করোনা এড়াতে গুজবে কান না দিয়ে সতর্ক হোন
বিশ্ব মহামারীতে পরিণত হয়েছে করোনা ভাইরাস। মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিস্তৃত হচ্ছে বিশাল এলাকাজুড়ে। আর এই বিশালতার পরিমাণ বিশ্বের অন্তত ১৯০ দেশ, ১৬ হাজারের বেশি মৃত্যু আর প্রায় ৪ লাখ সংক্রমিত মানুষ। প্রতিদিনই যেন লাফিয়ে বাড়ছে এই সংখ্যা। ওষুধ, ভ্যাকসিন কিংবা টিকা আবিষ্কারের পথে কিংবা ইতোমধ্যে সফলতার দাবি করেছে কয়েকটি দেশ। তবে তা এখনো হয় কাগজে-কলমে কিংবা পরীক্ষাগারে।
বাস্তবতা আরো পাশবিক। এই ভাইরাসের প্রতিশেধক নেই এখনো, তাই সংক্রমণ এড়াতে নিজেকে ঘরের কোণে বন্দি করেছে সারা বিশ্বের মানুষ। প্রায় অচল প্রতিটি দেশই। এমন পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে নানা অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ভুল পন্থা তো কার্যকর নয়ই, বরং আপনার জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে যে কোনো সময়। তাই বিশ্বাসযোগ্য নয় এমন মাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ থেকে বিরত থাকুন। আসুন জেনে নেই করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রচলিত এমন কয়েকটি বিষয় যা আসলে কোনোভাবেই সত্য নয়,
১০ সেকেন্ড নিশ্বাস বন্ধ করে করোনা শনাক্ত করা যায় না
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে করোনা শনাক্তের উপায় হিসেবে বলা হচ্ছে, আপনি যদি ১০ সেকেন্ড নিশ্বাস বন্ধ করে রাখেন এবং এর ফলে যদি ব্যথা অনুভব না করেন, তাহলে বুঝবেন আপনার ফুসফুসে কোনো ফাইব্রোসিস নেই। অর্থাৎ ফুসফুসের টিস্যু বা কলায় কোনো ক্ষতি হয়নি, বা স্বাভাবিকের তুলনায় মোটা হয়ে যায়নি। এর অর্থ হলো ফুসফুসে সংক্রমণ নেই। তবে এমন দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন। কারণ ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হয়েছে কি না তা নিশ্বাস বন্ধ করে পরীক্ষা করা যায় না। আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ফাইব্রোসিস করোনাভাইরাস ভাইরাস সংক্রমণের কোনো উপসর্গ নয়।
ঘরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির প্রণালি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বার বার সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে বলা হচ্ছে। প্রথমদিকে তাই বাজারে দেখা দেয় স্যানিটাইজারের স্বল্পতা। একটা সময় পরে বাজারে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার পাওয়া গেলেও এই ফাঁকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ঘরে বসেই স্যানিটাইজার তৈরির একাধিক প্রণালি। চেষ্টা করুন এই সব প্রণালী এড়িয়ে চলার। কারণ আসবাবপত্র বা যেসব জিনিসে আপনি হাত দিচ্ছেন সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য মোছার যেসব বস্তু পাওয়া যায় সেগুলো আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মদ পান করোনা প্রতিরোধ করে
ইন্টারনেট জগতে প্রায়ই দেখা যায়, মদ পান করলে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এমনকি ভদকাকে বলা হচ্ছে জীবাণুনাশক। কিন্তু ভদকাতে জীবাণু মারতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অ্যালকোহল নেই। অন্যদিকে উচ্চ মাত্রার অ্যালকোহল পান স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় অনেকাংশে। বিশেষ করে ইরানে এই কুসংস্কার প্রকট আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে অ্যালকোহলিক স্পিরিট, ওয়াইন এবং বিয়ার পান নিষিদ্ধ হলেও অনেকে নিয়মিত মদপান করেন। আর ফলাফল, বিষাক্ত মদ পানে প্রায় ১০০ ইরানির মৃত্যু।
করোনাভাইরাসের আয়ু এক মাস
অনেকেই বলছেন, যে কোনো সারফেসের ওপর করোনা ভাইরাস এক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এবং এরপর মরে যায়। প্রকৃতপক্ষে এই তথ্য সঠিক নয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কঠিন কোনো জায়গার ওপর যেমন ধাতু, কাচ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি কোনো সারফেসের ওপর করোনাভাইরাসের জীবাণু বেঁচে থাকে প্রায় দুই ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ নয় দিন।
গোমূত্র পানে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়
বেশ কিছু দিন ধরে ভারতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ গোমূত্রকে করোনা ভাইরাসের প্রতিশেধক হিসেবে দাবি করছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন গোমূত্রের এমন কোনো গুণ নেই। গোমূত্র করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ ঠেকাতে সক্ষম, এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই।
ঘন ঘন পানি পান করা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে অন্তত ১৫ মিনিট পর পর পানি খেতে বলা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, করোনা ভাইরাস প্রথমে গলায় প্রবেশ করে। পানি খেলে তা পাকস্থলিতে চলে যাবে এবং পাকস্থলির এসিডে মরে যাবে। নিঃসন্দেহে পানি শরীরের জন্য ভালো। তবে এটি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম নয়। কেননা, এই ভাইরাস মুখ ছাড়াও নাক ও চোখ দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। পাশাপাশি সংখ্যায় অনেক প্রবেশ করাটাই স্বাভাবিক। তাই পানি পানের মাধ্যমে এর সংক্রমণ ঠেকানো অস্মভব।
রসুন খেলে কাজ হবে না
রসুন খেলে করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যাবে এমন পরামর্শ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে রসুন খেলে করোনা ভাইরাস বা ‘কোভিড ১৯’ থেকে বাঁচা যায় এটি পরীক্ষায় প্রমাণিত না।
থানকুনি পাতায় করোনা প্রতিরোধ হয় না
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়ে, তিনটি থানকুনি পাতা খেলে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শর্ত হলো ফজরের নামাজের ঠিক আগ মুহূর্তে এই পাতা খেতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, থানকুনি পাতা বাংলাদেশের মানুষ সবজি হিসেবে খেয়ে থাকে। সবজি হিসেবে এর পুষ্টিগুণ অনেক হলেও এতে ‘কোভিড ১৯’ প্রতিরোধ করতে পারে এমন কোনো গবেষণাসিদ্ধ প্রমাণ নেই।