নারীর এগিয়ে যাওয়া সভ্যতার স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে
শরৎচন্দ্রের ‘নারীর মূল্য’ লেখাটি নতুন করে পড়তে গিয়ে যেন দম বন্ধ হয়ে এল। তিনি লিখেছেন, “শঙ্করাচার্য স্পষ্ট করিয়া বলিয়া গিয়াছেন, নরকের দ্বার নারী। বাইবেল বলিয়াছেন- সমস্ত অহিতের মূল।” শরৎচন্দ্র স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন সেন্ট অ্যামব্রোসের একটি উক্তিকে- মনে রাখবে, ‘ঈশ্বর নারীকে তৈরি করার জন্য আদমের আত্মা থেকে কোনো অংশ নেননি, নিয়েছেন আদমের শরীরের একটুকরো পাঁজরের হাড়!’ এরপর শরৎচন্দ্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। বলেছেন, “পুরুষেরা যাহা ইচ্ছা করে, যাহা ধর্ম বলিয়া প্রচার করে, নারী তাহাই বিশ্বাস করে এবং পুরুষের ইচ্ছাকে নিজেদের ইচ্ছা বলিয়া ভুল করে এবং ভুল করিয়া সুখী হয়।”
কী ভয়ঙ্কর! সভ্যতা যত এগিয়েছে ততই শৃঙ্খলিত করা হয়েছে নারীকে। গ্রিস সভ্যতার ইতিহাসে জানা যায়, সেই সময় নারীরা বিভিন্ন চিত্রকলা, স্থাপত্যবিদ্যা ও ভাস্কর্যে পুরুষদের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করত। পরবর্তী সভ্যতার ইতিহাসে ক্লিওপেট্রা, বা মিসরীয় রানি নেফারতিতি জাতীয় কিছু কিছু নারীর প্রভাব-প্রতিপত্তি, ক্ষমতার কথা বলা হয় বটে, তবে সেটা পুরুষের প্রচন্ড- দমন-দাপটের কাছে খুব সামান্যই বলা যায়। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পৃথিবীর বেশিরভাগ মহামানবেরা খুব পরিকল্পনা করে গড়ে তুলেছেন এই পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতা। অথচ প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, পৃথিবীতে পারিবারিক বন্ধন, বংশবৃদ্ধির ক্রমধারা অব্যাহত রাখা, মানবীয় গুণাবলির সম্মিলন ঘটানো, সর্বোপরি জীবনকে সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গরূপে গড়ে তোলার ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে।
এত রাশভারি কথার ফাঁকে লঘুচালে নারী-পুরুষ নিয়ে কিছু মজার কথা বলা যাক।
প্রশ্ন করা হয়েছিল : ঈশ্বর নারীর আগে পুরুষ সৃষ্টি করলেন কেন?
এর উত্তরে চৌকস নারী বলেছিল, কারণ, প্রতিটি মাস্টার-পিস তৈরির আগে একটি খসড়া করার প্রয়োজন হয়।
নারীবিদ্বেষী একযুবক ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করল, ‘হে ঈশ্বর, তুমি নারীকে এত সুন্দরী বানিয়েছ কেন?’
ঈশ্বর বললেন, ‘যাতে তুমি তাকে ভালোবাস।’
যুবক জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে ঈশ্বর, তুমি নারীকে এত বোকা বানিয়েছ কেন?’
ঈশ্বর বললেন, ‘যাতে সে তোমাকে ভালোবাসে।’
রাজনীতির ক্ষেত্রে বলা হয়, রাজনীতিতে যদি কোনো কিছুর প্রতিশ্রুতি চান, তাহলে একজন পুরুষকে বলুন, আর যদি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান তাহলে একজন নারীকে বলুন।
নারীর ক্ষমতায়ন ও বিকাশ ঘটাতে চাইলে সবার আগে দরকার নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই মুক্তির পথে বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, এটা প্রতিহত করার সাধ্য নেই কোনো অপশক্তির। কারণ, এর ওপর ওতপ্রোতভাবে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। আমাদের জিডিপিতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান শতকরা ৩৪ ভাগের বেশি। সেই তৈরি পোশাকশিল্পে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ নারীকর্মী কাজ করছে। সুতরাং আমাদের সমাজে নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী না মনে করে একে অন্যের পরিপূরক মনে করা উচিত।
নারী এগিয়ে যাক, সভ্যতার স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে। মঙ্গল হোক সবার।