষেত্রে হ্যান্ডব্যাগে কিছু প্রসাধনী যেমন: লিপস্টিক, চিরুনি, ফেস পাউডার, আইলাইনার রাখা যায়। পরে সময়মতো ইভেন্ট অনুযায়ী নিজেকে সাজানো যায়।