দীপা কর্মকার: হার না-মানার গল্প
যারা বারবার নারীর শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের মুখের ওপর ঝামা ঘষার জন্য দীপা কর্মকারই যথেষ্ট। নারী যে শুধু ঘর-সংসার আর চুল বেঁধেই সময় পার করছে না, তাও বোঝা যায় তার মতো অদম্য নারীদের দেখলেই।
বাঙালি এই নারী ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার অভয়নগরে ৯ আগস্ট ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতীয় জিমন্যাস্ট। মাত্র ৬ বছর বয়স থেকেই যার হার না-মানা জীবনের গল্পের সূচনা হয়। ফ্ল্যাট-ফিটের কারণে প্রশিক্ষণে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় এই সোনার মেয়েকে। উচ্চতা অনেক কম হওয়ায় সমস্যা হলেও তিনি এক মুহূর্তের জন্য থেমে থাকেননি। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে দ্বিগুণ শক্তিতে পথ চলতে শুরু করেছেন বারবার। প্রচণ্ড মনোবল তাকে শক্তি জুগিয়েছে।
১৪ বছর বয়সে জলপাইগুড়ি আয়োজিত ‘জুনিয়ার ন্যাশনাল জিমন্যাস্ট্রিক্স’ প্রতিযোগিতায় মেডেল জেতেন দীপা। ২০০৭ সালের মধ্যে রাজ্য, দেশে ও আন্তর্জাতিক স্তরে ৭৭টি পদক জিতেন তিনি। ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় জিমন্যাস্ট দলের সদস্য ছিলেন দীপা কর্মকার৷ জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মনোবলই তার অন্যতম ভরসা ছিল। তাই তো কিছুটা সময় নিয়ে নিজের যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন পেলেও থেমে থাকেননি এই মহীয়সী।

এমনকি সাফল্যের সিঁড়িতে ওঠার সময়েই ডান পায়ে অস্ত্রোপাচার হয়। তবু যারা নিজ লক্ষ্যে ফোকাস করে তাদের জীবনের গতি সেই পথ ধরেই ছুটতে থাকে। কোচ বিশ্বশ্বরের ভরসা ও নিজ মনোবলে একসময় পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে বিশ্বমঞ্চে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটে দীপা কর্মকারের। তুরস্কে ‘আর্স্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপ’-এ সোনা জেতেন।
মানুষের জীবনে প্রথম দরকার আত্মবিশ্বাস। মনোবলের অধিকারী হওয়া। নিজ শক্তির ওপর বিশ্বাস থাকলে বিজয় নিশান বাজবেই। শুধু সময়ের অপেক্ষা। দীপা কর্মকার জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতার সবচেয়ে কঠিন বিভাগ প্রদুনোভা ভল্ট সম্পন্নকারী পাঁচ নারীর একজন। যাতে তার স্কোর ছিল সর্বোচ্চ। এছাড়া তিনি এশিয়ান জিমন্যাস্টিক চ্যাম্পিয়ান শিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন। আর ২০১৫ সালে ওয়ার্ড আর্টিস্টিক জিমন্যাসস্টিকস চ্যাম্পিয়ানশিপে পঞ্চম স্থান করেন। উভয়ই ছিল দেশটির জন্য প্রথম অর্জন। এরপর একের পর এক সাফল্য দীপা কর্মকারকে নারীদের রোল মডেলে পরিণত করেছে।
নারীর শক্তি দুর্বার। আমাদের নারীদের অদম্য শক্তিও দীপা কর্মকারদের থেকে ভিন্ন নয়। চেষ্টা, অধ্যবসায়, মেনা মনন ও আত্মবিশ্বাস নারীর পথের সব কাঁটা দূর করতে সক্ষম। তাই নারীদের অনুপ্রেরণা দীপা কর্মকার। আজ এই সোনার মেয়ে জন্মদিন। শুভ হোক এই অদম্য নারীর পথ চলা।
অনন্যা/এআই