আনাজের পুষ্টিগুণ মূলত কোথায়
বাজার থেকে শাকসবজি নিয়ে এসে তা যখন রান্না করি তখন আমরা সাধারণত সবজির খোসাটা ফেলে দিই। একই ভাবে ফল খাওয়ার সময় ফলের খোসা ফেলে দিয়ে তা খাই। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বই এবং লেখাতেও এই বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনাও হয়।
খোসা ফেলে খাওয়ার কারণ হলো, অনেক সবজি খোসা সমেত খাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও ফলনের সময় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কোন খাবারে কী উপকারিতা আছে সেসব বিষয় আমরা সবাই এখন বেশ সচেতন। তবে রান্না করার সময় আমরা যে খোসাটা ফেলে দিচ্ছি তাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ থাকে, যেটা নিয়ে আমরা হয়ত তেমন একটা চিন্তা করি না। বরং কেউ যদি সবজির খোসাটা রেখে দিয়ে সেটা দিয়ে কিছু একটা খাবার পদ বানান তাহলে তাঁকে আমরা অনেক সময় ঠাট্টা করে অনেক কিছু বলি।
তবে একটা কথা বলি যে-কোনো সবজির এবং ফলের খোসাতে ছিদ্র থাকে তাই যদি ফলনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তাহলে তা খোসার ভেতর দিয়ে খাবার জিনিসটির মধ্যেও প্রবেশ করে। তাই কোনোভাবেই সম্পূর্ণ নিরাপদ হওয়া সম্ভব নয়।
উল্টোদিকে আবার এ কথাও সত্যি যে, বিশেষ কয়েকটা সবজির খোসা বাদ না দিয়ে যদি তা রান্না করা হয় তাহলে তার থেকেও আমাদের শরীর প্রচুর পুষ্টি পেতে পারে।
অনেক আনাজের খোসাতেই খোসাতে ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, শরীরের জন্য দরকারি খনিজ, প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার থাকে। তাহলে এবার ভেবে দেখুন, খোসার সঙ্গে কতটা মাত্রায় পুষ্টি বেরিয়ে যায়। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার বলছে, মাঝারি মাপের একটি খোসাসমেত আপেলে পাঁচ গ্রাম ফাইবার, ১৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৩৯ গ্রাম পটাসিয়াম এবং ১০ গ্রাম গ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
একটি সবজিতে মোট যতটা ফাইবার থাকে তার প্রায় ৩১ শতাংশ ফাইবার সেই সবজির খোসাতেই থাকে। ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে আমাদের পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে, যার ফলে বারবার খিদেভাব হয় না।
একটি কাঁচা আলু খোসাসমেত সিদ্ধ করা হলে তার পুষ্টিগুণ অনেকবেশি বেড়ে যায়। একটি খোসাসমেত সিদ্ধ আলুতে একটি খোসা ছাড়ানো সিদ্ধ আলুর চেয়ে ১৭৫ শতাংশ বেশি ভিটামিন সি এবং ১১৫ শতাংশ বেশি পটাসিয়াম থাকে।
তবে এমন অনেক সবজি ও ফল আছে যেগুলো খোসাসমেত খাওয়া সম্ভব নয়; যেমন আম, তরমুজ, যে-কোনো রকম টকফল যেমন কমলালেবু, মুসাম্বি, আনারস প্রভৃতি। এমন অনেক সবজি আছে যার খোসা আমরা রান্না করে খেতে পারি। বহু সবজি আছে সেগুলো আমরা খোসা সমেত খেয়ে থাকি যেমন বেগুন, ক্ষেত্রবিশেষে আলু, টমেটো প্রভৃতি।
তাই আমাদের দেখতে হবে যেসব খোসা আমরা ফেলে দিচ্ছি তা কীভাবে যথোপযোগী ব্যবহার করতে পারি। তাই যখন মনে করবেন যে, কোনো সবজির বা ফলের খোসা খাবেন সেই ফল বা সবজিটিকে বাজার থেকে বাড়ি এনে বেশ কিছুক্ষণ ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রাখুন এবং তারপর তা খুব ভালো করে ধুয়ে নিন ও সুস্বাদুভাবে রান্না করুন।