“শেকল ভাঙার পদযাত্রা”
ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ১২ দফা দাবি নিয়ে মধ্যরাতে ঢাকার রাজপথে মশাল হাতে পদযাত্রায় নামল একদল নারী। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে শাহবাগ থেকে ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’র ব্যানারে এই আলোর মিছিলে অংশ নেন শতাধিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী। মশাল হাতে শাহবাগ থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মানিক মিয়া এভিনিউতে পদযাত্রাটি শেষ হয়।
পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী তামান্না মিম বলেন, ‘দেশের ঘুমন্ত বিচার ব্যবস্থাকে জাগাতে আমাদের এই পদযাত্রা। শেকল ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমাদের এই পদযাত্রা। রাতের আঁধারে আমরা হাঁটব, গলা উঁচিয়ে প্রতিবাদ করব, রাতের অন্ধকার ভেদ করে সবাইকে জানিয়ে দেব আমাদের দাবির কথা।”
নারী মুক্তি ও দেশের বিচার ব্যবস্থাকে কার্যকর করে তোলা, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে, স্বাভাবিক মানুষের মতো নারীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকারের দাবিসহ মোট ১২টি দাবি নিয়ে এ পদযাত্রা। দাবিগুলো হলো,
১। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনে ও সামাজিকভাবে ধর্ষণের সংজ্ঞায়ন সংস্কার করতে হবে।
২। পাহাড় ও সমতলের সব নারীর উপর সামরিক ও বেসামরিক সব প্রকার যৌন এবং সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
৩। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বয়স-লৈঙ্গিক পরিচয় নির্বিশেষে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে যেকোনোভাবেই 'ভিক্টিম ব্লেমিং' (দোষারোপ করা বা নিন্দা জানানো) বন্ধ করতে হবে। গ্রামীণ সালিশ/পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৪। প্রাথমিক থেকেই পাঠ্যপুস্তকে যৌন শিক্ষা (গুড টাচ ব্যাড টাচের শিক্ষা, সম্মতি বা কন্সেন্ট এর গুরুত্ব, প্রাইভেট পার্টস সম্পর্কে অবহিত করা) যুক্ত করতে হবে।
৫। ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারা বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে।
৬। হাই কোর্টের নির্দেশানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর ও পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
মধ্যরাতে নারীদের ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’
৭। সিডও সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে।
৮। মাদ্রাসার শিশুসহ সব শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কোন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হলে ৯০ দিনের মাঝে দ্রুততম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা।
৯। জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকে নারী অবমাননাকর বার্তা প্রকাশ ও প্রচার করা নিষিদ্ধ করতে হবে।
১০। রাস্তাঘাটে নারীদের অযথা পুলিশি ও অন্যান্য হয়রানি বন্ধ করতে হবে। গণপরিবহনে নারীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে।
১১। ধর্মীয় বক্তব্যের নামে অনলাইনে ও অফলাইনে নারী অবমাননাকর বক্তব্য প্রচার বন্ধ করতে হবে।
১২। যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে প্রান্তিক অঞ্চলের নারীদের সুবিধার্থে হটলাইনের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
ফটোগ্রাফার- জীবন আহমেদ