নিজের জীবনকে সঁপে দেওয়াই কি একটা পরম্পরা!
আমাদের মায়েরা মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই শিখিয়ে আসে যে, তাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ভালো বউ হওয়া, ভালো মেয়ে হওয়া। ভালো মেয়ে আর ভালো বউ-এর সংজ্ঞা আশপাশে যেকোনো মানুষ কে বললেই বলে দিতে পারবে। তবে বউদের ক্ষেত্রে, সংসার যদি গোছানো না হয় তাহলে এই সব চাকরিবাকরি ক্যারিয়ার কোনো কিছুই কোনো মানে রাখে না। কারণ, মেয়ে আর ছেলেদের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাস আলাদা করা। মেয়েদের কাজ বাসনমাজা আর ছেলেদের কাজ টাই পরা। অনেকে অবশ্য টাইটাও পরতে পারে না। কিন্তু সেটা তেমন কোনো মরণমুখী ঝামেলা জীবনে বয়ে আনে না।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/Untitled-1-22-1024x576.jpg)
লোকে বলে, ঘরে বউ নাকি আনা হয় একটা অগোছালো ছেলেকে গুছিয়ে রাখার জন্য। বউ সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে তাঁর স্বামীকে অফিসে পাঠাবে তারপর সারা দিন স্বামীর জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু কাউকে কখনো এটা কেন শেখানো হয় না যে, রান্না একটা বেসিক লাইফ স্কিল? নিজের কাজ নিজে করা একটা বেসিক লাইফস্কিল। এটা ছাড়া যেকোনো মানুষ যে পরগাছা হয়ে জীবনযাপন যে করে, সেটা নিয়ে কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই! মাঝে-মধ্যে মনে হলে হাসি পায় যে, মানুষ কিভাবে পরগাছা হওয়াকে গর্ব বলে মনে করে? মূলত, এটা হচ্ছে জেন্ডার রোলের নামে সেটাকে অপব্যবহার করা। কিন্তু এই অপব্যবহার আবার তারা নিজের বোনের ক্ষেত্রে কখনো সহ্য করতে চায় না। তারা নিজের বোন বা নিজের পরিবারের সুখ ঠিকই চায়। কিন্তু মায়েরা আবার চায়, মায়েরা মেয়েদেরকে এমনভাবে বড় করবে যে, মেয়েরা যেন নিজেকেই মনে করে তারা আরেকজনের অধীনস্থ হয়ে জীবনযাপন করবে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/Untitled-1-21-1024x576.jpg)
মেয়েদের নিজের ঘর বলে কিছু নেই, এটা নিয়ে হা-হুতাশ পর্যন্তই। কিন্তু যখনই কোনো মেয়ে নিজের পরিচয় বানাতে চায়, তখন শুরুতেই তার চিন্তায় পানি ঢেলে দেওয়া হয় এই বলে যে, ও মেয়ে ও পারবে না। মেয়েরা কখনো কিছুই করতে পারে না। তারা শুধু ঘরের কাজ করতে পারে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/Untitled-1-6-1024x576.jpg)
যেমন, একজন মা আর মেয়ের কাল্পনিক কথোপকথন:
মা: আমি সারা জীবন স্যাক্রিফাইস করে চলেছি। তর বাবা কখনো কোনো ঘরের কাজে আমাকে সাহায্য করেনি। এক থাল ভাতও কখনো নিজ থেকে বেড়ে খায়নি। মেয়েদের জীবন এমনই মা! এই জগতে ছেলে আর মেয়ের কাজ আলাদা করে দেওয়া। আমি সারা সজীবন তা-ই করেছি। তোকেও তা-ই করতে হবে।
মেয়ে: জি, মা। আপনি আমার গুরুজন। আপনি যা বলবেন আমি তা-ই করব।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/Untitled-1-24-1024x576.jpg)
যদি মেয়েটি তার মায়ের মতো জীবন সংসারের উদ্দেশ্যে সমর্পণ করতে রাজি না হয়, তাহলে এই সমাজের মানুষ তো দূরে থাক, নিজের পরিবারই তাকে অপদার্থ বলে মনে করবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাগলও বলতে পারে। আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে একটা বিষয় নিয়ে অভ্যস্ত করলে সেটা আমাদের আর মস্তিষ্কের খাটনি দিয়ে করা লাগে না। তখন সেটা কোনো চিন্তা ছাড়াই করতে থাকি।
এই যে স্যাক্রিফাইস করার বিষয়টা, এটাও এমনই। এবং যখন কেউ এই প্রথা ভাংতে চায়, এই অন্যায় মেনে নিতে চায় না, তখন তার নানা রকমের বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অনেক পুরুষ আছে, যারা পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর দাস না হয়ে নিজের মতো নিজের বেসিক লাইফস্কিলগুলো শিখে নিয়েছে। তাদের নিজেকে খুব আলাদা করে না দেখলেও নিজেকে নিয়ে স্বস্তিতে থাকা উচিত এবং গর্ব করা উচিত। কারণ, যে নিজের কাজের জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল, সে নিজেকে নিয়ে অহেতুক বিপদে তো পড়বে না কখনো। একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ সদা সম্মানিত। পরগাছা আজীবনই একটা ঝামেলা ছিল, আছে, থাকবে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/04/Untitled-1-20-1024x576.jpg)
পরিশেষে, আরেকটি কথোপকথন দিয়ে শেষ করছি। শাশুড়ি আর ছেলের কথপোকথন:
শ্বাশুড়ি: আমার বউ মা কি তোর খেয়াল রাখে? তোর খাওয়ার কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো? বাসা বাড়ি পরিষ্কার রাখে নাকি আজকে আমি এসেছি বলে পরিষ্কার করেছিস?
ছেলে: মা আমরা তো দুজনেই চাকরি করি। ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি, সব সময় তো রান্না করতে পারে না ও। যখন পারে না, তখন খাবার অর্ডার করে আনিয়ে খাই। আর সপ্তাহ শেষে আমরা যখন বাসায় থাকি, তখন দুজন মিলে আমাদের সংসারটাকে সাজাই। রান্না করি এক সাথে। ও যখন অসুস্থ থাকে, বাসার কাজ আমিই করি। আমি যখন অসুস্থ থাকি, তখন ও আমাকে দেখে।
মা: কী বলিস? বউ রান্না করে না! তাহলে বিয়ে করেছিস কেন? অফিস করে কি ঘরের কাজ করে না মেয়েরা!
ছেলে: মা আমি তো বিয়ে করে জীবন-সঙ্গী নিয়ে এসেছি। ঘরের চাকর তো নিয়ে আসিনি। তা-ছাড়া, এই সংসার তো আমাদের দুজনের। আমরা দুইজন তো সারা জীবন এক সাথে পার করব। নিজেরাই যদি নিজেদের সম্মান না করি, সন্তানরা তাহলে আমাদের কাছ থেকে কী শিক্ষা পাবে!
অনন্যা/ এমটি