Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপ্না ভৌমিক, দেশের আপদকালে এগিয়ে আসা এক অনন্যা

করোনা ভাইরাস, বর্তমানের পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত একটি নাম। বিশ্বের অন্তত ১৯০টি দেশ এই মুহূর্তে কাঁপছে এই ভাইরাসের সংক্রমণে। চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইতালি, ইরান কোনো দেশই বাদ যায়নি এর সংক্রমণ থেকে। প্রায় অচল পুরো বিশ্ব।

চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম ধরা পড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। এরপর প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। ইতোমধ্যে মৃত্যর মুখে ঢলে পড়েছেন কয়েকজন। দিন দিন অবস্থার অবনতি হলেও দেশে থাকা প্রায় ৯০ হাজার চিকিৎসকের জন্য নেই পর্যাপ্ত পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই)। প্রথমদিকেই তাই পিপিই স্বল্পতায় পড়েন চিকিৎসকরা। আর এটি ছাড়া সংক্রমিত রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া প্রাণঘাতী হতে পারে সবার জন্যই।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় আকারের সমস্যা হয়ে সামনে এসেছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জামের তীব্র সংকটের বিষয়টি। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে। এমন আপদকালীন মুহূর্তেই গোটা বাংলাদেশের মানুষ এবং তাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকের কথা চিন্তা করেই তাই পিপিই বানাচ্ছেন বিশ্ববিখ্যাত পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান ‘মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার’-এর বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার স্বপ্না ভৌমিক ও তার দল।

সুরক্ষা সরঞ্জামের সংকট কাটাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনসহ আরো চার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে এসব পিপিই, যা তৈরি করে দিচ্ছেন স্বপ্না ভৌমিক। পিপিই তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পে ইট ফরোয়ার্ড, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বুয়েট অ্যালামনাই, রোটারি ক্লাব এবং অনেস্ট। পিপিইর ডিজাইন করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্র্যান্ড মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার। এ ব্র্যান্ডের কাছে  পোশাক রপ্তানি করে এ রকম কয়েকটি কারখানায় সীমিত আকারে এখন উৎপাদন চলছে।
স্বপ্না ভৌমিক, দেশের আপদকালে এগিয়ে আসা এক অনন্যা

মাসখানেক আগেই চিরদিনের জন্য হারিয়েছেন নিজের মাকে স্বপ্না ভৌমিক। এরপরও বসে থাকেননি তিনি। করোনা আক্রান্তদের বাঁচাতে তিনি নিয়েছেন সাহসী উদ্যোগ। মাতৃবিয়োগের কষ্ট ভুলে শুরু করেছেন পিপিই তৈরির কাজ। তিনি জানান, দেশের হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে করোনা ভাইরাস নিয়ে কাজ করা ডাক্তার, নার্স এবং রোগীদের জন্য পিপিই তৈরি করছেন তারা। প্রায় চার লাখ পিপিই তৈরির মজুরি ব্যয়ের ব্যবস্থা করছেন। আর চীন থেকে বিশেষ ধরনের নন-ওভেন আমদানিতে সময় লাগবে। এ জন্য দেশেই এই কাপড় উৎপাদন করার বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা। এ কাজে তাকে সহায়তা করছে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন তৈরি পোশাক কারখানাগুলো।

তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম বা পিপিই বানানোর জন্য ২১ মার্চ সারাদিন বাজার ঘুরে কাপড় যোগাড় করেছেন, চূড়ান্ত করেছেন ডিজাইন। আর সন্ধ্যায় পেয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি। তারপর রাত থেকেই শুরু হয়েছে পিপিই তৈরির কাজ। মার্চের শেষের দিকেই প্রায় ৪ লাখ পিপিই তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা কতছেন তিনি। তবে এগুলো মোটেও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়। হাসপাতালগুলোতে এগুলো চাহিদা অনুযায়ী বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।

বায়ু ও পানিরোধী বিশেষ ধরনের এ পোশাকটি সাধারণ কাপড় দিয়ে তৈরি করা সম্ভব নয়। বিশেষায়িত নন-ওভেন কাপড় দিয়ে তৈরি হয় এই পিপিই। বাংলাদেশে এ ধরনের ওভেন কাপড় তৈরি হয় না। তবে জরুরি প্রয়োজনে কয়েকটি কারখানা এ কাপড় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে সহায়তা দিচ্ছে বিজিএমইএ। বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক জানান, পিপিই তৈরির বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে কিছু পিপিই নমুনা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এগুলো সাধারণ পোশাক সেলাই মেশিনে সেলাই করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের স্বপ্না ভৌমিক আমাদের জানিয়েছেন। এই পোশাক বানাতে বিশেষ ধরনের কাপড়ের প্রয়োজন হয়। কাপড় পেলে আমাদের জ্যাকেট প্রস্তুতকারক কারখানাগুলো পোশাক বানাতে প্রস্তুত রয়েছে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ