গাড়ির যন্ত্রাংশ দিয়েই ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে আফগান মেয়েরা
২০১৭ সাল, আমেরিকায় অনুষ্ঠিত একটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিশেষ পুরস্কার জিতে নেয় একদল আফগান কিশোরী। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের সব রকম বাস্তবতা আর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সেদিন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তারা। মাত্র দুই বছর পর আবার নিজেদের কাজে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিল এই দেশের নারীরা। করোনা মোকাবেলায় ভেন্টিলেটর থাকা কিংবা তৈরির ব্যাপারে বিশ্ব যখন নাজেহাল হয়ে পড়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে দেশকে ভেন্টিলেটর বানিয়ে উপহার দিয়েছে আফগানিস্তানের এই মেয়েরা।
ভেন্টিলেটর তৈরি করা দলটির নাম ‘আফগান ড্রিমার্স’। দলের অন্যতম সদস্য ১৭ বছর বয়সী নাহিদ রাহিমি। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের চেষ্টার মাধ্যমে অন্তত একটি জীবনও রক্ষা করতে পারি তবে সেটাও অনেক গুরুত্বপূ্র্ণ। এ দলটির সবার বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সে। তারা যে ভেন্টিলেটর তৈরি করছে তাতে ব্যবহার করা হয়েছে পুরনো টয়োটা করোলা গাড়ির মটর এবং হোন্ডা মোটরসাইকেলের চেইন ড্রাইভ।
নাহিদ আরো জানান, শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যায় থাকা রোগীদের সাময়িক স্বস্তি দেবে তাদের এই ভেন্টিলেটর। যতক্ষণ ভালো মানের একটি পাওয়া না যায়। দল নেতা সুমাইয়া ফারুকি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরা এ সময়ে দেশের হিরো। তাদের সহযোগিতায় কিছু করতে পেরে গর্ব অনুভব করছি।
আশা করা হচ্ছে, চলতি মে মাসের শেষের দিকে বাজারে আসবে এই ভেন্টিলেটর। বিশ্বে বাজারে যেখানে দেখা দিয়েছে ভেন্টিলেটর সঙ্কট, আর পাওয়া গেলেও দাম পড়ছে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার, সেখানে আফগান মেয়েদের তৈরি ভেন্টিলেটরের দাম পড়বে মাত্র ৬০০ ডলারেরও কম।
‘আফগান ড্রিমার্স’ দলের প্রতিষ্ঠাতা রয়া মাহবুব। ইতোমধ্যে তিনি নাম লিখিয়েছেন টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী ১০০ উদ্যোক্তার তালিকায়। তিনি বলেন, ‘কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালে প্রাথমিক পরীক্ষায় সফলতাও এসেছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এটি বাজারে আসবে।'
যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের প্রায় ৪ কোটি মানুষের জন্য আছে মাত্র ৪০০ ভেন্টিলেটর। প্রয়োজনের তুলনায় এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। অথচ দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ইতোমধ্যে ৭ হাজার ৬৫০ জন ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে ১৭৮ জনের। বর্তমান অবস্থা এবং ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবার কারণে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে, এমনটাই আশঙ্কা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই এতো কম দামে ভেন্টিলেটর তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে মেয়েরা।