তিন পর্ব
ক’দিন ধরেই দেখছি ছেলেটা আমাকে ফলো করছে। দেখে গুণ্ডাপাণ্ডা টাইপ মনে হচ্ছে না। বেশ ছিমছাম ভদ্র চেহারা। কিন্তু পিছে পিছে আছেই, বেশ দূরত্ব রেখে চলে অবশ্য। সাব্বিরকে বলে একটা ধোলাই দিলে কেমন হয়? পিয়া ঝট করে পিছন ফিরল সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটা ল্যাম্পপোস্টের আড়ালে চলে গেল। ভালো … মনে হচ্ছে ধোলাই লাগবে। পিয়া ফোন বের করে ফোন দিল।
– হ্যালো সাব্বির একটু আসতে পারবি?
– কোথায়?
– আমি টিএসসির উল্টো দিকের চায়ের দোকানে
– আসছি। কোন প্রবলেম?
– হ্যাঁ ছোট্ট একটা প্রবলেম।
– মামা একটা চা দেন। পিয়া একটা চা নিয়ে এদিক ওদিক তাকালো নিশ্চয়ই ছেলেটা এখনো আছে। তার ষষ্ট ইন্দ্রিয় তাই বলছে … নিশ্চয়ই আছে। এবং তখনই দেখল ছেলেটা এখন সোহরোয়ার্দী উদ্যানের একটা গাছের আড়ালে। পিয়া না দেখার ভান করে চা খেতে লাগল। সাব্বির আসুক এই যন্ত্রণা আজকেই শেষ করতে হবে। পিয়ার মনে হচ্ছে, সেই সপ্তাহ খানেক আগে যোজন আর্ট গ্যালারীতে ছেলেটাকে প্রথম দেখেছিল। তারপর থেকে ছিনে জোকের মত লেগেই আছে লেগেই আছে। আরও কিছুক্ষণ থাকো বাছাধন …সাব্বির আসুক।
তখনই সাব্বির এল। লাল বাইকটাকে সাইড করে পিয়ার সামনে দাঁড়ালো
– কি সমস্যা?
– মনে হচ্ছে রোমিও সমস্যা
– মানে ? আমার ধান খেতে মই দেয় কোন শালা?
– দেখ সাব্বির তোর এই উপমা গুলো আমার অসহ্য লাগে। এটা যে একটা অশ্লীল কথার মত শোনাল তা বুঝিস?
– আচ্ছা সর্যি সর্যি কি হয়েছে বল
– এখন বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না তুই চলে যা
– না না প্লিজ বল
মেয়েটা একটুক্ষণ গুম মেরে বসে থেকে বলল
– একটা ছেলে গত এক সপ্তাহ ধরে আমাকে ফলো করছে।
– বলিস কি? কই ? কোন হারামজাদা?
– আহ আস্তে। এদিক ওদিক তাকাস না যা বলি শোন
– বল
– ঐ যে গত সপ্তাহে আমি আর তুই যোজন গ্যালারীতে গেলাম মনে আছে
– হু
– ঐদিন ছেলেটাকে গ্যালারীতে দেখেছিলাম। তারপর থেকেই সে আছে।
– আচ্ছা? এতদূর? এখনো আছে?
– আছে
– কোন জায়গাটায় বল
– তোর পিছনে যে সোহরোয়ার্দী উদ্যানের গেটের কাছে যে লাল গাড়িটা তার পিছনে একটা গাছ । গাছটার আড়ালে ঘাপটি মেরে আছে। পিছনে তাকাস না, তাকালে বুঝে যাবে।
– হুম। ঠিক আছে তুই এখানে বসে আরেক কাপ চা খা আমি ব্যবস্থা করছি
– শোন মারধোর করবি না কিন্তু
– সেটা আমি বুঝবো ।
– না প্লিজ
সাব্বির হোন্ডায় স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। তার প্ল্যান ঘুরে পিছন দিয়ে গিয়ে ছেলেটাকে ধরতে হবে । যেন সন্দেহ না করে।
দ্বিতীয় পর্ব: ছেলেটা
এমন না যে আমি আর্ট-কালচারের বিশেষ বোদ্ধা। আমি আসলে জীবনে কোন আর্ট গ্যালারীতেই ঢুকিনি কখনো। নিষিকে দেখে ওর পিছে পিছে ঢুকে ছিলাম আর্ট গ্যালারীতে। এটা যে নিষি আমি ওভার সিওর। হ্যাঁ অবশ্যই নিষিই।
আমি আসলে আর্ট গ্যালারীটার পাশেই একটা টং এর দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। রোজার সময় কাজেই টং এর দোকানটা সবুজ রংয়ের একটা কাপড় দিয়ে ঢাকা। তার ভিতর মানুষজন ভুস ভুস করে সিগারেট খাচ্ছে আর চা খাচ্ছে। এই সময় আরেকটা ছেলের সাথে নিষি ঢুকে। মাথা ভর্তি কোঁকড়া চুল। কোঁকড়া চুল আর ডান ভ্রুর উপরের তিলটা দেখেই বুঝেছি এটা নিষি না হয়েই যায় না। আমি শুনছিলাম ওর সঙ্গের ছেলেটা বলল
– চা খাবিতো?
– খাবো। বলে নিষি একটা সিগারেট বের করে ফস করে ধরিয়ে টানতে লাগলো খুবই আশ্চর্য হলাম আমি, নিষি সিগারেট খায়! আমার মনে হচ্ছিল এখনই হয়ত টং এর ভিতরে কেউ কিছু একটা বলে বসবে নিষিকে। কিন্তু নিষি আর ছেলেটার মধ্যে এমন কিছু একটা ছিল যে কেউ কিছু বলার সাহসই পেল না। এবং তারা দুজন এত জোরে জোরে কথা বলছিল যে সব কথা সবাই শুনতে পাচ্ছিল।
– মঈনুর কাজটা দেখেছিলি?
– কোন মঈনু সেকেন্ড ইয়ারের?
– আরে না ফাইনাল ইয়ারের
– ও বুজেছি। ফালতু , ওটা কোনো ওয়াশই হয় নি। ওকে আমি বড় ব্রাশ ইউস করতে বলেছিলাম।
– ব্যাপারটাতো ব্রাশের না
– তা হলে কিসের…?
তাদের কথা বার্তায় বোঝা যাচ্ছিল তারা দুজনেই আর্টিস্ট। হয়ত আর্ট কলেজে পরে। আমি মন্ত্র মুগ্ধের মত মেয়েটাকে মানে নিষিকে দেখছিলাম। একবার মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিলাম। তবে নিষি কি বুঝেছে আমি ওকে হা করে দেখছিলাম তখন। চা সিগারেট শেষ করে ওরা বেড়িয়ে গেল। আমার আরেকটা সিগারেট খাওয়ার প্লান ছিল। কিন্তু আমিও ওদের পেছন পেছন বেরুলাম।
ওরা একটা আর্ট গ্যালারীতে ঢুকলে। আমিও ঢুকলাম ওদের কাছা কাছি দাড়িয়ে এমন ভাব করলাম যেন আমি ছবির মহা বোদ্ধা। ওরা যেখানে দাড়ায় আমি ঠিক তার উল্টা দিকে দাড়াই তাতে করে যেটা হয় আমার ছবির গ্লাসে ওদের দেখা যায়, নিষিকে দেখা যায়। আচ্ছা ছেলেটা কি নিষির প্রেমিক? ছেলেটা কিন্তু মেয়েটাকে ডাকছে পিয়া বলে। নিষির নাম তাহলে এখন পিয়া?
আজ সপ্তম দিন । আমি পিয়াকে মানে নিষিকে ফলো করেই চলেছি। আমার মনে হয় ওকে বলার সময় হয়েছে। বলা উচিৎ । নিষি কি টের পেয়েছে আমি ওকে ফলো করছি কদিন ধরে? মনে হয় না। নিষির কাছে একটু আগে ঐ ছেলেটা এল সেদিন গ্যালারীতে যে ছেলেটা ছিল । কিছুক্ষণ কথা বলে ছেলেটা চলে গেল। নিষি এখন চা খাচ্ছে। এটা তার দ্বিতীয় কাপ চা। আমিও একটা সিগারেট ধরাই। আমার মনে হচ্ছে আজই নিষিকে বলি… সিগারেটটা শেষ করে …এখনই।
পর্ব তিন: পরিশিষ্ট
– যা এখন বাড়ি যা, শালা আর ঝামেলা করবে না
– কি করেছিস ওকে তোরা?
– নির্ঘাত এখন মেডিক্যালের ইমার্জেন্সিতে
– মানে? মেরেছিস ?
– বাহ মারব না? শালা ধোলাই খেয়ে কি বলে জানিস ? তুই নাকি ওর বোন মায়ের পেটের বোন তোর নাম নিষি একাত্তরে তুই হারিয়ে গিয়েছিলি … হা হা হা
– তাই বলল?
– হ্যাঁ। মাথাটা ঘুরে উঠল নিষির। সে সাব্বিরকে খামছে ধরে নিজেকে সামলালো।
– কি হল?
– সাব্বির?
– কি হল তোর??
– ছেলেটার কাছে আমাকে নিয়ে চল এখুনি… প্রায় ফুঁপিয়ে উঠে নিষি।
– মানে?
– প্লিজ আমাকে নিয়ে চল … ও যা বলেছে সব সত্যি …!